ক্যানসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে শসা! রক্তচাপ কমায়, কিডনিও রাখে সুস্থ

ফিচার ও স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩০

সালাদে পদ হিসেবে শসা আমাদের দেশে খুবই পরিচিত একটি ফল বা সবজি। সারা বছরই প্রচুর শসা পাওয়া যায় বাজারে। এর রয়েছে নানা ভেষজ গুণ। ত্বকের যত্নে, হৃদপিণ্ড-পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে এবং অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে শসার বিকল্প নেই।

শসাতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে (৯৫ ভাগ) ফলে এটি শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে এবং ভেতরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে দেহ শীতল রাখতে সহায়তা করে। শসায় ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম এবং এতে কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই।

এ ছাড়াও শসার রয়েছে আরও বহুবিধ উপকারিতা। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

ওজন ঝরাতে সাহায্য করে

ওজন ঝরানোর লক্ষ্য নিয়ে যারা শরীরচর্চা করতে শুরু করেছেন, তাদের খাবারের তালিকায় শসা থাকবেই। শসাতে ক্যালোরির পরিমাণ কম। তাই শসা খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় নেই। প্রায়ই যাঁদের মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করে, তাঁরাও শসা ভেজানো জল খেতে পারেন।

দেহের পানিশূন্যতা দূর করে

ধরুন আপনি এমন কোথাও আছেন, যেখানে হাতের কাছে পানি নেই, কিন্তু শসা আছে। বড়সড় একটা শসা চিবিয়ে খেয়ে নিন। পিপাসা মিটে যাবে। আপনি হয়ে উঠবেন চনমনে।কারণ, শসার ৯০ শতাংশই পানি।

দেহের ভেতর-বাইরের তাপ শোষক

কখনো কখনো আপনি শরীরের ভেতর-বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করেন। দেহে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় একটি শসা খেয়ে নিন।এ ছাড়া সূর্যের তাপে ত্বকে জ্বালা অনুভব করলে শসা কেটে ত্বকে ঘষে নিন। নিশ্চিত ফল পাবেন।

টিস্যু তৈরি এবং রক্ত ​​প্রবাহ

শসা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা আপনার শরীরের জন্য খুব ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতাকে উপকৃত করে। শসায় উপস্থিত উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত ​​​​প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, ফ্রি র‌্যাডিকেলের সঙ্গে মোকাবিলা এবং শরীরে টিস্যু বৃদ্ধিতে সহায়তা কররে। বুঝতেই পারছেন এটি কতটা উপকারী! এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে

নিয়মিত শসা খেলে তা আপনার মলত্যাগের রুটিন সহজ করে দেবে। এটি শরীরের জন্য খারাপ জীবাণু এবং বিষাক্ত পদার্থগুলোকে বের করে দেওয়া সহজ করে। ফলে হজম সহজ ও স্বাস্থ্যকর হয়। এটি শরীরের পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্যও। এতে থাকা প্রচুর ফাইবার আপনার মলত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে পারে, পাশাপাশি অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ারও বৃদ্ধি করতে পারে। এই সবজির ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মাত্রা পানি ধরে রাখে। সেইসঙ্গে অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যাও দূর করে।

চোখের জ্যোতি বাড়ায়

সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে অনেকে শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে রাখেন।এতে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন অপসারিত হয়, তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে।চোখের প্রদাহপ্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় ছানি পড়া ঠেকাতেও এটি কাজ করে।

অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট

দৈনন্দিন জীবনে বাড়তে থাকা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেহের কোষগুলি নষ্ট করে। এই স্ট্রেস বা উদ্বেগ থেকে ডায়াবিটিস, ক্যানসার, অ্যালঝাইমার্স-সহ নানা দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এর থেকে মুক্তি দিতে পারে শসা। কারণ, শসাতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। এ ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগনেশিয়ামের মতো যৌগ। যা এই স্ট্রেসজনিত ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

ক্যানসার প্রতিরোধক

শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল—এ তিনটি আয়ুর্বেদিক উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া শসার মধ্যে রয়েছে ‘কিউকারবিটাসিন’ নামক একটি যৌগ। যা শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করে তোলে। যা ক্যানসার হওয়া বা তা ছড়িয়ে পড়া রুখে দিতে সক্ষম। ক্যানসার রিসার্চ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি তথ্যে বলা হয়েছে, শসার মধ্যে থাকা একটি যৌগ প্রস্টেট ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

গেঁটেবাত থেকে মুক্তি

শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে। গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নেমে আসে। এতে গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি

ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের মাথা ধরে। শরীর ম্যাজম্যাজ করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার আছে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক স্লাইস শসা খেয়ে নিলে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এ সমস্যা থাকবে না।

কিডনি সুস্থ রাখে

শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখে শসা। এতে কিডনি থাকে সুস্থ ও সতেজ।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভলো রাখে

হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি-র পাশপাশি ভিটামিন কে-ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। হাড়ের জোর এবং টিস্যু মজবুত করতে ভিটামিন কে-র ভূমিকা রয়েছে। শসা হল ভিটামিন কে-র প্রাকৃতিক উৎস। বয়সকালে হাড় ভেঙে যাওয়া বা হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে রোজ খাবারের তালিকায় রাখতে হবে শসা।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতি দিন নিয়ম করে ওষুধ খেতে হয়? পাশাপাশি, রোজ খাবারে রাখতে পারেন শসাও। মূলত শরীরে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম, এই দু’টি যৌগের ভারসাম্যের উপর রক্তচাপের মাত্রা নির্ভর করে। পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামে ভরপুর শসা, রক্তে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

ত্বকবান্ধব খনিজের সরবরাহকারী

শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন আছে, যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ত্বকের পরিচর্যায় গোসলের সময় শসা ব্যবহার করা হয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে শসা

গবেষণায় দেখা গেছে, শসা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের প্রদত্ত খাদ্য তালিকায় শসা যোগ করলে বেশি কাজ করে। লাইভ সায়েন্স'র মতে, লো-কার্ব মেকআপের কারণে সুগার জাতীয় খাবারের একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে শসা। এতে ভিটামিন সি, কে এবং কিছু পটাসিয়াম রয়েছে যা দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে আনে। ফলে নিয়ন্ত্রণে আসে ডায়াবেটিস।

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :