নাটোরের চলনবিলে রোগাক্রান্ত মাছের শুঁটকি

‘মৎস্য ভাণ্ডার’ খ্যাত চলনবিলে প্রতি বছরই প্রায় ১০০ কোটি টাকারও শুঁটকি উৎপাদন হয়। সম্প্রতি হঠাৎ চলনবিলজুড়ে ছত্রাকজনিত ক্ষত রোগে আক্রান্ত হয়ে মাছ মরে ও পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির মুনাফা লোভী শুঁটকি উৎপাদনকারীরা সেই ক্ষত রোগাক্রান্ত মাছ কম দামে কিনে যত্রতত্রভাবে শুঁটকি তৈরি করছে। এই শুঁটকি খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাসহ এলাকার সচেতন মহল। তাছাড়াও চলন বিলাঞ্চলে সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছরই শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন উৎপাদনকারীরা।
চলনবিলের মৎস্যজীবীরা জানান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসিনতার কারণে ৪৭ বছরেও এ অঞ্চলের শুঁটকি মাছ রক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। তাছাড়া অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ও জলাশয় সরকার দলীয় প্রভাবশালী ও অপেশাদারদের দখলে চলে গেছে। আর ভৌগোলিক কারণেই এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে মৎস্যজীবীদের বসতি গড়ে উঠেছে। তারা সারা বছর এসব এলাকার জলাশয় থেকে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমান চলনবিলে চাহিদার তুলনায় অনেক কম মাছ উৎপাদন হলে তার পরেও প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়।
মিঠা পানির পুঁটি, টেংরা, কাটা বাতাসি, বোয়াল, শোল, আইকোর, চেলা, টাকি ও চাঁদা মাছ এ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে বেশি। তবে সম্প্রতি চলনবিলে বোয়াল, শোল, টাকি ও কৈসহ বিভিন্ন দেশি মাছ ছত্রাকজনিত ক্ষত রোগাক্রান্ত হয়ে মরে ও পঁচে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে কিছু হোটেল মালিক ও শুঁটকি উৎপাদনকারী সেই রোগাক্রান্ত মাছ কম দামে কিনে নিয়ে হোটেলে রান্না ও শুঁটকি তৈরি করছে।
সরেজমিনে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংগইন এলাকায় আব্দুস সালাম, সাইদুল ও জয়নাল আবেদীনের শুঁটকি চাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষত রোগাক্রান্ত (ঘা) ভরপুর বোয়াল, শোল ও টাকি মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। আর সেই মাছের শুঁটকিগুলো বেশি দাম হাকিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে দূর-দূরান্তের মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা।
শুঁটকি ক্রেতা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, চলনবিলের সুস্বাধু দেশি ছোট মাছের শুঁটকি- তাই কিনছি। তবে কেউ যদি ক্ষত রোগাক্রান্ত মাছে শুঁটকি তৈরি করে- সেটা খুব দুঃখজনক।
চলনবিল জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি আখতারুজ্জামান বলেন, এ বছর হঠাৎ করে চলনবিলের বোয়াল, শোল, টাকি ও কৈ মাছে ক্ষত ঘা দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে এক শ্রেণির মুনাফা লোভী হোটেল মালিক ও শুঁটকি উৎপাদনকারীরা সেই মাছগুলো পানির দামে কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এই মাছ ও শুঁটকি খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে যে কোন রোগ ব্যধি ছড়াতে পারে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালী উল্লাহ মোল্লাহ বলেন, চলনবিলাঞ্চলের শুঁটকি তেমন নষ্ট হয় না। কারণ উৎপাদনের পরপরই এ অঞ্চল থেকে শুটকি সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুর, লালমরিহাট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। তবে ক্ষত রোগাক্রান্ত (ঘা) মাছে শুঁটকি তৈরি করা হলে তাতে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা হবে বলে তিনি জানান।
(ঢাকাটাইমস/৬ফেব্রুয়ারি/কেএম/এলএ)

মন্তব্য করুন