হাতে হাতে মেহেদির সাজ...
মেহেদি রাঙানো হাত কার না ভালো লাগে! মেহেদির টুকটকে লাল রঙে সাজানো দুহাত সামনে সামনে বাড়িয়ে দিলে কার না মন সাই দেবে হাত বাড়িয়ে দিতে। সেই মেহেদি রঙে রাঙানো অনেকগুলো হাতের দেখা মিললো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে। দলে দলে মেয়েরা বসে হাতে মেহেদি আঁকাচ্ছে। কেউ আঁকিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে তুলছে সেলফি।
মেহেদি রঙে হাত সাজিয়ে বধূবেশে বসার জন্য কেউ মেহেদি কিন্তু পরেনি। পরেছিল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য।
প্রতি বছর ঈদুল ফিতর পালন উপলক্ষে ‘ঢাকাবাসী’ সংগঠন মেহেদি উৎসব করে। ‘ঢাকাবাসী’ সংগঠন প্রতি বছর শুধু মেহেদি উৎসব করেই ক্ষান্ত থাকে না। তারা ঘুড়ি উৎসব, কাওয়ালি গানের আসরসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া ঢাকাবাসী সংগঠন বাংলাদেশের সংস্কৃতির নানা আচার অনুষ্ঠানও পালন করে থাকে।
আবহকাল ধরেই বাঙালি নারীরা বিয়ে, ঈদ উৎসব ছাড়াও নানা অনুষ্ঠানে মেহেদির রঙ্গে হাত রাঙায়। দল বেঁধে মেয়েরা মেহেদি পাতা গাছ থেকে তুলে তা পাটায় পিষে রাতে হাতে লাগাতো। তার ভেতর ছিল অন্য রকম এক আনন্দ। এখন আর গাছ থেকে পাতা তুলে মেহেদি না পরলেও নানা ব্র্যান্ডের কৃত্তিম মেহেদি বাজারে এসেছে। আর তারই ধারাবাহিকতাই ‘ঢাকাবাসী’র পক্ষে ‘এলিট মেহেদি’ এই মেহেদি উৎসবের আয়োজন করে।
বেলা ১২টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শামসুন্নাহার হলে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে বসে মেহেদি উৎসবে। মেতে উঠে নান্দনিক ডিজাইনের প্রতিযোগিতায়। এক এক দলে দুজন করে মেহেদি লাগানোর কাজ করে। এরকম সেরা আট জুটিকে দেয়া হয় পুরস্কার। মেহেদি লাগাতে থাকা জেসমিন আক্তারের সাথে কথা হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জেসমিন বলেন, ‘আমি নিজের মতো করে আঁকছি। কোনো ডিজাইন দেখে আঁকছি না। আঁকতে এসে খুবই ভালো লাগছে।’
এঁকে নিচ্ছিলেন তারই রুমমেট সাথী দাশ। তিনিও একই বিষয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘জেসমিন খুব সুন্দর করেই মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছে। আমি আশা করছি সেরা জুটির মধ্যে আমরা থাকব। তবে আজকে তো আর ফাইনাল রাউন্ড না। ১১ জুন রোকেয়া হলে বসবে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। সেদিন সেরা আট জুটিকে পুরস্কারসহ গাউন পরিয়ে দেয়া হবে। আমি ওই দিনের অপেক্ষায় আছি।’
এলিট মেহেদি উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘মেহেদি উৎসব শুধু একটি উৎসব নয়। এটি বাঙালির বহু পুরাতন ঐতিহ্য। মেহেদি শুধু হাতকে রাঙায় না। মন কেউ রাঙিয়ে দেয়। মনকে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রাখে। যাদের মন রঙিন। সতেজতায় ভরা থাকে। তারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসে কখনো জড়াতে পারে না। তাঁদের দ্বারা বাংলাদেশের কল্যাণ ছাড়া কোনো ক্ষতির আশঙ্কা করা যাবে না। এরকম আরো অনুষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের মন সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে।’
এ সময় শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুপ্রিয়া সাহা, ঢাকাবাসী’র উপদেষ্টা হাজি আব্দুস সালাম, আজফারুজ্জামান সোহরাফ, এলিট কসমেটিকা লি. এর পরিচালক বসু রায় উপস্থিত ছিলেন।
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শামসুন্নাহার ছাত্রীরা মেহেদি উৎসব উপভোগ করে। সবশেষে প্রত্যেকেরই পুরস্কৃত করা হয়। আর এভাবেই শামসুন্নাহার হলের মেহেদি উৎসব অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
(ঢাকাটাইমস/০৭জুন/এসএস/জেবি)
মন্তব্য করুন