নিষাদ, নিনিতের ‘বাবা’ শাওন
সম্প্রতি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। সন্তানরা নিজেদের বাবা সম্পর্কে বিভিন্ন মুহূর্ত পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আবার বাবারাও জানিয়েছেন তাদের ‘বাবা’ হওয়ার অনুভূতির কথা। সাধারণের মতো তারকারাও শেয়ার করেছেন তাদের ব্যক্তিজীবনের এই বিশেষ সম্পর্কের রসায়ন। ‘বাবা দিবসে’ জনপ্রিয় অভিনেত্রী, গায়িকা হুমায়ূনপত্নী মেহের আফরোজ শাওন জানিয়েছেন ব্যক্তি জীবনে কিভাবে তিনি ধীরে ধীরে সন্তানদের ‘বাবা’ হয়ে উঠেছেন।
জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী শাওন খুব অল্প বয়সে চিরদিনের জন্য হারিয়েছেন পথ চলার সঙ্গীকে। হুমায়ূন ও শাওনের দুই পুত্র নিষাদ এবং নিনিত ‘মৃত্যু’ কি বুঝে ওঠার আগেই চিরবিদায় দিয়েছেন তাদের বাবাকে। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই, সেই দিন থেকে আজও দুই সন্তানকে শুধু মা নয়, বাবার স্নেহ দিয়ে একাই আগলে রেখেছেন শাওন। শাওন যে আসলেই সন্তানদের কাছে ‘বাবা’ হয়ে উঠেছেন এটি তার দাবি নয়, বরং নিষাদ, নিনিতের স্বীকারোক্তি।
শাওনের ফেসবুক অবলম্বনে বাবা দিবস উপলক্ষে তার দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“অভিভাবক হিসাবে আমি কড়া ধরনের...
"নিষাদ হা করো"... "নিনিত মুখে খাবার ঢুকাও"... "নিষাদ চাবাও"... "নিনিত মুখের খাবার গিলে শেষ করো"... "এক্ষুনি গোসল করতে আসো"... "হাত থেকে আইপ্যাড নামাও"... "অনেক রাত হয়েছে, শুয়ে পড়ো... চোখ বন্ধ... ঘুমাও"...
সারাক্ষণ শাসন..!
খেলনা কিনবে... আমার বরাদ্দ প্রতিমাসে একটা, তার বেশি না... (খেলনার দাম বিষয়ক প্রতিবন্ধকতাও আছে)
বাইরে খেতে যাওয়া..? আইসক্রিম.., চকলেট..? তাও নিয়মের মধ্যে...
উনাদের দুইজনের একখানা খাতা আছে... ঐ খাতায় উনাদের ভালো কর্ম এবং পচা কর্মের হিসাব রাখা হয়...
'তাড়াতাড়ি খাওয়া সম্পাদন= প্লাস ১০, ডিম ভক্ষণ কিংবা দুগ্ধ পান= প্লাস ৫, সবজি ভক্ষণ অথবা ফলাহার= প্লাস ১০'
'দুই ভাইয়ের মৃদু মারামারি= মাইনাস ১০, ভাইদ্বয়ের অতিকায় যুদ্ধ= মাইনাস ২৫'
'বড় ভ্রাতা কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন= প্লাস ২৫'
'নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত আইপ্যাড ব্যবহার= মাইনাস ১২.৫'.........
প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে উনাদের খেলনা সামগ্রী কিংবা বেড়ানোর গন্তব্য নির্ধারণ হয়...
এইবার আমেরিকা যাত্রায় কি ভেবে যেন সব নিয়মে ছাড় দিয়ে দিলাম...
"খেলনা কিনবে..? কেনো..."
"রাত জেগে আইপ্যাড..? ওকে..."
"খেতে ইচ্ছা করছে না..? ফাইন... যখন ইচ্ছা খাও..."
আমার এই পরিবর্তন দেখে কনিষ্ঠ পুত্রের বিষ্ময় প্রদর্শন---
নিনিত: মা... তুমি কি বাবা হয়ে গেছ..?
আমি: মানে..?
নিনিত: এই যে তুমি আমাদের যেখানে ইচ্ছা সেখানে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছ.., যা ইচ্ছা করতে দিচ্ছ.., না খেলেও বকা দিচ্ছ না.., এত্তোগুলা খেলনা কিনে দিচ্ছ... আইয়া বাবা (তেনার বড় ভাই) বলেছে আমাদের বাবা এগুলা করতো... মা'য়েরা তো খালি না খেলে বকা দেয় আর বাবারা শুধু আদর করে আর যা ইচ্ছা কিনে দেয়... তুমি কি এখন আমাদের বাবা হয়ে গিয়েছ..!
(আমি হতবাক...)
নিষাদ: উফফফ নিনিত... তুমি এত্তো বোকা কেন..! মা তো আমাদের বাবা-ও...
নিনিত: ও... মা তো বাবার মতো শার্ট প্যান্টও পড়ে... মা, তাইলে তোমাকে হ্যাপি ফাদার্স ডে... আর একটা ফাদার্স ডে'র আদর...
আমার চোখে মনে হয় পানি চলে আসা উচিত কিন্তু কেন জানি পানি আসেনা... শুধু গলার কাছটায় দলা পাকিয়ে কেমন যেন করে...”
(ঢাকাটাইমস/২১জুন/জেএস)