ভারতের একই পরিবারের ৯ জনই বামন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:৪২| আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:০০
অ- অ+

ভারতের তেলেঙ্গানা প্রদেশের হায়দ্রবাদের চৌহান পরিবার। এই পরিবারের ১১ সদস্যদের মধ্যে ৯ জনই বামন। তারা সবাই জেনেটিক রোগ ‘আকন্ড্রোপ্লাসিয়া’তে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে হাত-পা ক্ষুদ্রাকৃতির হয় এবং বামনত্ব তৈরি করে। খবর ডেইলি মেইলের।

এই পরিবারটি ভারতের সবচেয়ে বড় বামন পরিবার। রাস্তায় বের হলে প্রায়শই তাদের মানুষের টিপ্পনী সহ্য করতে হয়।

এই পরিবারের গৃহকর্তার নাম রাম রাজ চৌহান(৫২)। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বাইরে যাই আমাদেরকে ঘিরে লোকজনের ভিড় লেগে যায়। তারা নানা ধরনের অদ্ভুত প্রশ্ন করে। যেমন, কেন আমরা এতটা খাটো হলাম? কোথা থেকে এসেছি? প্রত্যকেই আমাদের উপহাস করে।’

রাম রাজ ‘বিয়ের অভ্যর্থণাকারী’ হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তিনি নির্দিষ্ট পোশাকে সজ্জিত হয়ে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানান। তার পরিবারের সদস্যদের কাজ পাওয়া অনেক কঠিন।

তিনি বলেন, ‘আমাকে কাজ দিতে কেউই আগ্রহ প্রকাশ করেনি। অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে। নিয়োগকর্তারা আমাকে দেখে বলতো, কিভাবে তুমি চাকরি করবে?’

‘যখন চাকরি ছিল না তখন আমি আত্মীয়ের মুদির দোকানে কাজ করেছি।’

রাম রাজের ২৭ বছর বয়সী মেয়ে আম্বিকা একজন হিসাবরক্ষক হতে চান। তিনিও একই সমস্যায় আক্রান্ত। তাকেও চাকরি পেতে জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

আম্বিকা বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে একজন হিসাবরক্ষক হতে চাই। তবে এটি তখনই সম্ভব হবে যদি আমি চাকরি জন্য যোগ্য হই। মানুষজন আমাকে বলে, তুমি খাটো, তাই চাকরি পাবে না।’

রাম রাজের অন্যান্য ভাই-বোনের দৈহিক উচ্চতাও একই। তারাও স্থায়ী কোনো চাকরি পাচ্ছেন না।

রাম রাজ বলেন, ‘আমার ছোট ভাই একটি টেলিফোন বুথে কাজ করেন এবং আমার ভাবি একজন দর্জি। এভাবেই জীবন চলছে আমাদের।’ রাম রাজ মনে করেন, তার পরিবারের নারী সদস্যদের জীবন অনেক বেশি কষ্টের।

তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের পুরুষদের জন্য পরিস্থিতি এখনো সহনীয়। কিন্তু এই শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত আমাদের পরিবারের নারী সদস্যদের অবস্থা একবার চিন্তা করুন। তাদের জীবন খুবই দুর্বিষহ।’

একসময় রাম রাজের পরিবারে ২১ সদস্যের মধ্যে ১৮ জনই বামন ছিলেন। তার সাত বোন এবং চার ভাইয়ের মধ্যে আটজনই এই সমস্যায় আক্রান্ত। ইতিমধ্যে তার বড় ভাই পৃথবি রাজসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন।

অসামাঞ্জস্য বামনত্বের জন্য অ্যাকোন্ড্রাপ্লাসিয়া দায়ী। এর কারণে শরীর ও হাত-পায়ের আকৃতি ক্ষুদ্রাকৃতির হয়। তাদের পা দুর্বল হওয়ার কারণে জীবনে শেষ সময়টাতে নানা শারীরিক সমস্যায় পতিত হন।

রাম রাজ বলেন, ‘একটি নির্দিষ্টি সময় পরে পা দুর্বল হয়ে যায়। আমার দাদা ও বাবাকে একই সমস্যা ভুগতে দেখেছি। তবুও তারা ঠিকভাবেই হাঁটাচলা করেছেন।’

‘কিন্তু আমি, আমার ছোট ভাই এবং দুই বোনের হাঁটতে সমস্যা হয়। ছোট ভাই তো কারো সাহায্য ছাড়া হাঁটতেই পারেন না।’

রাম রাজের স্ত্রী স্বাভাবিক উচ্চতার ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালে সাত মাসের গর্ভবতী অবস্থায় মারা যান। তাদের দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

রাম রাজ বলেছেন, মানুষের হাসাহাসি এবং এই অবস্থার কারণে তাদের চলাফেরা বিঘ্নিত হয়। বিয়ে করা, স্বাভাবিক জীবনযাপন করাটা জটিল হয়ে পড়ে। পরিবারটি মনে করে, সৃষ্টিকর্তা তাদের এই অবস্থা করে তৈরি করেছেন। কারণ তারা অন্যদের চেয়ে আলাদা।

রাম রাজ বলেন, আমার বাবা একবার বলেছিলেন, বামন আকৃতি দেবতার। মানুষ হাসাহাসি করতে পারে, তবে আমাদের এতে মন খারাপ করা উচিত নয়।’

‘অনেকেই আমাকে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপহাস করেছে। কেউ যদি আমাদের দেখে দুঃখিত হয় বা হাসাহাসি করে তাহলে মনে করা উচিত ঈশ্বর চান আমরা অন্যদের হাসাই। আমার দুটি মেয়ে রয়েছে। আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি এটাই আমাদের দায়িত্ব। এটিকে কাজে লাগাতে পারো। ভগবান তোমাদের সঙ্গেই আছেন।’

(ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/এসআই)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
উত্তরায় নিরাপত্তা কর্মীর মরদেহ উদ্ধার
কুমিল্লায় ৪ জনের করোনা শনাক্ত
বিজিএমইএর নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান
সোমবার থেকে টানা ৩ দিন ভারি বর্ষণের আভাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা