উনুনে জ্বলছে রোকেয়ার সংগ্রামী জীবন
সন্ধ্যা নেমে এসেছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই। বিদ্যুবিহীন পুরো বাজারে তখন আলো ছায়ার খেলা। কোথাও মোমবাতি আবার কোথাও চার্জারের জীবনীশক্তি কমে আসা মৃদু আলোয় আঁধার দূর করার চেষ্টা। বাজারের মধ্যেই গ্রামের তিন সড়কের মিলনস্থলের একপাশে তখন জ্বলছে ছোট্ট একটা চুলা। তার পাশ ঘিরে বসে বা দাঁড়িয়ে আয়েশ করে নানা বয়সী কিছু মানুষ কিছু খাচ্ছে। আর গল্পে মেতে আছে।
কাছে এগিয়ে যেতেই দেখা গেল ছোট্ট চুলার উপর ছোট্ট একটি কড়াইতে তৈরি করে যাচ্ছেন একের পর এক চিতই পিঠা। আর কড়াই থেকে নামাতে না নামাতেই চলে যাচ্ছে কাস্টমারের হাতে। পাশে রাখা একটি বাটি থেকে চিংড়ি ও সরিষা ভর্তা কাগজে তুলে দিচ্ছে ছোট্ট একটি মেয়ে।
জিজ্ঞেস করতেই নাম জানা গেল পিঠা তৈরির কারিগর প্রায় ষাটোর্ধ্ব বয়সী মহিলাটির। রোকেয়া বেগম। বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল গ্রামে। স্বামী নেই অনেকদিন ধরেই। কোনো পুত্র সন্তানও নেই। যাকে আশ্রয় করে এই বৃদ্ধ বয়সে কিছুটা কষ্টহীন জীবন পার করবেন। আর তাই বাধ্য হয়েই জীবিকার সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছেন সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা অবধি।
আলাপচারিতায় জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই স্থানীয় শিমুলবাজারে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। চালের গুঁড়া দিয়ে চিতই পিঠা তৈরি করেন। সাথে কয়েক রকমের ভর্তা। বাজারে আসা মানুষের কাছে প্রতিদিন সন্ধ্যার হালকা নাস্তায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই রোকেয়া বেগমের চিতই পিঠা।
রোকেয়া জানান, প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কেজি চাল গুঁড়া করে আনেন তিনি। পুরোটাই বিক্রি হয়ে যায়। এক থেকে দেড়শত টাকা লাভ থাকে। আর তাই দিয়েই নিজের ও একমাত্র মেয়ের সংসারের কিছুটা ভার সইতে পারেন তিনি। তার পিঠা তৈরিতে সহযোগিতা করেন পঞ্চম শ্রেণি পড়–য়া নাতনি রানী আক্তার।
রানীর মায়ের নাম চায়না। সে রাস্তায় শ্রমিকের কাজ করে। তার সংসারও নড়বড়ে। ফলে বৃদ্ধ বয়সে মাকে দেখেশুনে রাখাও স্বপ্নের মতোন। আর তাই চাইলেও থামানো যাচ্ছে না ছোট্ট উনুনে জ্বলতে থাকা রোকেয়ার সংগ্রাম, সন্ধ্যায় বিছানায় শুয়ে একটু বিশ্রাম নেয়া!
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে পিঠা কিনতে আসা ফররুখ হাওলাদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রোকেয়া বেগমের পিঠা এবং ভর্তা খুবই মজাদার। সন্ধ্যায় বেশ চলেও এ পিঠা। শুধু এই পিঠা খাওয়ার জন্যই মাঝে মধ্যে এতো দূরে আসি।’
স্থানীয় আরও এক ব্যক্তি বলেন, ‘রোকেয়ার সংসার চালানোর কেউ নেই। আর এজন্যই স্বল্প পুঁজি নিয়ে প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত রাস্তার পাশে বসে পিঠা বিক্রি করে।’
জানতে চাইলে রোকেয়া বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন যা বিক্রি হয় তাতে এক/দেড়শ টাকা থাকে। তবে ঝড়-বৃষ্টি হলে পিঠা বিক্রি বন্ধ। সেদিন কোনো আয় হয় না। সবমিলিয়ে কষ্টে জীবন পার করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দূর থেকেও আমার এখানে পিঠা খেতে অনেকে আসে। যখন তারা পিঠার প্রশংসা করে তখন কষ্ট দূর হয়ে যায়।’
(ঢাকাটাইমস/২২মে/প্রতিনিধি/জেবি)
মন্তব্য করুন