‘আমার বেটা-বেটিগো জানি আল্লাহ এতো বুড়া না বানায়’

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল
  প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৫১| আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৭, ২১:৪০
অ- অ+

ময়মন বেগম। বয়স বলেন একশর বেশি। স্বামী কাশেম মিয়া মারা গেছেন ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়। ছেলে আর মেয়ে কোথায় আছে জানেন না, তারা কেউ মায়ের খোঁজ রাখেন না। স্বজনদের অবহেলা এই বন্যা ময়মন বেগমকে চূড়ান্তভাবে অসহায় করে ফেলেছে। আশ্রয় দিতে অনীহা জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ভবনে ফেলে গেছেন তারা।

দল বেধে সাংবাদিক দেখে ময়মন বেগমের মধ্যে আশার আলো ঝিলিক দেয়। ভাবেন সরকারি কোন লোকজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তার কাছে এসেছেন। তবে ছবি তুলতে নারাজ। ছবি দেখে কেউ সাহায্য করতে পারে বলার পরই কান্নায় ভেঙে পড়লেন। বললেন, ‘আমার বেটা-বেটিরাই আমার খোঁজ নেয় না। আর ক্যারা খোঁজ নিব।’

আবেগ জড়িত হয়ে বৃদ্ধা বললেন, ‘আল্লাহ জানি কেউরে বুড়ি (বৃদ্ধা) না বানায়।’

‘আমার বেটা-বেটিগো জানি আল্লাহ এতো বুড়া না বানায়। আমি নয় কোন রহমে চইল্যা গেলাম। ওগো পুলাপানের নিগ্যা যদি ওগো এরহম অবস্থা অইলে অরা তো কুলাইব্যার (সহ্য) পারবো না।’

মাকে না দেখলে ভরণপোষণ আইন অনুযায়ী সন্তানকে পুলিশে দেয়া যায়-এই কথাটি জানানোর পর মায়ের মন গলে উঠল। ময়মন বেগম আবার কেঁদে উঠলেন। বললেন, ‘ওরা তো বুঝে না। বুঝ অইলে এমনে করবো না। ওগো পুলিশে দিও না বাবা।’

কষ্ট আর দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনে দুই ছেলে, এক মেয়ের মা হয়েছিলেন ময়মন। কিক্ত বছর দশেক আগে ছোট ছেলেটাও ক্যান্সারে মারা যায়। বাকিরা এখন খোঁজ নেয় না তার।

বড় ছেলে নয়েজ মিয়া। মা শুনেছেন, মাছের ব্যবসা করেন। তবে কোথায় থাকেন সেই ঠিকানা দেয়নি। বহুদিন ধরে দেখা হয় না ছেলের সাথে।

মেয়ে জয়ফুর বেগম। একই এলাকায় বিয়ে হয়েছে। কিন্তু মেয়ের ঠিকানাও বলতে পারেন না। বয়সের ভারে একদিকে যেমন নুয়ে পড়েছেন, স্মৃতি শক্তিও অনেকটা লোপ পেয়েছে। নিজের ঠিকানাটাও সঠিকভাবে বলতে পারেন না ওই বৃদ্ধা।

খোঁজ নিয়ে পরিচয় মিলল, টাঙ্গাইলের বাসাইল পূর্ব পাড়া তার বাড়ি। দুমুঠো ভাত দিতে হবে এই ভয়ে বৃদ্ধার খোঁজ নিচ্ছেন না তার সন্তানেরা। তার নিজের একটি ঝুপড়ি আছে। চেয়ে চিন্তে খাবার জুগিয়ে ওখানেই থাকতেন তিনি। বন্যার সেই ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে।

ঘরের ভেতর পানি ওঠায় আশ্রহীন মানুষের সাথে স্থানীয় গোবিন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায় উঠেছিলেন। কয়েক দিন সেখানে থাকার পর মঙ্গলবার বিকালে এক লোক তাকে নিয়ে যান তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু তারা এই ভার বইতে নারাজ। সন্ধ্যায় বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ভবনে রেখে যায় তারা। সন্ধ্যায় বৃদ্ধা মহিলার কান্নাকাটিতে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ঘটনার বিবরণ শোনেন।

কয়েকজনে খাবারের জন্য কিছু টাকাও দিয়ে যায়। এখনও তিনি হাসপাতালের ওই পরিত্যক্ত মেঝেতেই রয়েছেন। আশেপাশের লোকজন তাকে খাবার দিচ্ছে।

বানভাসীদের পাশে দাঁড়াতে ফেসবুকে টাকা তুলে কয়েকজন যুবক টাকা তুলে এলাকায় গেছেন ত্রাণ বিতরণে। ওই বৃদ্ধাকে দেখে তাকে কিছু সহায়তা করে এসেছে তারা।

এই ত্রাণ বিতরণের উদ্যোক্তা সাংবাদিক মুসলেম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু টাকা তুলেছি। সেগুলো দেওয়ার জন্য অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র বাসাইল গোবিন্দ সরকারি স্কুলে যাই। সেখানে ওই বৃদ্ধাকে অসহায় অবস্থায় দেখে আমরা পাঁচশ টাকা তার হাতে তুলে দেই। তবে তারপর থেকে ওই বৃদ্ধাকে বাসাইল গোবিন্দ সরকারি স্কুলে আর দেখতে পাচ্ছি না।’

বাসাইল পৌরসভার মেয়র মজিবর রহমান বৃদ্ধা মহিলাটি চেনেন। তিনি তাকে একটি বয়স্ক ভাতা কার্ড করে দিয়েছেন।

মেয়র ঢাকাটাইমসকে বলেন, এখন এই বৃদ্ধার স্থান যে হাসপাতালের পরিত্যাক্ত মেঝেতে হয়েছে এটা তার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে একটি ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/আরকে/ডব্লিউবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গাজায় ত্রাণপ্রার্থীসহ আরও ৮৬ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল বাহিনী
দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা কমতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়ন: বোমা হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ধ্বংস করতে পারেনি
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া না করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, বুঝবেন যেভাবে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা