করোনা মোকাবিলায় যেভাবে সফল তুরস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ মে ২০২০, ১২:৪৭
অ- অ+

তুরস্কে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল ১১ মার্চ। এরপর থেকে বেশ দ্রুত দেশের প্রতিটি জায়গায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। একমাসের মধ্যেই তুরস্কের সবগুলো প্রদেশ আক্রান্ত হয়। চীন এবং ব্রিটেনের তুলনায় বেশ দ্রুত গতিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তুরস্কে। অনেকে আশংকা করেছিল যে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়বে। তুরস্কের অবস্থা হয়তো ইতালির মতো হয়ে উঠতে পারে - এমন আশংকাও ছিল।

কিন্তু প্রায় তিন মাসের মাথায় এসেও সেটি ঘটেনি। এমনকি তুরস্কে পুরোপুরি লকডাউনও দেয়া হয়নি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ৪৩৯৭ জন। কিন্তু অনেক চিকিৎসক মনে করেন প্রকৃত অর্থে মৃতের সংখ্যা এর দ্বিগুণ হতে পারে। কারণ, যারা পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড১৯ রোগী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে সেটিকে পরিসংখ্যানে দেখানো হয়। কিন্তু তারপরেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ংকর দিনগুলোতে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, তুরস্কের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ, বহু দেশে এখনে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তবে ব্রিটেনের কেন্ট ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজির শিক্ষক জেরেমি রসম্যান বলেন, তুরস্ক বেশ পরিষ্কারভাবেই একটি বড় ধরনের দুর্যোগ পাশ কাটিয়ে গেছে।

রসম্যান বলেন, 'যে কয়েকটি দেশ মোটামুটি দ্রুততার সাথে টেস্ট করেছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা মানুষদের সনাক্ত করার মাধ্যমে তাদের আলাদা করেছে, তদের মধ্যে তুরস্ক অন্যতম। যে কয়েকটি দেশ সংক্রমণের বিস্তার কমাতে সক্ষম হয়েছে তুরস্ক তাদের মধ্যে অন্যতম।'

তুরস্কে যখন সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল তখন দেশটিতে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। এর মধ্যে ছিল- গণ পরিবহনসহ বিভিন্ন জায়গায় বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার, রেস্টুরেন্ট ও কফি-শপ বন্ধ করা, জনবহুল জায়গায় শপিং বন্ধ রাখা এবং মসজিদে জমায়েত বন্ধ করা।

যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং ২০ বছরের কম তাদের পুরোপুরি বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে কারফিউ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বড় শহরগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইস্তাম্বুল শহর। এই শহরটি তার ছন্দ হারিয়েছে - হৃৎস্পন্দন ছাড়া হৃদপিণ্ডের মতো অবস্থা হয়েছে ইস্তাম্বুল শহরের।

কিভাবে ভাইরাস খুঁজে বের করা হয়েছে?

তুরস্কে ধীরে ধীরে বিধি-নিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসক মালিক নূর আসলান এখনো বেশ সতর্ক। ইস্তাম্বুল শহরের পুরনো অংশে জনবহুল এলাকায় জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন তিনি। আক্রান্ত ব্যক্তি কাদের সংস্পর্শে এসেছেন সেটি খুঁজে বের করার কাজ করে এমন একটি দলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন মালিক নূর আসলান। তুরস্কে এ ধরনের ৬০০০ দল আছে।

তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, আমরা একটা যুদ্ধের ভেতরে আছি। আমাদের সদস্যরা বাড়িতে যাওয়া ভুলে গেছে। আমরা বলি ঠিক আছে - আধঘণ্টা শেষ। কিন্তু তারা বাড়িতে যাবার চিন্তা করেনা। কারণ, তারা জানে এটা তাদের কর্তব্য যাতে ভাইরাস অন্য কারো মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে।'

তারা মার্চের ১১ তারিখ থেকেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা লোকজনদের খুঁজে বের করার কাজ শুরু করেছেন। দেশটিতে হাম রোগে আক্রান্তদের খুঁজে বের করার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা আছে তুরস্কের। তিনি জানান, 'পরিকল্পনা তৈরি করা ছিল। আমরা সেগুলো শুধু বের করে কাজে লাগানো শুরু করেছি।'

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তুরস্ক প্রধান ড. ইরশাদ শেখ মনে করেন, তুরস্কের কাছ থেকে কিছু শেখার আছে। প্রথম দিকে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। প্রতিদিন ৩৫০০ সংক্রমণ ছিল। টেস্ট করার বিষয়টি কাজে লেগেছে। টেস্টের ফলাফলের জন্য পাঁচ-সাতদিন অপেক্ষা করতে হয়নি।

এছাড়া কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এবং কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে আক্রান্ত রোগীদের যেভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেটি নিয়ে এখনো মন্তব্য করার সময় আসেনি বলে মনে করেন তিনি।

কোভিড১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন-এর ব্যবহার নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে তুরস্কে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ওষুধ নিয়ে পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরলেও সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গবেষণায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে কোভিড১৯ এর ওষুধ হিসেবে বাতিল করে দিয়েছে। কোভিড১৯ রোগীদের ঝুঁকি বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ওষুধকে তাদের তালিকা থেকে স্থগিত করেছে।

তুরস্কের সরকার কোভিড১৯ মহামারিকে যেভাবে মোকাবেলা করেছে সেটি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে দেশটির মেডিকেল এসোসিয়েশনের। সংস্থাটি বলছে সরকারের অনেক ভুল ছিল। এসব ভুলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দীর্ঘ সময় যাবত সীমান্ত খোলা রাখা।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তুরস্কের কিছু প্রশংসা করেছে। তুরস্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান শেখ বলেন, সংক্রমণ এখনো পুরো মাত্রায় উঠেনি। সামনের দিনগুলো আরো মানুষ আক্রান্ত হবে।

কোভিড১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য তুরস্কের কিছু সুবিধা রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ এবং হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা অনেক।

ঢাকা টাইমস/৩০মে/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বর্ষায় রোগভোগ কাবু করে ফেলে শরীরকে, সুস্থ থাকতে যা খাবেন এবং যা খাবেন না
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ আজ, ফল জানবেন যেভাবে
দাম্পত্য কলহের জেরে যমজ ২ শিশুকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেন মা
ইউআইইউ এলাকায় র‍্যাবের অভিযান, বিদেশি পিস্তলসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী মোজাম্মেল গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা