‘প্রার্থীর হলফনামা গোপন করার জিনিস নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:২৩

প্রার্থীদের হলফনামা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে তথ্য কমিশন উদ্যোগ নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, ‘হলফনামাতো গোপন করার জিনিস নয়। জনগণের অধিকার আছে তিনি যাকে ভোট দিচ্ছেন তার সম্পর্কে আগে থেকে জানার।’

শুক্রবার দিবাগত রাতে বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজে ‘অবাধ তথ্য, শক্তিশালী গণতন্ত্র’ বিষয়ক টক শোতে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

প্রণব সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান, প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ।

সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, ভারতের তথ্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য আইনের আওতায় এনেছে আমাদের দেশে এটা করা যায় কি না। প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে আমাদের সেটা প্রকাশ হয় আবার কোনো কোনো সময় হয় না।

এর জবাবে একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের হলফনামা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতো। এটা হিউজ সোর্স ছিল সাংবাদিকদের জন্য যে গত হলফনামায় তার সম্পদ কত ছিল এবার কত হয়েছে। সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’ পাশে থাকা প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদকে মজুরুল আহসান বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন যে হলফনামাতো গোপন করার জিনিস নয়। আমি যাকে ভোট দেব তার সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে আমার। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে কি না। তার সম্পদ কতো।

মজুরুল আহসান বলেন, ‘আমি দিল্লিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সময় ছিলাম। দিল্লির টেলিভিশনগুলো কোনো প্রার্থীর ক্যাম্পেইনের সংবাদ প্রকাশের সময় টিভির এক কোনায় লেখা ওঠে তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা ১৩ বছর জেল খেটেছেন। বিএ পাস, এইবার তৃতীয়বারের মতো তিনি প্রার্থী হচ্ছেন। যার ফলে সঙ্গে-সঙ্গে প্রার্থীর সম্পর্কে আমরা ধারণা পেয়ে যাই। এ হলফনামা প্রকাশ হলে ভোটারদের জন্য উপকার, সাংবাদিকদের জন্যও উপকার।’

প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ বলেন, আইনটাতে আছে যে সকল কর্তৃপক্ষ সরকারি অর্থ খরচ করে, পাবলিক মানি খরচ করে তারা তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে। এটার আওতায় সকল জনপ্রতিনিধিরা পড়ে।

প্রধান তথ্য কমিশনার বলেন, ‘এক প্রকার অনেক তথ্যই রাজনৈতিক দলের এসে গেছে। এই আইনটির প্রয়োগের অনেক বিশাল জায়গা আমাদের রয়ে গেছে। জনগণের স্বার্থে এটা আরও কিভাবে প্রয়োগ করে যায়, এ বিষয় আমাদের আরও কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের দিক দিয়ে সহায়তা করবো, প্রচারণা চালাবো। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলসহ সবার সহোযোগিতা প্রয়োজন।’

মরতুজা আহমদ বলেন, সমাজের বঞ্চিত, অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করেছে সেটা তারা কীভাবে পাবে। প্রতিটি অফিসে এই সেবা যে দেবেন তাকে জনসম্মুখে প্রকাশ্য হতে হবে। আর এটির কারণেই সবচেয়ে বড় ওয়েবপোর্টাল যেখানে ২৫ হাজার ওয়েবসাইট আছে, সেখানে প্রতিটি অফিসের তথ্য আপডেট করে রাখতে হবে। মানুষ কী সেবা পারে সেটা সেখানে থাকবে। কীভাবে পাবে সেটি শুধু ওয়বসাইটে নয়। প্রতিটি অফিসের সামনে প্রকাশ্যে রাখতে হবে। এটি বাস্তবায়িত যেন হয় এজন্য কেন্দ্র থেকে জেলা-বিভাগ প্রতিটি স্তরে সরকার কমিটি করে দিয়েছে।

‘সারাদেশে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার করা হয়েছে যেখানে থেকে অবাধে মানুষ তথ্য পেতে পারে। ৩২ হাজারের চেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আছে যিনি তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে থাকেন।’

মরতুজা আহমদ বলেন, আজ ১৫ কোটি মোবাইল ব্যবহার হচ্ছে। নয় কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে এখন খুব দ্রুত তথ্য পাওয়া যায়।

একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে তথ্য না পাওয়ার জন্য অভিযোগ এসেছিল ৮০৭টি। ২০১৫ সালে ৩৩৬টি, ২০১৬ সালে এসেছে ৫৩৯টি। ২০১৭ সালে এসেছে ৫৩০টি। আর এ অভিযোগের বেশিরভাগই করেছে সাধারণ মানুষ। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে মানুষ তার তথ্য জানতে সচেতন।

টক শোতে সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের বড় প্রতিষ্ঠান। এই ইনিস্টিটিউশনকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। গণতন্ত্রকে আশ্রয় করে আমরা যদি অগ্রগতি করতে চাই তাহলে এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে নিতে হবে। ডিসিপ্লিনের অন্যতম বিষয় হলো তাদের (রাজনৈতিক দলগুলো) মধ্যে স্বচ্ছতা আনা অ্যাকাউন্টেবল করা। আর এটা করতে গেলে তথ্য কমিশন, নির্বাচন কমিশন সব কমিশনের কিছু ভূমিকা আছে।’

গোলাম রহমান বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই তথ্য অধিকার আইন করা হয়েছে। তথ্য পাওয়ার অধিকার জনগণের, আর জনগণকেই তার অধিকার বুঝে নিতে হবে। না চাইলে তো আর কেউ বাড়ি গিয়ে দিয়ে তথ্য দিয়ে আসবে না। তথ্য কমিশন তথ্য দেয়ার ব্যাপারটা মোটের উপর দেখাশুনা করে। তারা বিষয়টি নজরদারি করে, ভাল মন্দ-দেখে। অভিযোগ হলে বিচার বিশ্লেষণ করে। জনগণকে তথ্য চাইতে হবে। অনেক ভাল কিছু আমাদের আছে। সেটা যদি জনগণ নিজের জায়গা থেকে প্রয়োগ করার সুযোগ না নেয় তাহলে তো বাড়িতে তথ্য কেউ পৌঁছে দিয়ে আসবে না।’

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/জেআর/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :