দুদককে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি নিয়ে রায় যেকোনো দিন
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠি কেন বেআইনী ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। এ কারণে আদালত যেকোনো দিন রায়ের জন্য অপেক্ষামনা রাখার আদেশ দিয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আজ অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন তার অভিমত তুলে ধরেন। এসময় আদালতে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং সুপ্রিম কোর্টের চিঠি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী বদিউজ্জামান তরফদার উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, এ চিঠি সুপ্রিম কোর্ট বা প্রধান বিচারপতির আদেশ নয়। দুদককে দেওয়া চিঠিতে ‘সুপ্রিম কোর্ট মনে করে’-এ কথাগুলোও লেখা ঠিক হয়নি। কারণ এটা সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিভাগের (আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগ) আদেশ নয়। প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে এ চিঠি দেওয়া হলো, এমন কথা তো বলা হয়নি।
এসময় আদালত তার কাছে জানতে চায়, সুপ্রিম কোর্টের সব প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে। তাই যেকোনো প্রশাসনিক আদেশ তো তার নির্দেশেই হওয়ার কথা।
জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এখানে প্রধান বিচারপতির কথা তো বলা হয়নি। তিনি বলেন, এ চিঠি লেখার পরও দুদক চুপ করে বসে থাকেনি। তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। পরে সুপ্রিম কোর্ট সব তথ্য দিয়েছে। তাই এ চিঠির আর কার্যকারিতা নেই।
এসময় আদালত বলে, এটা নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হয়েছে। তাই হয়তো তাদের বোধদয় হয়েছে। এরপর সব তথ্য দিয়েছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, যেহেতু চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের কথা বলা হয়েছে তাই সুপ্রিম কোর্টের কাছেই জানতে চাওয়া উচিত ছিল তারা এ জাতীয় কোনো চিঠি দিয়েছে কিনা। কিন্তু তা না যেয়ে হাইকোর্টে আসা ঠিক হয়নি।
এসময় আদালত বলে, সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনলেই তো সবাই ভয় পায়। তাই হয়তো-
জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালতের কথা শুনে ভয় পেলে চলবে না। আদালতকে ভয় পান এমন ব্যক্তির দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকা উচিত নয়। তাকে সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকার বা অন্য কোউকে ভয় পেলে চলবে না।
আদালত বলে, এখন তো শুনছি, বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায়ও দুর্নীতি হয়।
শুনানির এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান একটি লিখিত বক্তব্য দাখিল করে বলেন, আদালত আগের শুনানির দিন জানতে চেয়েছিলেন যে দুদক এতদিন কি করেছে, তার জবাব এতে রয়েছে। দুদক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে ২০১০ সালের পর গত সাতবছরে খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। দুদক একদিনও ঘুমায়নি। এরপর আদালত রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখার আদেশ দেন।
দুদককে গত ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠিটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদিউজ্জামান তরফদার। এরপর আদালত স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে ওই চিঠি কেন অবেধ ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল, দুদক চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী ও বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দশ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ রুলের ওপর গত ১৯ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়।
বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। একারণে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দেয় দুদক। এর জবাবে তদন্ত না করতে গত ২৮ মার্চ দুদককে পাল্টা চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষরে এ চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়। এনিয়ে কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এরপর গত ৩১ জুলাই বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে মোট ২৩ ফর্দ নথি দুদকের কাছে সরবরাহ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরপর থেকে দুদক জোরেসরেই অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/এমবি/জেডএ)