মঈন খানের ‘পিএস’ পরিচয়ে পলাশে ‘মিল্টন সিন্ডিকেট’!

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ড. মঈন খানের ‘পিএস’ পরিচয়ে বাহাউদ্দিন ভুঁইয়া মিল্টন ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্টন গত ৯ মাসে পলাশ-ঘোড়াশালের সিএনজি ও বাসস্ট্যান্ড, মিল-কারখানায় চাঁদাবাজির একচ্ছত্র দখল নিয়েছেন বলে দাবি স্থানীয় বিএনপির নেতাদের।
ঘোড়াশাল সার কারখানাসহ ১২৮টি সরকারি-বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে মিল্টনের বিরুদ্ধে।
নিজের দুটি ফার্মের মাধ্যমে ঘোড়াশালের কারখানার সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন মিল্টন। প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক মাল পরিবহনের জন্য গাড়িপ্রতি ৭০০ টাকা করে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা আদায় করছে তার সিন্ডিকেট। এ ছাড়া পরিত্যক্ত মালামাল লুটপাটেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে দুদকে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
দুদকে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘোড়াশাল সার কারখানার পরিত্যক্ত মিলের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে মিল্টন সিন্ডিকেট। সেখানে হাজার কোটি টাকা মূল্যের মালামাল পড়ে আছে। এর মধ্যে লোহা, তামা, কপার, কয়েল, ইলেকট্রিক তার অন্যতম। ওই মিল থেকে মাটি, কার্টন বের করতে যে টেন্ডার হয়, ক্ষমতার প্রভাবে সেটিও ভাগিয়ে নেন মিল্টন।
পরিত্যক্ত কারখানার নিরাপত্তা জোরদার ও চুরি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও ২০০ আনসার মোতায়েন করে। কিন্তু টেন্ডারের মাল পরিবহনের আড়ালে ট্রাকে করে লোহা ও অন্যান্য মালামাল বাইরে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে মিল্টন সিন্ডিকেট।
এই সিন্ডিকেটের একাধিক কল রেকর্ড রয়েছে, যা তাদের চাঁদাবাজির ঘটনা প্রমাণে যথেষ্ট বলে দাবি স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের। একটি কল রেকর্ডে সিন্ডিকেটের এক সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘পার্টির কাছে মাল বিক্রি করো ১৪-১৫ লাখ টাকা, আমাকে দিচ্ছ ২ লাখ টাকা। কত দিন মাল বন্ধ থাকে, কোন দিন কত ট্রাক মাল গেছে সব হিসাব আমার কাছে আছে।’
গত ৯ মার্চ ঘোড়াশাল সার কারখানায় সারের বস্তা সেলাইয়ের (ব্যাগিং) একটি টেন্ডার হয়। নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে তিনটি ফার্মের শিডিউল জমা দেওয়ার কথা থাকলেও মিল্টনের দুটি ফার্মই শিডিউল জমা দেয়। অন্য কাউকে টেন্ডার ড্রপ করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ বিএনপির নেতাকর্মীদের।
সেনাবাহিনীর (অব.) সার্জেন্ট মোজাম্মেল হক, যিনি বর্তমানে কুয়েত সেনাবাহিনীতে কর্মরত, তার পরিবারকে ফোনে চাঁদা চেয়ে হুমকির কল রেকর্ডও হাতে এসেছে। চাঁদা না দিলে ওই সেনা কর্মকর্তার ভাবির সন্তানকে হত্যার হুমকি শোনা যায় এই কল রেকর্ডে।
উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডাঙ্গা ইউনিয়নে মিল্টন সিন্ডিকেটের হয়ে বিভিন্ন কারখানাসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন যুবদল নেতা মনির। একই সিন্ডিকেটের হয়ে ঘোড়াশালে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করছেন মহিউদ্দিন চিশতীয়া। আর পাঁচদোনা এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন পিএস-২ ‘চোরা শাকিল’। চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন কারখানার কাজ ভাগানোর দায়িত্বে রয়েছে তার পিএস-১ মাইনুদ্দিন।
পূজা কমিটির সভাপতির কাছ থেকেও ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারোয়ার তুষার ‘পিএস পলিটিক্স’-এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
মিল্টন সিন্ডিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সেদিন বক্তব্যে বলেছি, নরসিংদীতে কোনো পিএস পলিটিক্স চলবে না। কারোর নামও উল্লেখ করিনি। এতেই তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গেছেন।’
আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার বলেন, ‘সম্প্রতি আমি বিভিন্ন জায়গায় বলেছি- চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাদক এগুলোর যে অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে পলাশ, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বললেই ওনারা ক্ষিপ্ত হন। এখন নামে-বেনামে বিভিন্ন আইডি থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাকে নাকি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’
পলাশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ড. মঈন খানের পিএস মিল্টন না, তিনি স্যারের সাথে বিভিন্ন কাজ করেন। স্যারের খান ফাউন্ডেশনে কাজ করেন। স্যার (মঈন খান) এখন আমেরিকায়। তাছাড়া আমরা এসব অভিযোগের বিষয়ে এখনো ওয়াকিবহাল না। তবে অভিযোগ থাকলে নিশ্চয়ই স্যার দেখবেন।’
মিল্টনের বিষয়ে জানতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের সাথে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
চাঁদাবাজি ও দুদকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বাহাউদ্দিন ভুঁইয়া মিল্টনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালে তারও উত্তর দেননি তিনি।
(ঢাকাটাইমস/১মে/মোআ)

মন্তব্য করুন