আমি বিস্মিত, আসুন আপনিও বিস্মিত হোন

ইয়াসিন এলাহী
| আপডেট : ০৫ জুন ২০১৭, ১৫:১১ | প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০১৭, ১৪:১২

ক্লাস শেষ করে ট্রেনে বাসায় ফিরছিলাম। ট্রেনে বসে ইমোতে দেশে কথা বলছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম দক্ষিণ এশীয় চেহারার এক যুবক এসে আমার সামনের আসনে বসলেন। ভাবলাম হয়তো ভারত, শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানি কেউ হবে। যা হোক ফোনে আমার কথা শেষ হওয়ার পর সে যুবক আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘ভাইয়া কি বাংলাদেশি?’ আমি হ্যাঁ জবাব দিলাম। তারপর জানালেন একই বগির পেছনে বসা ছিলেন তিনি। ফোনে আমার বাংলা কথা শুনে কৌতূহলি হয়ে আমার সামনে এসে বসলেন।

পরিচয়ের পর জানতে পারলাম সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে এরোনটিকস অ্যান্ড সিস্টেম এনালাইসিস (বিমান চালনা বিদ্যা) বিষয়ে ব্যাচেলরে পড়ার জন্য এসেছেন। বাসা ভাড়া নিয়েছেন মেলবোর্ন মেইন সিটিতে। আমি তাকে অভিনন্দন জানালাম।

কিছুটা কৌতূহলি হয়ে তার পরিবার সম্পর্কে আলাপের পর সে জানালো তার বাবা শাহজালাল বিমান বন্দরে নিযুক্ত কাস্টমস কর্মকর্তা। ফের আমি তাকে প্রশ্ন করলাম তার বাবা বিসিএস অফিসার কি না? সে জানালো ‘না’। আরও জানালো তিনি এনবিআর কর্মকর্তা ও তাদের নিজস্ব একাধিক বাড়ি রয়েছে উত্তরাতে। তারপর তার কাছে জানতে চাইলাম সে স্কলারশিপে না কি সেলফ ফান্ডিংয়ে এসেছে? জবাব দিল, ‘সেলফ ফান্ডিং ও আমার বাবাই সব টাকা দেবে এবং বাবাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।’ এ কথা শুনে আমি বিস্ময়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে আমার এ বিস্ময়ের কারণ কী? আসুন তবে ব্যাখা করা যাক। ঘটনা হলো মোনাশ ইউনিভার্সিটি শুধু মেলবোর্ন-ই নয়, পুরো অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল ইউনিভার্সির্টিগুলোর একটি। সাধারণত বিশ্বের অতি ধনী ও এলিট লোকদের সন্তানরাই এখানে সেলফ ফান্ডিংয়ে পড়াশুনা করে থাকে। যেখানে চার মাসের একটি সেমিস্টার পড়তে অস্ট্রেলীয় ১৭ থেকে ১৯ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা ফি দিতে হয়।

এছাড়া তার প্রতি মাসে থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য বাবদ আরো খরচ হবে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার ডলার বা এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। আর তিন বছরের ব্যাচেলরের জন্য মোট ব্যয়টা পড়ে প্রায় এক কোটি ২০ লাখের মত।

এবার আপনিই বুঝতে পারছেন শাহজালাল বিমান বন্দরে কর্মরত দ্বিতীয় শ্রেণির এ কর্তা কোথায় থেকে তার ছেলের জন্য পাঠাবেন এত টাকা?

পত্রিকা থেকে জানলাম আপন জুয়েলার্সের ১৩ মন স্বর্ণ জব্দ করেছে গোয়েন্দারা। অথচ গত এক দশক ধরে দেশে স্বর্ণ আমদানি বন্ধ। তবে আপন জুয়েলার্সসহ অন্যান্য অসংখ্য জুয়েলার্সের হাতে থাকা কয়েক হাজার মন স্বর্ণ ও হীরা কী মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশে উড়ে এসেছে? নাকি দেশে স্বর্ণের খনি পাওয়া গেছে? না স্বর্ণের খনি পাওয়া যায়নি। পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু আমাদের বিকল্প স্বর্ণের খনি রয়েছে। আর সেগুলো হলো আমাদের বিমান বন্দরগুলো।

প্রসঙ্গত, নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকে রাখা এক লাখ টাকায় ৮০০ টাকা করারোপ করেছেন। আর তা তিনি আদায় করেও ছাড়বেন। যে উদাহরণ পৃথিবীর কোথায় নেই। কিন্তু বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের ন্যূনতম পার্সেন্টও তিনি ঠেকাতে পারছেন না। এর অর্থ কী দাঁড়ায়? আমাদের ক্ষমতার ইতিহাসই হলো আম-জনতার টুটি চেপে ধরার ইতিহাস? ক্ষমতাসীনরা বরাবরই আইনের উর্ধ্বে?

পুরো ঘটনায় আমি বিস্মিত। আসুন আপনিও বিস্মিত হোন।

লেখক: রিসার্চ ফেলো, মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।

(ঢাকাটাইমস/০৪জুন/বিইউ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :