চাকরির প্রলোভনে নারীদের ভারতে পাচার করতেন তারা
নারীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা রাজধানীর সবুজবাগের একটি বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে থাকতেন। যদিও তারা স্বামী-স্ত্রী নন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার।
অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচিতিটা হলেও আসলে আসামি প্রতীক ও জেরিন দুজনই প্রতারক। প্রতারণার জন্য তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একত্রে বসবাস ও বিদেশে পাঠানোর জন্য নারীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে তাদের ভারতে দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দিতো। তাদের জোরপূর্বক অশালীন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হতো।’
সিআইডি জানায়, তারা চাকরি দেয়ার নামে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে প্রলুব্ধ করলেও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নিতেন না। প্রথম থেকে শুরু করে ভারতে তাদের বিক্রির আগ পর্যন্ত খুব ভালো ব্যবহার করতেন। এরপর ভারতে পাচারের পর তাদেরকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করত এই চক্রটি। পরে ওই চক্রের কাছে এসব নারীকে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন প্রতীক ও জেরিন।
ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, ‘এর আগেও আসামিরা বিভিন্ন নারীকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে ভারতে পাচার করেন এবং অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন। এ বিষয়ে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’
রেজাউল হায়দার বলেন, ‘২০১৯ সালে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রাজধানীর সবুজবাগের একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে ভাড়া উঠেন প্রতীক খন্দকার ও জেরিন। ওই ফ্ল্যাটে থাকা এক নারীকে ভালো চাকরি দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠাবেন বলে প্ররোচিত করেন তারা।’
প্ররোচনায় প্রভাবিত ওই নারীকে মানব পাচারকারী চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্তের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে ভুক্তভোগী ওই নারীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়। এরপর ভুক্তভোগীকে ভারতে একটি দালাল চক্রের কাছে বিক্রির উদ্দেশে পাচার করার সময় পুলিশ উদ্ধার করে এবং চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তবে পালিয়ে যান মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা প্রতীক।
এ ঘটনার পর সবুজবাগ থানায় ভুক্তভোগী ওই নারীর পরিবারের করা মামলায় পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে টানা এক বছর অনুসন্ধানের পর ভারতে নারী বিক্রির জন্য পাচার চক্রের মূলহোতা পলাতক আসামি মহেনুজ্জামান ওরফে প্রতীক খন্দকার ওরফে বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আসামি প্রতীক খন্দকারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/এএ/জেবি)