মৃত ভিক্ষুকের গচ্ছিত টাকা মেয়েকে দিলেন ব্যবসায়ী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৩২

আনোয়ারা বেগম (৬৫) পেশায় একজন ভিক্ষুক ছিলেন। শ্রবণ ও মানসিক প্রতিবন্ধী এই নারী ভিক্ষা করতেন কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌর বাজার ও রেল স্টেশন এলাকায়। আনোয়ারা জেলার দৌলতপুর উপজেলার শশীধরপুর এলাকার মৃত তোফা মিয়ার স্ত্রী ছিলেন।

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঠাঁই হয় মিরপুর রেল স্টেশনে। সারাদিন মিরপুর বাজার ও স্টেশনে ভিক্ষা শেষে রাতে প্লাটফরমে ঘুমাতেন তিনি।

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর ‘রূপসা এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি কুষ্টিয়ার মিরপুর স্টেশন অতিক্রম করার সময় কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আনোয়ারা।

সারাদিন ভিক্ষাবৃত্তির টাকা তিনি জমিয়ে রাখতেন মিরপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বাজার সংলগ্ন পৌর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ফাস্টফুড ব্যবসায়ী মোস্তফা মল্লিকের নিকট। টাকাগুলো একবারও খুলে দেখেনি মোস্তফা মল্লিক। আনোয়ারা বেগম দিন শেষে যেভাবে টাকাগুলো দিতেন, ঠিক সেভাবেই একটি প্লাস্টিকের বস্তায় রাখতেন মোস্তফা। এ কথা মোস্তফা আর আনোয়ারা ছাড়া কেউই জানতেন না।

নিহত বৃদ্ধার আমানতের এই টাকা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান মোস্তফা মল্লিক। অবশেষে সন্ধান পান আনোয়ারার একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুনের। তার হাতেই মায়ের রেখে যাওয়া আমানত ফেরত দিলেন মোস্তফা মল্লিক।

শুক্রবার দুপুরে মেয়ের হাতে তার মায়ের রেখে যাওয়া টাকাসহ ব্যাগটি তুলে দেন মোস্তফা। এসময় দেখা যায় ওই ব্যাগে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা ছিল। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।

ফাস্টফুড ব্যবসায়ী মোস্তফা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ আনোয়ারা বেগম দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষা করে যা পেতেন একটা টুপলি করে আমার কাছে আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখতেন। যেভাবে দিতেন, আমি সেভাবেই রেখে দিতাম। কোনদিন খুলেও দেখিনি। হঠাৎ ২২ ডিসেম্বর ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান আনোয়ারা। এরপর আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি তার আমানতের টাকার পুটলিটি নিয়ে। অনেক খোঁজ করে তার একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুনকে পাই। দুপুরে তার মেয়ের হাতে মায়ের রেখে যাওয়া টাকাসহ ব্যাগটি তুলে দেই। এসময় দেখা যায় ওই ব্যাগে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা ছিল। পুরো টাকাটা তার সন্তানের হাতে তুলে দিতে পেরে নিজেকে খুব হালকা লাগছে।

আনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে শিরিনা খাতুন জানান, আমার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এই মিরপুর বাজারে ভিক্ষা করতেন। ভিক্ষার টাকাটা ফাস্টফুড ব্যবসায়ী মোস্তফা মল্লিকের কাছে রাখতেন বিষয়টি আমরা জানতাম না। মোস্তফা মল্লিকই স্বেচ্ছায় মায়ের রেখে যাওয়া টাকাটা আমার হাতে তুলে দেন।

মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী আলম মণ্ডল জানান, আনোয়ারা বেগমের গচ্ছিত ১৪ হাজার ৯০০ টাকা তার মেয়ে শিরিনা খাতুনের হাতে তুলে দিয়ে মোস্তফা মল্লিক এক মহানুভবতার পরিচয় দিলেন।

(ঢাকাটাইমস/৩জানুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :