নির্বাচিত সরকার ছাড়া কেউই সংস্কার করতে পারবে না: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘আমরা চাই সরকার প্রধান ও তার নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসুক। জনগণ যদি তাদের গ্রহণ করে আমরা গ্রহণ করবো। আবারো বলছি, এই মুহূর্তে অবাস্তব সংস্কার চাই না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া কেউই সংস্কার করতে পারবে না। আমাদের কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন চলছে। আমরা আর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করবো না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ যদি আমাদের গ্রহণ না করে আমরা মাথা পেতে নেব, কিন্তু আপনারা আপনাদের সুবিধার জন্য আমাদের রাজনীতি বাঁধাগ্রস্ত করবেন তা মেনে নেব না। কোন ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্ত আমরা দেখতে চাই না। যতদিন পর্যন্ত নব্য ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত না হবে, ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে। যেহেতু আপনি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে পারছেন না, দয়া করে আপনি বিদায় হোন।’
বৃহস্পতিবার বিকালে কাকরাইলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘ড. মোহাম্মদ ইউনুস আমাদের সম্মানের পাত্র, তিনি আমাদের মাথার মুকুট। আপনি যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকেন। আপনি চলে যান, আপনাকে দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব হবে না। আপনার দ্বারা কোন সংস্কার আমরা বিশ্বাস করি না। যারা সংস্কার করছেন, তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট জানেন না। আপনারা সংস্কার প্রস্তাবগুলো টেবিলে রেখে যান, পরবর্তী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাই সংস্কার করবে। এই মুহুর্তে আমরা সংস্কার চাই না। সরকার প্রধান হিসেবে তার উপরে আমাদের কোন আস্থা নেই, আমরা তাকে চাই না। তারা যে সংস্কারের কথা বলছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তারা যে নতুন দল করেছে তা পুরনো স্টাইলেই আগাচ্ছে। চাঁদাবাজি ও শোডাউনের রাজনীতি করতে গিয়ে তারা কাকের গায়ে ময়ুয়ের পালক লাগিয়েছে। তারা দেশের পরিবর্তনের জন্য কোন কাজ করছে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা সরকারে থেকে দল করছেন, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতির মাঠে আসুন। দেশের জনগণ যাকে মেনে নেয়, আমরাও তাকেই গ্রহণ করবো। সরকারের ক্ষমতা আর মববাজি দিয়ে দেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালাবে আমরা তা মেনে নেব না। সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদদের প্রশ্ন করে, এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য সাংবাদিকদের চাকরি চলে যাবে, টিভি স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে এমন কালচার আমরা দেখতে চাই না। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছি আরেক ফ্যাসিবাদকে গ্রহণ করতে নয়। আমরা এই নব্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। আমরা নব্য ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের রুখে দিব। কোন কারণ ছাড়াই আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।’
কোন আইনে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখবেন? প্রশ্ন রেখে জিএম কাদের বলেন, ‘কেউ দোষ করলে এটা তার দল বা ধর্মের দোষ নয়। আপনারা কাউকে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে পারবেন না। সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে, সেই বুকের পাটা নিয়ে রাজপথে দাঁড়ান। বিচার ও সংস্কারের কোন টাইম লিমিট নেই, এগুলো সবসময় করা যায়। একসাথেই সব সংস্কার করবেন বিষয়টা এমন নয়। চারা গাছ দিয়ে ফুল, ফল ও ছায়া সম্ভব নয়। চারা গাছকে বড় হতে সময় দিতে হবে। যতই সার, পানি ও ইনজেকশন দেন চারা গাছকে বড় হতে সময় দিতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনের জন্য দেশের মানুষ স্বাভাবিক রাজনীতি করতে পারবে। দেশের মানুষ চায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন। আমরা মনে করেছিলাম, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের বিশ্বব্যাপী সুনাম আছে। আমরা ওনার ওপর আস্থা রেখেছিলাম, তবে আমরা নিরাশ হয়েছি। দেশকে তিনি ভালোভাবে চালাচ্ছেন না। সংস্কারের নামে একটি দল করা হয়েছে। তারা, চাঁদাবাজির মাধ্যমে পুরোনো সংস্কৃতি লালন করছে। সরকার ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে চাঁদাবাজির মাধ্যমে শো-ডাউনের রাজনীতি শুরু করেছে সরকারের নতুন দলটি।’
জিএম কাদের আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ বেকার হয়ে পড়েছে। আরো অনেকেই বেকার হওয়ার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে অনেক কলকারখানা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মিল কারখানা চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। মালিকপক্ষ যে দলই করুক শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্ধ সমস্ত কলকারখানা চালু করার দাবি জানাচ্ছি। বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কৃষকরা ফসল উৎপাদন করছে, দাম পাচ্ছে না। গেল রমজানে সরকার বাহাদুরি করে বলেছে, সব নিত্য পণ্যের দাম কম। কিন্তু, সরকার বোঝে নাই কৃষকদের কষ্ট। ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এখন মালামালের দাম বেড়েছে, কিন্তু কৃষক ও শ্রমিকের হাতে টাকা নেই এবং ব্যবসায়ীদের হাতেও টাকা নেই। প্রতিদিন রপ্তানি কমে যাচ্ছে, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে বিশ্বের কোন প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে ঋণ দেবে না। বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না এবং দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি হবে না। এই সরকার দেশকে বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
মহান মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য- অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস-চেয়ারম্যান আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন।
জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি মেফতাহ উদ্দিন জসিম এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ শান্তর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন - প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, নাজমা আকতার, ভাইস-চেয়ারম্যান - গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সুলতান আহমেদ সেলিম, নূরুন্নাহার বেগম, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, মো. হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবহান, আকতার হোসেন দেওয়ান, মো. নোমান মিয়াসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
(ঢাকাটাইমস/০১মে/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন