আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস ও শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতকরণ

মো. সাইফুল ইসলাম মাসুম
  প্রকাশিত : ০১ মে ২০২৫, ১৫:৫২
অ- অ+

আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস, যা মে দিবস নামে অধিক পরিচিত, প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। এটি শ্রমিক শ্রেণির দীর্ঘ সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসকে স্মরণ করার দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেট প্রাঙ্গণে শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস দাবিতে সংঘটিত আন্দোলনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দিবসটি উদযাপিত হয়। এই দিনটি কেবল একটি স্মরণ দিবস নয়; এটি শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা এবং সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বানও বহন করে।

শ্রমিকদের অবদান:

শ্রমিকরা সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি। কৃষি, শিল্প, গার্মেন্টস, নির্মাণ, সেবা খাতসহ সব ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের অবদান অপরিসীম। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মূলত শ্রমিক শ্রেণির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। তারা দিনের পর দিন শ্রম দিয়ে গড়ে তোলে রাস্তা, কারখানা, ভবন ও নানা অবকাঠামো। অথচ দুঃখজনকভাবে, এই শ্রমিকরাই অনেক সময় উপেক্ষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত থাকেন।

শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার কী?

শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার বলতে বোঝায় এমন কিছু মৌলিক অধিকার যা একজন শ্রমজীবী মানুষ তাঁর কর্মক্ষেত্রে পেতে বাধ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. ন্যায্য মজুরি

২. নিরাপদ কর্মপরিবেশ

৩. শ্রমঘণ্টা সীমাবদ্ধতা

৪. ছুটি ও বিশ্রাম

৫. সংগঠিত হওয়ার অধিকার

৬. অসুস্থতা ও দুর্ঘটনায় সহায়তা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশ একটি শ্রমনির্ভর অর্থনীতি। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ করছেন, যার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। তবুও বহু ক্ষেত্রে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, তাদের কর্মপরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ, এবং ন্যূনতম মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, শ্রমিকদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হয়। ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা এবং চাকরি স্থায়িত্বের দাবিতে তারা রাস্তায় নেমে আসেন।

আইন ও নীতি:

বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কিছু আইন রয়েছে। ২০০৬ সালের শ্রম আইন এবং পরবর্তীতে ২০১৮ সালের সংশোধনী অনুযায়ী শ্রমিকদের বেশ কিছু মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ILO-এর বিভিন্ন কনভেনশন গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাস্তবে এসব আইন যথাযথভাবে কার্যকর করা হয় না।

চ্যালেঞ্জসমূহ:

১. আইন প্রয়োগের দুর্বলতা

২. নিম্ন মজুরি

৩. সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের বাধা

৪. অসচেতনতা

৫. প্রযুক্তির আগ্রাসন

সম্ভাব্য সমাধান:

১. আইনের কঠোর প্রয়োগ

২. ন্যায্য মজুরি কাঠামো

৩. শ্রমিক প্রশিক্ষণ

৪. সামাজিক নিরাপত্তা

৫. নারী শ্রমিকদের সুরক্ষা

মে দিবসের তাৎপর্য:

মে দিবস শ্রমিকদের আত্মত্যাগের প্রতীক। এটি শুধুমাত্র ছুটির দিন নয়; এটি সচেতনতার, সম্মান প্রদর্শনের এবং অধিকার আদায়ের একটি প্রতিশ্রুতিমূলক দিন।

উপসংহার:

একটি দেশের উন্নয়ন তখনই টেকসই হয়, যখন সেই দেশের শ্রমজীবী জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করে এবং কর্মপরিবেশে সম্মান ও নিরাপত্তা পায়। শ্রমিকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে, তাদের কেবল উৎপাদনের যন্ত্র না ভেবে সম্মানজনক মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে ওঠে, বরং একটি সচেতনতা আন্দোলন হয়ে ওঠে, সেটাই হোক আজকের অঙ্গীকার।

লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল করিম, সম্পাদক আনিসুজ্জামান
ঢাকার যানজটের অপ্রতিরোধ্য প্রভাব-যন্ত্রণা এবং তার সমাধান
মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচিত সংসদ: তারেক রহমান
রাজনৈতিকভাবে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বাস করছি: মির্জা ফখরুল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা