আয়োডিনের অভাবে যেসব রোগ হয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর ২০২০, ১২:৪৭| আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২০, ১২:৫৩
অ- অ+

অনেকের দিনভর ঘুম ঘুম ভাব, কোনও কাজেই বিশেষ উৎসাহ পান না। কিংবা যত্ন-আত্তি করা সত্ত্বেও হু হু করে চুল ঝরে যাচ্ছে। আবার কম খেয়ে ওজন বাড়ছে আর বারবার ময়েশ্চারাইজার লাগিয়েও ত্বক শুকিয়ে যাচ্ছে। এ সব উপসর্গের মূল কারণ খাবারে আয়োডিনের অভাব।

আয়োডিন এমন একটা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের শরীরের পুষ্টির জন্য জরুরি। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস হল খাবারের এমন এক উপাদান যা অত্যন্ত অল্প পরিমাণে খাবারে থাকলেই শরীরের চাহিদা মেটে।

আয়োডিন হলো একটি মৌলিক পদার্থ। পৃথিবীতে আয়োডিনের প্রধান উৎস হলো মহাসাগর এবং সমুদ্রের পানি, যেখানে দ্রবণীয় অবস্থায় আয়োডিন পাওয়া যায় আয়নরূপে।

নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আয়োডিনকে রোজকারের খাবারের তালিকায় রাখার ব্যাপারে জোর দিয়েছে।

আয়োডিনের অভাব পূরণ করার জন্য সাধারণ লবণ সোডিয়াম ক্লোরাইডে সামান্য পরিমাণে সোডিয়াম বা পটাসিয়াম আয়োডাইড মিশিয়ে দেওয়া হয়। যে খাবারের মাধ্যমে আয়োডিন পেতে গেলে একজন মানুষকে হাতির সমপরিমাণ খাবার খেতে হবে। তা সম্ভব নয় বলেই বিশ্বের অনেক দেশেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নির্দেশ মেনে লবণ, আটা ইত্যাদি রোজকার কিছু খাবারের প্যাকেটে আয়োডিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ আয়োডিনযুক্ত লবণ খান বলে ‘আয়োডিন ডেফিসিয়েন্সি ডিজঅর্ডার’-এর প্রবণতা অনেকটাই কম, তাও এই মুহূর্তে আমাদের দেশের ছয় কোটি মানুষ আয়োডিনের অভাবজনিত গয়টার বা গলগণ্ড-সহ (গলার কাছটা মারাত্মকভাবে ফুলে যায়) নানা অসুখে কষ্ট পাচ্ছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জড়বুদ্ধি, কম বুদ্ধি ও স্প্যাস্টিক শিশুদের এসব সমস্যার অন্যতম কারণ হবু মায়ের খাদ্য তালিকায় যথাযথ পরিমাণে আয়োডিনের অভাব। সমুদ্রের পানিতে হ্যালোজেন গ্রুপের প্রায় সব কটি মৌল (যেমন ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন আর আয়োডিন) থাকে। সমুদ্রের কাছে থাকা মানুষদের আয়োডিনের অভাব হয় না।

দেশের অধিকাংশ মানুষই আয়োডিনযুক্ত লবণ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের প্রকৃত উপায় সম্পর্কে অবগত নয়, যার ফলে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করার পরও অনেকের শরীরের প্রয়োজনীয় আয়োডিনের ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে।

সকলের জেনে রাখা প্রয়োজন, লবণে মিশ্রিত আয়োডিন হলো একটি উদ্বায়ী পদার্থ। তাই লবণ খোলা বাতাসে রাখলে আয়োডিন উড়ে যায়। ফলে বাজারে যেসব খোলা লবণকে আয়োডিনযুক্ত লবণের নামে চালিয়ে দেওয়া হয়, সেগুলোতে আদতে আয়োডিন থাকে না বললেই চলে। তাই প্রকৃত আয়োডিনযুক্ত লবণ পেতে হলে অবশ্যই প্যাকেটজাত লবণই কিনতে হবে।

আমাদের রোজকার ডায়েটে কতটা আয়োডিন প্রয়োজন সেই নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা তালিকা আছে। প্রতিদিন কার কতটা আয়োডিন প্রয়োজন। ( ১ গ্রাম = ১ লক্ষ মাইক্রোগ্রাম)।

০ থেকে ৬ মাস বয়সে ১১০ মাইক্রোগ্রাম

৭ থেকে ১২ মাস ১৩০ মাইক্রোগ্রাম

১ থেকে ৩ বছরে ৯০ মাইক্রোগ্রাম

৪ বছর থেকে ৮ বছরে ৯০ মাইক্রোগ্রাম

৯ বছর থেকে ১৩ বছরে ১২০ মাইক্রোগ্রাম

১৪ বছর থেকে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম

হবু মায়েদের ২২০ মাইক্রোগ্রাম

যে বাচ্চারা মায়ের দুধ খায়, সেই মায়েদের ২৯০ মাইক্রোগ্রাম।

আমাদের গলার কাছে থাকা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন ও অন্যান্য হরমোন বেরোয় যা আমাদের বুদ্ধির বিকাশ-সহ নানান শারীরিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে।

অল্পবিস্তর আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোন কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। আয়োডিনের অভাবে আরও কিছু সমস্যা হয়। যেমন থাইরয়েড গ্রন্থি আকারে বেড়ে যায়, থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ কমে গিয়ে হাইপো-থাইরয়েডিজম হয়, বুদ্ধির বিকাশ কমে যায়, মানসিক অসুস্থতা শুরু হয় এমনকি মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

এছাড়া স্নায়ু ও সংলগ্ন পেশির স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে গিয়ে পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, হবু মায়ের আয়োডিন ঘাটতি হলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হয় না, মানসিকভাবে বিপন্ন ও স্প্যাস্টিক শিশুর জন্ম হয়। এমনকি ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই ভ্রূণ মারা যেতে পারে। বাচ্চাদের কানে কম শোনা ও কথা বলতে না পারার মত সমস্যার ঝুঁকি থাকে, জন্মের পর আয়োডিনে অভাব হলে বাচ্চা ক্রমশ জড়বুদ্ধি হয়ে পড়ে। বাচ্চার বেড়ে উঠতে সমস্যা হয়। বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে শিশুটি ডোয়ার্ফ বা বামন হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া চুল ঝরে যাওয়া, ওজন বাড়া, ত্বক খসখসে হয়ে যাবার মত সমস্যা হয়।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, কোন কোন খাবার থেকে আমরা কতটা আয়োডিন পেতে পারি। ১/৪ চা চামচ লবণ থেকে মেলে ৯৫ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন, ১ পিস সামুদ্রিক মাছে ৬৫০ মাইক্রোগ্রাম, ১ টা কলায় ৩ মাইক্রোগ্রাম, ১ টা বড় ডিমে ১২ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন পাওয়া যায়। এছাড়া চিংড়ি, কাঁকড়া, মাংস, সমুদ্রের সবরকম মাছ ও অন্যান্য সি ফুড আর দুধেও আয়োডিন পাওয়া যায়।

আমরা অনেকেই জানি না কোন খাবারে কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। আয়োডিনের প্রধান উত্‍স হলো সামুদ্রিক মাছ ও প্রাণী। আয়োডিনের অভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য আয়োডিন যুক্ত লবণ ও সামুদ্রিক মাছ খাওয়া দরকার।

(ঢাকাটাইমস/২২ অক্টোবর/আরজেড/এজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দাঁড়িয়ে থাকা নসিমনকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ১ 
পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় যুবকের মৃত্যু 
ঈদুল আজহায় ৯৯৯-এ ১৫ হাজারের বেশি কল, মারামারিতে ৪১০২ অভিযোগ
ম্যাচ উইনার হিসেবে দলে অবদান রাখতে প্রস্তুত নাহিদ রানা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা