‘ইশরাকের মেয়র পদে মামলার রায় নিয়ে এনসিপির উদ্বেগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র নির্বাচনসংশ্লিষ্ট মামলায় ইশরাক হোসেনের পক্ষে রায়ে এনসিপির উদ্বেগ অপ্রাসঙ্গিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিচার বিভাগের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম।
বুধবার বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনের পক্ষে তার আইনজীবী সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম যুগ্ম জেলা ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মার্চ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছরের আইনি লড়াই শেষে বিজ্ঞ আদালতে রায় ঘোষিত হয়। মামলা নিয়ে এনসিপির উদ্বেগ অপ্রাসঙ্গিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিচার বিভাগের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননার শামিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলার নয়জন বিবাদীর একজন শেখ ফজলে নূর তাপস আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং মামলার জবাব দেন এবং একপর্যায়ে মামলা খারিজের জন্য আদালতে আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত তৎকালীন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই উভয়পক্ষের শুনানি শেষে শেখ ফজলে নূর তাপসের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেই আদেশে অসন্তুষ্ট হয়ে বিবাদীপক্ষ মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করে দীর্ঘদিন মামলাটি আটকে রাখে। তাপসের সরাসরি হস্তক্ষেপে মামলা হাইকোর্টে শুনানি বারবার পিছিয়ে যায় এবং শুনানি না করে ফেলে রাখে। ফলে বিবাদীপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ও জবাব দাখিল করা সত্ত্বেও মামলাটি দীর্ঘদিন অনিস্পন্ন থেকে যায়।
৫ আগস্টের পর হাইকোর্ট রিভিশন খারিজ করে মামলাটি নিম্ন আদালতে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণ করে এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল পুনরায় শুনানি শুরু করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাদীপক্ষে দেওয়ানি কার্যবিধির ৬ নং আদেশের ১৭ নং নিয়ম মতে আরজি সংশোধনের দরখাস্ত দাখিল করে সংশ্লিষ্ট আইনের ধারাটি সংশোধন করে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর বিধি-৫৯ এর (খ) উপবিধি অনুযায়ী প্রার্থিত প্রতিকার চাওয়া হয়, যা বিজ্ঞ আদালত আইন অনুযায়ী মঞ্জুর করেন। এনসিপি আইনের ব্যাখ্যা এবং আইন সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় তারা আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্তি করছে, একই সাথে বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে অবমাননা করছেন।’
মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কারণ নিয়ে এনসিপির বক্তব্য একেবারেই শিশুসুলভ বলে মন্তব্য করে ইশরাকের আইনজীবী বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেকোনো মামলায় দ্রুত নিষ্পত্তির বিজ্ঞ আদালতের একটি সহজাত ক্ষমতা। তাছাড়া ২০২০ সালে দায়েরকৃত মামলাটি ২০২৫ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে, যাতে দীর্ঘ ৫ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, যা মোটেও সংক্ষিপ্ত সময় নয়। বরং মোকদ্দমাটি আরও পূর্বেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন ছিল। একটি নির্বাচনী মামলার নিষ্পত্তি সংক্ষিপ্ত সময়ের হওয়া উচিত।’
এনসিপির বক্তব্যকে আদালত অবমাননার শামিল এবং এ-সংক্রান্ত যে বক্তব্য দিয়েছে তা সম্পূর্ণ আইনি অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন ইশরাকের আইনজীবী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মামলার তদবিরকারক বাদীর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কেউ হতে পারে বিধায় বিজ্ঞ আদালত হলফনামা গ্রহণ করেছে, যা সম্পূর্ণ আইন মেনেই করা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ করেনি বলে যে বক্তব্য এনসিপি দিয়েছে তা এক কথায় তাদের জ্ঞানের স্বল্পতারই বহিঃপ্রকাশ এবং আদালত অবমাননার শামিল।’
আদালতের রায়ে কেউ যদি ন্যায়বিচার হয়নি বলে মনে করেন তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করা ও তার বক্তব্য আদালতে রাখারও সুযোগ আছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এভাবে প্রেস নোট দিয়ে বক্তব্য প্রদান দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা ও বিজ্ঞ আদালতকে অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়। উক্ত রায়ে কোনো প্রকার আইনি অসঙ্গতি না থাকায় নির্বাচন কমিশন যথাযথ নিয়ম মেনেই ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসাবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভুলভাল বুঝিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হতে আমাদের বিরত থাকাই শ্রেয়।’
গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকার সর্বোপরি জনগণের ভোটের অধিকারসহ বিজ্ঞ আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এনসিপির প্রতি অনুরোধ জানান ইশরাকের আইনজীবী।
(ঢাকাটাইমস/১মে/মোআ)

মন্তব্য করুন