উন্নয়নে কাদের আঁতে ঘা লাগে, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৮, ২০:২৬ | প্রকাশিত : ২১ জুলাই ২০১৮, ১৯:৪১

উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের যাত্রা আর নানা সাফল্যে কাদের আঁতে ঘা লাগছে, জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেউ কেউ নৌকা ঠেকাতে চাইছেন উল্লেখ করে তিনি এও জানতে চান, নৌকা ঠেকিয়ে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের তারা আবার ক্ষমতায় আনতে চায় কি না।

শনিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া সংবর্ধনায় এ কথা বলেন দলের সভাপতি।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং সর্বশেষ ভারতের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি অর্জন করায় শেখ হাসিনাকে এই সংবর্ধনা দেয় আওয়ামী লীগ।

বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংবর্ধনা মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী। আর এক ঘণ্টা নানা আনুষ্ঠানিকতার পর শুরু করেন বক্তব্য।

অবশ্য বেলা দুইটা থেকেই সাংস্কৃতিক নানা আয়োজনের মধ্যে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা আসার পর তাকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন সংগীত শিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ।

এরপর ‘আমার প্রিয় বাংলাদেশ’ শিরোনামে গীতিনাট্য পরিবেশন করা হয়। হয় আবৃত্তি আর নৃত্য পরিবেশনা।

পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্মাননাপত্র পড়ে শোনান এবং পরে তা শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।

এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাখা বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা তার বাবাকে সপরিবারে হত্যা, ছয় বছর বিদেশে তার জীবন, দেশে ফেরা, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা, ক্ষমতায় থেকে দেশের উন্নয়নে তার চেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

দেশ কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে কী কী করছেন, তারও বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকার বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় আমরা সরকার গঠন করেছি। কিন্তু মন্দার প্রভাব আমরা মানুষের ওপর পড়তে দেইনি।’

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন, ৭.৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ৫.৬ ভাগে নামিয়ে আনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বলেন, ‘যদিও আমাদের শুনতে হয় উচ্চ প্রবৃদ্ধি নাকি ভালো না, দেশ উন্নয়নশীল হওয়া নাকি ভালো না, কেউ কেউ সে বক্তব্য দিয়ে থাকে।’

‘কারা দেয়, কার আঁতে ঘাঁ লাগে?’-মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলন, ‘আঁতে ঘাঁ লেগেছে তাদের যারা আমার বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষ, হাড্ডিসার, কংকালসার, বুভুক্ষু মানুষ; যাদের শুধু হাড় আর চামড়া আছে, সেই দরিদ্র মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে বিদেশ থেকে অর্থ এনে সেই অর্থ দিয়ে নিজেরা অর্থশালী, সম্পদশালী হয়; দেশ বিদেশে সম্পেদের পাহাড় তৈরি করে, তাদেরই আঁতে ঘা লেগেছে।’

‘প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিরুদ্ধে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা মনে করেন প্রবৃদ্ধি অর্জন ভালো না, দেশ উন্নয়নশীল হলে ভালো না, তাদেরকে আমার সন্দেহ হয় বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে কি না, বা বাংলাদশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কি না’ নাকি স্বাধীনতাবিরোধীদের পদলেহনকারী সেটাই আমার প্রশ্ন।’

নৌকা ঠেকাতে হবে কেন?

‘একটি শ্রেণি আছে, উন্নয়ন নাকি চোখে পড়ে না’- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, নৌকা ঠেকাতে হবে। আমার প্রশ্ন, নৌকা কেন ঠেকাতে হবে?... অপরাধটা কী?’

‘নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।’

‘এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে, আজকে উন্নয়নশীল দেশে আমরা উন্নীত হতে পেরেছি।’

‘নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আমরা পরমাণু বিদ্যুৎ ক্লাবে পৌঁছাতে পেরেছি, আমরা স্যাটেলাইন যুগে পৌঁছাতে পেরেছি। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগে নেমে এসেছে। দারিদ্র্যের হার আরও হ্রাস করে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব।

‘তাহলে নৌকা ঠেকাবেন কেন? নৌকা ঠেকিয়ে কি ওই রাজাকারদের, যুদ্ধাপরাধীদের আবার ক্ষমতায় আনবেন? যারা নৌকা ঠেকাতে চান, তাদের কাছে সেটাই আমার প্রশ্ন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মিলিটারি ডিকটেটরদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করেছে বা বড় হয়েছে, তাদের মুখে এ কথা মানায়। কিন্তু যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের মুখে এ কথা মানায় না।’

‘এই মণিহার আমার নাহি সাজে’

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কলি উল্লেখ করে বলেন, ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে।’

‘আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। আমি জনগণের সেবক, জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।’

‘জনগণ কতটুকু পেল এটাই আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর বাইরে আমার কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।’

‘আমার কোনো কিছু প্রয়োজন নেই। শুধু একটা জিনিসই দেখতে চাই এই বাংলদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে উঠেছে যা আমার বাবার স্বপ্ন ছিল।’

২৪ ঘণ্টায় মাত্র পাঁচ ঘণ্টা বিশ্রাম নেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ছাড়া প্রতিটি মুহূর্ত আমি কাজ করি দেশের মানুষের জন্য, দেশের মঙ্গল উন্নয়নের জন্য; এর বাইরে আমার আর কোনো কাজ নেই।’

‘আমি কোনো উৎসবে যাই না, কোথাও যাই না। আমার শুধু একটাই চিন্তা। এই দেশের উন্নয়ন, দেশের মানুষের উন্নয়ন।’

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি ধরে রেখে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে দিয়ে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করার ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী।

সোহরাওয়ার্দী ‘জনসমুদ্র’

এই আয়োজনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং আশেপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। ঢাকা এবং আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা আসেন এই অনুষ্ঠানে। আর এই কর্মসূচির জন্য রাজধানীর একটি অংশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

দুপুরে সমাবেশ শুরু হলেও সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত মিছিল আসতে থাকে উদ্যানের দিকে। আর মিছিলকারীরা শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার পক্ষে স্লোগান দেয়।

মনোনয়নপ্রত্যাশী বিভিন্ন নেতাও এই সুযোগে মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। তাদের সমর্থকরা একই ধরনের গেঞ্জি পরে আসার পাশাপাশি মনোনয়নের দাবিতে নানা ধরনের ফেস্টুনও বহন করেন।

(ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/টিএ/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :