ভারতীয় আগ্রাসনের রাস্তা উন্মুক্ত করলে পরিণতি ভালো হবে না: হাসনাতের হুঁশিয়ারি

সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সাবেক মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জানি দেওয়া ক্ষেত্রে কোনো চাপের কাছে নথি স্বীকার কি না প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ভারতীয় আগ্রাসনের রাস্তা উন্মুক্ত করলে পরিণতি ভালো হবে না।
বৃহস্পতিবার (১ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ হুঁশিয়ারি দেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
ফেসবুক পোস্টে হাসনাত লেখেন, ‘চিন্ময়ের জামিনকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করি না। চিন্ময়ের ঘটনার শুরু থেকেই ভারতীয় আধিপত্যবাদ এ দেশের উপর অন্যায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রশ্ন তোলেন, ‘চিন্ময়ের জামিনও কি সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেই দেওয়া হলো?’
এরপর এনসিপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ার করেন। বলেন, ‘ইন্টেরিম সাবধান! আলিফের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের রাস্তা উন্মুক্ত করলে পরিণতি ভালো হবে না।’
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সাবেক মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বুধবার (৩০ এপ্রিল) জামিন দেন বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে রাষ্ট্রপক্ষের তাৎক্ষণিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক ওই জামিন আদেশ স্থগিত করেন। কিছুক্ষণ পরে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রোববার (৪ মে) রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
এর আগে ওই মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ গত ২ জানুয়ারি চিন্ময়ের জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে হাইকোর্টে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চেয়ে গত ১২ জানুয়ারি আবেদনটি করেছিলেন চিন্ময় দাস। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল দেন হাইকোর্ট। আবেদনকারীকে (চিন্ময়) কেন জামিন দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টে চিন্ময় দাসের পক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না, প্রবীর হালদার ও অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ভুঞা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান।
গত বছর চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বড় সমাবেশ করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। সেদিন সমাবেশে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময়সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুর হওয়া নিয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীরা হাঙ্গামা করেন। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিলে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আদালত গত ৩ ডিসেম্বর শুনানির দিন রাখেন। সেদিন চিন্ময়ের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আদালত শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি পরবর্তী দিন রাখেন। সেদিন তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।
(ঢাকাটাইমস/১মে/মোআ)

মন্তব্য করুন