‘সরকারি শান্তিনিবাসে’ শিশুদের সঙ্গে থাকবেন প্রবীণরাও

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:১৩ | প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০৬

দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ আছেন। প্রবীণরা স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সঙ্গেই থাকতে চান এবং সামাজিকভাবে সেটাই হয়ে আসছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক কাঠামোতে যে পরিবর্তন এসেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রবীণদের জন্য যথেষ্ট সেবা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। প্রবীণদের আনুষ্ঠানিক সেবার প্রয়োজনীয়তা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

এসব কথা বিবেচনা করে প্রবীণদের জন্য সরকার গড়ে তুলছে ‘শান্তি নিবাস’। যেখানে একই ভবনে শিশুদের জন্যও থাকার ব্যবস্থা থাকবে। প্রবীণদের সঙ্গে সহাবস্থানের ভিত্তিতে পারিবারিক আবহে শিশুদের বেড়ে ওঠার লক্ষ্যে এসব শান্তিনিবাস স্থাপন করা হবে।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৮টি সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শান্তিনিবাস স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন হয়। এই ৮টি শান্তিনিবাস স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, শান্তিনিবাস প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা থেকে এসেছে। তিনি দুই বছর আগে এমন প্রকল্প নেয়ার কথা বলেছিলেন। এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই যে দেশের অনেকে অসহায়, অনেকের আর্থিক সংগতি নেই। অনেকে পরিবার থেকে নানা কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের জন্য এ প্রকল্প নেয়া।

একই কম্পাউন্ডে বয়স্করাও আছে আবার শিশুরাও আছে যেকারণে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক একটা মেলবন্ধন থাকবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘সবার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ থাকবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এটা দেখাশোনা করবে আপাতত। আমাদের ওখানে যারা স্টাফ আছে তারা এটা দেখভাল করবে। পরবর্তীকালে চাহিদা মতো স্পেসালিস্ট লোকবল নেয়ার চিন্তা রয়েছে।’

যে আট জেলায় শিশু পরিবারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শান্তিনিবাস স্থাপন হবে সেগুলো হলো- গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, লালমনিরহাট সদর উপজেলায়, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে, সুনামগঞ্জ সদরে, নোয়াখালীর মাইজদী, রাজশাহীর বাঘায়, খুলনার মহেশ্বরপাশা ও বরিশালের সাগরদী।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য: প্রবীণদের সঙ্গে সহাবস্থানের ভিত্তিতে পারিবারিক আবহে শিশুদের বেড়ে ওঠার লক্ষ্যে শান্তিনিবাস স্থাপন; আটটি বিভাগে আটটি সরকারি শিশু পরিবারের ভেতর আটটি শান্তি নিবাস স্থাপন; অবহেলিত সিনিয়র সিটিজেনদের (বয়স্ক ব্যক্তি) নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা; সন্তানদের অবহেলার শিকার দুঃস্থ বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিত করা; অবহেলিত বয়ঃবৃদ্ধ ব্যক্তিদের পরিচর্যা, নিরাপদ ও প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা যথাযথভাবে নিরূপণ করে সেই হিসেবে ব্যবস্থা গ্রহণ; প্রতি কেন্দ্র পাঁচ তলা ভিতের উপর আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত তিন তলা ভবন নির্মাণ করা হবে।

এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এখন দেশে তরুণদের সংখ্যা বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৪৮ সালের পরে দেশে বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা তরুণদের চেয়ে বেশি হবে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সমাজ সেবা অধিদপ্তর। এটি বাস্তবায়িত হলে অবহেলিত প্রবীণদের পরিচর্যা, নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সব চাহিদা নিরূপণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রবীণ মঞ্চ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রবীণরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকবে এটা আমার প্রথম চাওয়া। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা থাকা হয়ে ওঠে না তখন তারা আরও অসহায় হয়ে পড়ে।’

আর এ জন্য পারিবারিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ দিয়ে ‘শান্তিনিবাস’ ব্যবস্থাপনা এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে এটি করা হচ্ছে তা যেন বাস্তবায়ন হয়। এটা পরিচালনার জন্য চরিত্রবান লোকবল হতে হবে। এখন মূল্যবোধের একেবারে সংকট।’

তিনি বলেন, ‘দেখা যাবে সুবিধে দেয়ার কথা কিন্তু দেবে আরেকটা। এমন ব্যবস্থাপনা যেন না হয়। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কথা হলো বয়স্ক যারা তাদের ডিম খেতে দিতে হবে। ডিম খাওয়ার কথা থাকলে ডিম যেন পায়। অর্থাৎ প্রবীণদের এসব সর্বাঙ্গীন পরিচর্যার বিষয়ে নজর দিতে হবে।’

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে এক কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ আছেন। বর্তমান হারে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে চার কোটি। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রবীণদের ৫৮ শতাংশের দারিদ্র্যের কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণের সামর্থ্য নেই। সেখানে তাদের বৃদ্ধ বয়সে সেবা পাওয়াটা আরও কঠিন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। এই হারে বাংলাদেশে ২০৩০ সালের আগেই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এর বিশাল প্রভাব পড়বে শ্রমবাজারের ওপর।

জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, ২০৪৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় প্রবীণদের সংখ্যা বেশি থাকবে। দেশে এখন ৬৮ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু তিন দশক পরে প্রবীণদের সংখ্যা আরও বেড়ে গেলে দেশের সার্বিক উৎপাদনে একটি বড় ঘাটতি দেখা দেবে। এই বয়স্ক মানুষদের যদি সমাজের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বিত করা না যায় তাহলে এক সময় তারা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের কিছু কার্যক্রম রয়েছে। সবচেয়ে বড় কার্যক্রমটি হচ্ছে- বয়স্ক ভাতা। এর আওতায় ৪৪ লাখ প্রবীণকে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/জেআর/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :