পূর্ণাঙ্গ মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ: খাদ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪০ | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৫৯

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। খাদ্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপনন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের শতভাগ পুষ্টিমানের খাবার নিশ্চিত করে অচিরেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে।

বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাক্সিক্ষত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৯ এর সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কৃষিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবদানের দীর্ঘ বর্ণনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ । অনেক ক্ষেত্রে উদ্বৃত্তও থাকছে। আমরা এ খাদ্য রপ্তানির জন্য বাজার খুঁজছি। এখন জনগণের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিমানের খাবার নিশ্চিতে সরকার পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, শুধু আইন দিয়ে এবং সরকার চেষ্টা করলেই হবে না, নিরাপদ ও পুষ্টিমানের খাবার নিশ্চিতের জন্য দেশের জনগণকেও সচেতন হতে হবে। বলতে হবে, ভেজাল খাবো না-ভেজাল বিক্রি করতে দেবো না।

সম্প্রতি কৃষির সাফল্যের বিস্তারিত বিবরণে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করেছে। বিশ্বের বহু দেশের মানুষ বাংলাদেশের কৃষির এই অকল্পনীয় উন্নয়নের গল্প শুনতে আসেন। বাংলাদেশের কৃষি এখন বিশ্বের অন্যতম রোল মডেল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে কখনো খাদ্য ঘাটতি ছিলো না। নীল চাষ গচিয়ে দেয়ায় ব্রিটিশ আমলে এ ভূখ-ে খাদ্য ঘাটতি শুরু হয়, যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বিগত সরকারগুলোর আমলেও বহাল ছিল।

সাম্প্রতিক কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরে সাধন চন্দ্র বলেন, এসব ক্ষেত্রে আমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে মাছ দুই শ টাকা কেজির নিচে নেই। পোল্ট্রি মুরগির কেজি ১৩০-১৪০ টাকা। আমরা বিদেশে পোল্ট্রির মাংস রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, কেউ যাতে সীসা ঢুকাতে না পারে।

গবাদি পশুর উন্নয়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গ্রামে এমন কোনো বাড়ি পাবেন না, যেখানে একটিও গরু পাওয়া যাবে না। একসময় গ্রামে গোয়াল ঘর উঠে গিয়েছিলো। এখন নতুন করে আবারো গোয়াল ঘর ফিরে এসেছে। এসময় হঠাৎ করে দুধে সীসা আছে বলে প্রচার করা হলো। ধ্বস নামলো দুধের বাজারে। কৃষকের মাথায় হাত এবং খামারিরা পথে বসে গেলো। আমরা এগিয়ে যেতে চাইলেও আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র আমাদেরকে টেনে ধরার চেষ্টা করছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব আরিফুর রহমান অপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি. সিম্পসন। আয়োজিত সেমিনারে প্রতিপাদ্যের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থাইল্যান্ডের মাহিডল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ভিসিথ চাভাসিট।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমা শাহীন, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক। কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিজ্ঞানী, গণমাধ্যমকর্মী প্রমুখ সেমিনারে অংশ নেন।

এর আগে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী অন্যান্য অতিথিদের নিয়ে কেআইবি চত্বরে তিন দিনের খাদ্য মেলা উদ্বোধন করে স্টলগুলো ঘুরে দেখেন। সকালে বের হয় এবারের খাদ্য দিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালি। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে শুরু হওয়া র‌্যালিটি মেলা প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়।

মেলায় সরকারি ও বেসরকারি ৪৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকছে।

বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৯ উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার, মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার প্রকাশনা ও বিতরণ, মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহন নিশ্চিত করাসহ ব্যাপক প্রচার চালনা হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালিত হয়।

বিশ্ব খাদ্য দিবসের উদ্দেশ্য হলো- ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা, কৃষির উন্নতিতে মনোযোগ দেওয়া, কৃষিভিত্তিক উৎপাদনে উৎসাহ দান করা, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান, গ্রামীণ মানুষ, মূলত মহিলা ও কম উন্নত মানুষদের অবদানে উৎসাহ দান, প্রযুক্তির সমৃদ্ধিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া।

উল্লেখ্য বিশ্বব্যাপী খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছে। এফএও ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ১৯৭৯ সালে এ সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী বিজ্ঞানী ড. পল রোমানি বিশ্বব্যাপি খাদ্য দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবের পর ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে।

ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহ

আসন্ন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

বলিপাড়া-রুমা সীমান্ত পরিদর্শন করলেন বিজিবি মহাপরিচালক

দেশে বজ্রপাত নিরোধযন্ত্র স্থাপনে সহায়তা করতে চায় ফ্রান্স

যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন সেনাপ্রধান

অটিজম সম্পর্কে সমাজের সবাইকে সচেতন করতে হবে: স্পিকার

‘নারী কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করবে মন্ত্রণালয়’ 

সমাজ পরিবর্তনে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে: নানক

হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়াতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিত্যপণ্যে সিগারেট বাদে স্বীকৃতি পাচ্ছে যেসব পণ্য

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :