শেখ হাসিনা: বাঙালির স্বপ্ন তরীর অটল সাহস

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
  প্রকাশিত : ০৯ জুলাই ২০২০, ২০:২৪| আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২০, ২০:২৬
অ- অ+

১৭৫৭ সালের দিকে ইউরোপীয়দের মনের জানালায় ‘ফেটিসিজম’ নামের এক নতুন মতবাদ-চিন্তার উত্থান ঘটে। যার অর্থ দাঁড়ায় যাদুবাদ। আর এর মৌলিক ভিত্তি ছিল বিশ্বাস। ধারণা করা হয় ওই সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ইউরোপীয়রা যুক্তির তরবারি ছেড়ে বিশ্বাসের আফিম নেশায় মজেছিলেন। যদিও তা সেখানে খুব বেশিদিন স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারেও ‘প্রাচ্যের অন্ধকার পাকিস্তান’ এর এ রকম ফেটিসিজম চিন্তা ছিল। অর্থাৎ বিশ্বাস ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ কখনোই স্বাধীন হতে পারবে না। আর শোষকের দল তাদের এই বিশ্বাসকে স্থাপন করেছিলেন কিছু অলীক এবং খোঁড়া যুক্তি-চিন্তা দিয়ে। যা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের একক সংগঠক এবং নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং অভ্যুদয় ঘটে সাম্য-সুন্দর বাংলাদেশের।

যদিও আজও সেই পরাজয়ের বারুদ শিখা জ্বলতে দেখা যায় তাদের জ্ঞাতিগোষ্ঠীদের অন্তরে। যার সম্প্রতি প্রমাণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের প্রয়াণে কিছুজনের বিকৃত উল্লাস প্রকাশ। বিকৃত রুচিবোধের এই প্রাণীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে হালের অবসাদগত স্থান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। জেনে না জেনে বানোয়াট তথ্য প্রকাশের উৎসব সাজিয়ে বসেছেন একেকজন। মাঝে মাঝে ইস্যুভিত্তিক গণতন্ত্র চর্চা নিয়েও বকতে দেখা যায়। কিন্তু গণতন্ত্র মানে যে ৫১% বনাম ৪৯%, সেটা অবশ্য ভুলে যান। তাছাড়া কোথাও ব্যক্তিগত সংঘাতে কিছু ঘটলেও সেটাকে সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে বিক্রির চেষ্টা তো আছেই। অথচ এসব সামাজিক সন্ত্রাসের বেশিরভাগই যে পারিবারিক সহনশীলতার অভাববোধের কারণে ঘটছে সেটাই এড়িয়ে রাষ্ট্রকে বিব্রত করার জন্য ছোটেন বিশ্ব মোড়লদের কাছে। যদিও এরাই আবার ক্রিকেট খেলায় নিজের সমর্থিত দল বাদ পড়ে গেলে পরবর্তী খেলা উপভোগের জন্য ধর্মের ভিত্তিতেই সমর্থনের জন্য দল নির্বাচন করেন।

সাম্প্রতিককালে এ রকম হাজারও সামাজিক আচরণের পাশাপাশি বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও দেশ লড়াই করছে। আর এতে একক লড়াই জারি রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লোক কাহন বেহুলা-লখিন্দরের জীবন কিচ্ছার মতোই বেহুলা যেমন লখিন্দরের শব নিয়ে একাই ভেলায় যাত্রা করেছিলেন, লড়াই জারি রেখেছিলেন এবং শেষমেশ মৃত্যুকে জয় করে লখিন্দরকে ফিরিয়ে নিয়ে নিজের বিশ্বাসের বিজয় এনেছিলেন। বাঙালির সাহস শেখ হাসিনাও তাই করে চলেছেন। বেহুলার একক ভাসান যাত্রার মতোই বাঙালির স্বপ্নতরীকে বয়ে নিয়ে চলেছেন অটল সাহসে। বিশ্ব ব্যবস্থায় বর্তমান বাংলাদেশ এখন অন্যতম এক সদস্য রাষ্ট্র। তাই বৈশ্বিক কাঠামোয় নিজেদের এই অংশীদারিত্বকে ধরে রাখার জন্য অন্যান্য দেশের মতো সচেতনার বাঁধে ধ্বংসের প্লাবন রুখে দেয়ার প্রত্যয়ে আবারও সেই জয়যাত্রা আরম্ভ করা যেতে পারে। আর এক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীলভাবে সমর্থন যোগাতে পারেন।

যদিও এই প্রক্রিয়ায় অনর্থক সমালোচনাও আসবে। কারণ এখানাকার মানসিক মানচিত্রে যেকোনো সমস্যাকে ময়নাতদন্তের আদলের সমাধানে এগোনোর চেয়ে একে নিয়ে ব্যবসা করার প্রবণতাই বেশি। শেখ হাসিনার জয়ে লখিন্দরের ঘর নির্মাণের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তির মতো প্রাণীরাই ছিদ্র করতে তৎপর আছেন। আর এই তৎপরতা যে অনিয়ম, গুজব, অনৈতিকতার মতো পন্থা অবলম্বন এবং প্রচার হতে পারে সেটাও প্রমাণিত। তাছাড়া দুর্যোগকে পুঁজি করেও যে কেউ কেউ ব্যবসা করতে পারেন সেটাও এই বাংলার মানুষের পুরনো অভিজ্ঞতা। কাজেই বাঙালি তার মঙ্গল প্রদীপ একক শেখ হাসিনার প্রতিই পূর্ণ বিশ্বাস পোষণ করেন। কারণ সময়ের যথার্থতা তিনিই বুঝেন।

যেমন, করোনার এই সময়ে তিনি জানিয়েছেন বাড়ির এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। এই এক বার্তাই প্রকাশ করে তার সাবলীল বিচক্ষণতার। অর্থাৎ, করোনার এই পরিস্থিতিতেও জনগণ যেন মানসিক, শারীরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে মনোবল ধরে রাখতে পারেন সেই অর্থবহ ইঙ্গিত। কারণ গাছগাছালি রোপণের মাধ্যমে একদিকে যেমন সময় কাটানোর সুযোগ আছে তেমনি শরীরের ঘাম ঝরানোর মধ্য দিয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকারও সুযোগ আছে। অর্থাৎ তার সেই চিন্তা রচনা করে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পরামর্শপথ। তাছাড়া স্বল্প পরিসরে হলেও মেটাতে পারে পরিবারের শাকসবজির চাহিদা এবং পরিবেশের সুরক্ষা, যা অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও সহায়ক হতে পারে।

তবে সবচেয়ে আনন্দের হলো, নিজের সৃষ্টির বেড়ে উঠা এবং তাতে ফুলে-ফলে ছেয়ে যাওয়ার চিত্র, যাতে সময় হয়ে উঠতে পারে পুরো দস্তুর প্রশান্তির। ১৭৫৭ থেকে হিসাব করলে ২১৩ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই একক সংগঠন যারা প্রথম বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার স্বাদ অর্জনে নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছে। কাজেই সাম্প্রতিক এই দুর্যোগ মোকাবেলায়ও বাঙালির সাহস হয়ে ভবিষ্যৎ বিশ্ব নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে তারা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এই প্রত্যয়ই আজ বিশ্ব বাঙালির।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। ই-মেইল: [email protected]

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যত ত্যাগী নেতাই হোক, অন্যায় করলে বিএনপির কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: তেনজিং 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শাপলা তুলতে গিয়ে ভাই-বোনের মৃত্যু 
রাঙ্গুনিয়ায় মডেল মসজিদ উদ্ধোধন করলেন ধর্ম উপদেষ্টা 
আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার এখনো পাই নাই: রমজান আলী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা