উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ ও কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ

গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীরের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ করে তার পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হুমকি-ধামকি দেওয়া এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের ভাতিজা চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আহসান হাবীব রাজিবের বিরুদ্ধে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে করে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আশঙ্কা-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ।
এর আগে সোমবার দুপুরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে এই অভিযোগ দায়ের করেন আব্দুল হামিদ মিয়া নামের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী। যার একটি কপি স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতেও এসেছে।
অভিযোগকারী হামিদ মিয়া নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে অভিযুক্তরা হলেন গাইবান্ধা-৫ সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীর এমপি, একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম গিনির ভাতিজা ও গাইবান্ধা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আহসান হাবীব (রাজিব)।
লিখিত ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের গৃহীত প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন।
গাইবান্ধা সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীর। তিনি তার সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইস্তেকুর রহমান সরকারকে (কাপ পিরিচ) জয়ী করতে গত ২১ এপ্রিল বেলা ১১টায় সদর উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ইউনিয়ন পর্যায়ের দলীয় পদধারী নেতাদের নিয়ে গোপনে নির্বাচনি সমাবেশ করেন। যেখানে চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং ইউনিয়নের দলীয় পদধারী নেতাদের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ইস্তেকুর রহমান সরকারের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে বলেন। অন্যথায় দলীয় নেতাদের পদচ্যুত করাসহ ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আর্থিক অনুদান, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ উপার্জন বন্ধ করে দেওয়া এবং দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর হুমকি প্রদান করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, যা নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের শামিল।
এছাড়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে তিনি (শাহ সারোয়ার কবীর) অবৈধভাবে নির্বাচনি সমাবেশ করেই ক্ষান্ত হননি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নম্বর থেকে মোবাইল করে এবং তার সমন্বয়ক হিসেবে পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীকে দিয়ে স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বাধ্য করছেন। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর এমন হুমকি-ভয়ভীতি প্রদর্শনে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরদিকে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনির নিকট আত্মীয় (ভাতিজা) ক্ষমতাকে পুঁজি করে কোটিপতি বনে যাওয়া মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহ আহসান হাবীব রাজীব জনবিচ্ছিন্ন হয়ে অনুদানের নামে ভোটারদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান করছেন। তিনি কালো টাকার প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদানের নামে নিজের স্বার্থ চরিতার্থে ওইসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদকে নগদ টাকা প্রদান করছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, যা নির্বাচনি বিধির পরিপন্থি।
ফলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারগণের মাঝে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে উল্লিখিত বিষয়সমূহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন জানানো হয়।
এ ব্যাপারে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগটি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পাওয়া গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালিব মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
(ঢাকা টাইমস/১৪মে/প্রতিনিধি/এসএ)

মন্তব্য করুন