করোনায় মৃত্যু ঠেকিয়েছে চীনের প্রতিবেশী ভিয়েতনাম!

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১৮:৩৬ | প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১৮:২৭

চীনের উহান থেকে প্রাণ সংহারক নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। তবে চীনের উহান থেকে মাত্র ১৩শ কিলোমিটার দূরে প্রতিবেশি ভিয়েতনামে ভাইরাসটি তেমন ছড়াতে পারেনি। তিন মাসে সংক্রমিত হয়েছে আড়াইশ জনেরও কম। এমনকি চীনে করোনায় মৃত্যুর মিছিল শুরু হলেও ভিয়েতনামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো মৃত্যুর রেকর্ডও নেই।

চীনের উহানে করোনা শনাক্ত হওয়ার অল্প কিছুদিন পরই জানুয়ারিতে ভিয়েতনামে প্রথম করোনা আক্রান্ত দুজন রোগী শনাক্ত হন। মাত্র তেরোশো কিলোমিটার দূরে চীনের উহানে তত দিনে আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়েছে আর মৃত্যু হছে ১৭০ জনের। ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভিয়েতনামে কোভিড ১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ১০।

ভিয়েতনামের লোকসংখ্যা কম না, দশ কোটির কাছাকাছি। করোনা প্রতিরোধে ভিয়েতনাম স্বাস্থ্য দফতর যা যা কাজ করেছিল, তার মধ্যে শুধু বিজ্ঞাপন নয়, সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা ছিল অন্যতম।

অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ভিয়েতনাম স্বাস্থ্য দফতর করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। ভিয়েতনামে প্রতিটি মানুষের জন্য মানবিক মানসম্পন্ন পরিচর্যামূলক চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাও খুব উন্নত। তাই রোগ প্রতিরোধ, রোগ হলে মৃত্যুও আটকানো সহজ হয়। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত দশ কোটি জনসংখ্যার দেশে করোনার আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। আক্রান্তের সংখ্যা আড়াইশোর কম।

সরকারি নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবহুল জায়গা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সন্দেহজনক সবাইকে খুঁজে খুঁজে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার জন্য ভিয়েতনাম একটা সহজ, কম খরচের কিটও বানিয়ে ফেলেছে, অন্য দেশগুলো সেই কিট কিনতে শুরু করেছে। মার্চের শেষ অবধি হিসেব— প্রতি লাখ জনসংখ্যায় প্রায় ১৬ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে।

তা সত্ত্বেও আর্থিক ক্ষমতা সীমিত হওয়ার কারণে যত পরীক্ষা হওয়া দরকার ছিল তত করে ওঠা যাচ্ছে না, তাই জোর দেওয়া হচ্ছে সংক্রমিতদের খুঁজে বার করার এবং স্থানীয় স্তরে নির্বাচিত নিয়ন্ত্রিত লকডাউনের ওপর এবং কোয়রান্টিন। ব্যবস্থাটা এমনই, কোয়রান্টিনে কাটানো এক ব্রিটিশ নাগরিকের ভাষায়, ‘থাকার জন্য এত স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয় আমার বাড়িতেও নেই।’

চীন কেবল লকডাউন করেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেনি, আনা যায় না। লকডাউনের সঙ্গে অতি উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোও সে দেশে আছে। ইউরোপের যেসব দেশ লকডাউন করেছে, তাদের বেশির ভাগের চিকিৎসা পরিকাঠামো মজবুত, তাই ইটালি ও স্পেন বাদ দিলে বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশেই মৃত্যুহার এক শতাংশের আশেপাশে। এক দিনে চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায় না, কিন্তু সঙ্কটকালে নতুন কিছু নির্মাণ করা সহজ। গোটা বিশ্ব দেখছে বেসরকারি চিকিৎসার আরাধনা কতটা বিফলে গিয়েছে, যে দেশ যত প্রাইভেট-নির্ভর, সে- দেশ তত বিপদে পড়েছে।

বলা বাহুল্য, সব দেশেই কিছু বেয়াড়া ধনী থাকে। ভিয়েতনামি এক ধনবতী ইউরোপের তিনটি দেশ ঘুরে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন ২ মার্চ। সেই ধনী ভিয়েতনামি বিমানবন্দরে পরীক্ষকদের ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়েন। তিনি ছিলেন সে দেশের ১৭ নম্বর করোনা আক্রান্ত।

ওই ধনীকে খুঁজে পাকড়াও করা হয়। তিনি যে বিমানে এসেছিলেন, তার সব যাত্রীকে কোয়রান্টিনে রাখা হয়। তিনি যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই রাস্তা জীবাণুমুক্ত করা হয়, সেই পথের ধারে বাস করা প্রত্যেককে পরীক্ষা করা হয়। সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা, কোয়রান্টিন, স্কুল-কলেজ বন্ধ এবং সু-উন্নত চিকিৎসা— ভিয়েতনামের গড়ে তোলা এই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য প্রতিরক্ষার দেশটিকে এখন পর‌্যন্ত করোনায় বিপর্যস্ত হতে দেয়নি। বরং চিন বা দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে যে লড়াইয়ের নিদর্শন ভিয়েতনাম রেখে চলেছে, বিশ্বের কাছে সেটা একটা শিক্ষণীয় ব্যাপার।

(ঢাকাটাইমস/০৭এপ্রিল/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :