ছাত্রলীগ নেতার ভিডিওর প্রশংসা নোবিপ্রবি অধ্যাপকের

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) এপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গ্রেড-১ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নোবিপ্রবি শাখার সেক্রেটারি জাহিদ হাসান শুভর এতটি ভিডিওর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি আওয়ামী তথ্যপ্রযুক্তি লীগের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন বলে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে যাচ্ছেন বলে জানা যায়।
অধ্যাপকের এ ধরনের মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহলে এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, একজন দায়িত্বশীল অধ্যাপকের কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য অপ্রত্যাশিত। বিশেষ করে যখন ঐ ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এবং বর্তমানে তার সংগঠনও নিষিদ্ধ।
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নোবিপ্রবির শাখার সেক্রেটারি জাহিদ হাসান শুভর ভেরিফায়েড ফেসবুকে ‘বিশ্ব মোড়লদের কথায় যুদ্ধের প্রক্সি দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি ব্লগ ভিডিও প্রকাশিত হয়।
সেক্রেটারি জাহিদ হাসান শুভ ঐ ব্লগের কমেন্ট বক্সে বলেন, “ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়াসহ এই অঞ্চলের সব পরাশক্তির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য, ৯ বিলিয়ন ডলার চীনা বিনিয়োগে তৈরি কিউকপিউ বন্দর, আরাকান রাজ্যের ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজসহ এই অঞ্চলের জলসীমায় প্রভাব রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারত। কিছুদিন আগে চীন সফরে গিয়ে ইউনূস যখন বলেছিল এই অঞ্চলের সমুদ্রের একক অভিভাবক বাংলাদেশ, তখন কথাটা অনেকে গর্বের মনে করলেও দিন যত যাচ্ছে ততই পরিস্কার হচ্ছে এই কথা বলার উদ্দেশ্য। কি উদ্দেশ্য? আসেন বুঝাই।”
তিনি বলেন, “ইউনূস আমেরিকান ডিপ স্টেটের একজন পুতুল মাত্র, তাকে এখানে বসানোই হয়েছে এই অঞ্চলে মার্কিনিদের প্রভাব যাতে নিশ্চিত করা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে যেটা করানো যাচ্ছিল না, সেটা ইউনুসকে দিয়ে সহজেই করিয়ে নিতে পারবে- এই উদ্দেশ্যেই এতো বড় পরিকল্পনা করে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। কারণ শেখ হাসিনা আর যাই হোক দেশের এক ইঞ্চি মাটি বিক্রি করতে রাজি হননি। এখন ইউনূস চীনে গিয়ে বলে আসলো সমুদ্রের একক মালিক বাংলাদেশ। এর মানে সে বুঝিয়ে আসলো আমাকে ক্ষমতায় রাখেন, এই সমুদ্রে আধিপত্য চান তো, সেটা আমি দেব। সেই একই প্রস্তাব সে যুক্তরাষ্ট্রকেও দিয়েছে। তার মানে দাঁড়ালো, একটা লোক শুধুমাত্র নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য আমাদের প্রিয় স্বদেশকে নিলামে তুলে দিয়ে এসেছে। তার এই উচ্চাভিলাসের পরিণতি কি হবে জানেন?”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আরাকান দখলের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করবে করিডর হিসেবে। অস্ত্র পাঠাবে, যাবতীয় সব সরঞ্জাম পাঠাবে, মোট কথা বাংলাদেশের মাটি বা জলসীমা হবে তাদের যুদ্ধের গ্রাউন্ড। এদিকে চীন আর রাশিয়া তাদের বিনিয়োগ এবং অস্ত্র ব্যবসা রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠবে, ইতোমধ্যে হয়ে উঠেছেও। তারা পাল্টা চাপ দিবে। এর মাঝ খান দিয়ে ভারত ও চাইবে এই অঞ্চলে অন্য দেশগুলোর আধিপত্য যাতে না বাড়ে, কারণ তাতে তাদেরও নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে। তারাও চাপ প্রয়োগ করবে। মোট কথা বাংলাদেশ হয়ে যাবে চার পরাশক্তির আধিপত্য বিস্তারের এক প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র।”
তিনি আরো বলেন, “একটা সাজানো গোছানো দেশকে এরকম ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই গুটিকয়েক মানুষ, তারা তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার বিনিময়ে দেশের সব থেকে বড় অর্জন, দেশের সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে। সময় গেলে এটা হাজার কাঁদলেও আর ফিরে আসবে না। তাই সময় থাকতে আপনারা বুঝার চেষ্টা করুন, গণবিপ্লব করে এই দেশের সার্বভৌমত্ব আবার সবাই মিলে রক্ষা করুন, তা না হলে নিশ্চুপ দাসত্ব বরণের জন্য প্রস্তুত হোন।”
নোবিপ্রবি অধ্যাপক ঐ ব্লগে প্রতিক্রিয়া হিসেবে বলেন, “এতো সুন্দর করে অল্প বুঝালে জাহিদ। অভাগা বাঙালিদের বুঝ দাও হে দয়াময় প্রভু।”
পরবর্তীতে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়ার এই মন্তব্য নোবিপ্রবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
কমেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ মিয়া বলেন, আমি অত্যন্ত সরলতার সঙ্গে কমেন্টটি করেছিলাম। মিয়ানমার, ইন্ডিয়া, চায়না এবং আমেরিকার কবলে এক চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে বাংলাদেশ এটা আমি ধারণা করেছি। এখানে আমি কার বিপক্ষে লিখলাম? আমি একজন সুস্থ, সরল, বিবেকবান, মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা আমি বলছি এবং আল্লাহ আমাকে এভাবেই বানিয়েছেন। ২০২১ সালে আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি হয়েছি, নির্বাচক আমাকে নির্বাচিত করেছেন, আমার দ্বারা কোনো মানুষ কেন, কোনো পোকামাকড়েরও ক্ষতি হয় নাই। আমরা সেই মায়ের সন্তান। সারা বাংলাদেশে যখন ছাত্র আন্দোলন হলো তখন কি স্ট্যাটাস লিখেছিলাম ছাত্রদের পক্ষে তা দেখুন, আমার ছেলে কলেজে পড়ে, আমার কথা যদি একটা মিথ্যা হয় আল্লাহ আমার বিচার করবেন। এরপরও যদি আমার উপর কারো ক্ষোভ হয় আল্লাহ তার বিচার করবেন। আমি আমার বিবেকবোধ থেকে ভূরাজনৈতিক বিষয়ে এই মন্তব্যটি করি।”
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ রেজুয়ানুল হক বলেন, “কমেন্টের বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। এই বিষয়ে আমি জানি না।”
(ঢাকাটাইমস/০১মে/এফএ)

মন্তব্য করুন