ঝুট কাপড়ে কম্বল তৈরিতে অভাব দূরের চেষ্টা

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ
  প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৩২
অ- অ+

স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না। তাই ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন মধ্যবয়সী রহিমা বেগম। ছেলে সন্তানকে নিয়ে কোনরকম খেয়ে পরে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছিলেন তিনি। অভাবের কারণে নিজের বুড়ো বাবা-মার দিকেও তেমন খেয়াল দিতে পারছিলেন না তিনি। তাই রহিমা শুরু করলেন মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে কম্বল তৈরির কাজ।

রহিমার মতো ছকিনা, জরিমন, রোমেলারা ইউজেডজিপির সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিয়ে গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় জোড়া তালি দিয়ে তৈরি করছে কম্বল। শীতের আগমনী বার্তায় সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার কম্বল গ্রাম হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলো সরগরম হয়ে উঠেছে। এসব গ্রামের নানা বয়সী মানুষ নতুন-পুরোনো কম্বল তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের কাজের চাপ বাড়ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেও দম ফেলতে পারছেন না তারা।

যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত উপজেলা কাজিপুর। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভাঙনে ফসলি জমি হারানো যেন এখানকার বাসিন্দাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকে বিকল্প কর্মসংস্থানেই সংসার চালাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় দুই দশক আগে উপজেলার ছালাভরা কুনকুনিয়া গ্রামের আব্দুল খালেক প্রথমে ঝুট কাপড় দিয়ে কম্বল তৈরির কারখানা শুরু করেন। পরে বর্শীভাঙ্গা গ্রামের ছাইদুল হকও শুরু করেন এই ব্যবসা। তারা ঢাকা থেকে গার্মেন্টসের পরিত্যক্ত ঝুট কাপড় নিয়ে এসে জোড়া তালি সেলাই করে তৈরি করেন কম্বল। সাইকেলে করে সেই কম্বল বিক্রি শুরু হয় গ্রামে গ্রামে। ধীরে ধীরে এ ব্যবসা অন্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।

উপজেলার শিমুলদাইড়, বর্শীভাঙ্গা, সাতকয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মুসলিমপাড়া, মানিকপটল, গাড়াবেড়, রশিকপুর, হরিনাথপুর, ভবানীপুর, মাথাইলচাপড়, রৌহাবাড়ী, পলাশপুর, বিলচতল, লক্ষ্মীপুর, বেলতৈল, চকপাড়া, চালিতাডাঙ্গা, কবিহার ও হাটশিরা গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ এখন কম্বল তৈরির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

মাইজবাড়ী ইউনিয়নের ছালাভরা গ্রামের কম্বল তৈরির কারিগর আমিনুল ইসলাম জানান, গার্মেন্টসের ফেলে দেওয়া ঝুট কাপড় বিশেষ কায়দায় সেলাই করে তৈরি করা হয় কম্বল। অনেকে ঢাকা থেকে ঝুট কিনে আনেন। সেলাইয়ের কাজে পরিবারের সবাই সাহায্য করে। তবে কয়েক বছর ধরে নতুন কাপড় কেটেও চলছে কম্বল তৈরির কাজ। নতুন সেলাই মেশিনও ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমানে একটি লেপ তৈরি করতে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা লাগে। অথচ একটি ঝুট কম্বল ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। ব্লেজার তৈরির পরিত্যক্ত ঝুট জোড়া দিয়ে বানানো কম্বল একদিকে যেমন হালকা, অন্যদিকে প্রচণ্ড শীতেও এ কম্বল বেশ গরম ও আরামদায়ক। গত বছর এই ঝুট প্রতি কেজি ১০-১২ টাকায় কেনা যেত। বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরমের সময় প্রতি কম্বলের মজুরি ২০ টাকা এবং শীতের সময় ৪০ টাকা। অনেক নারী গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে ফাঁকে এই কম্বল সেলাই করেন। তারা প্রতিদিন কম্বল সেলাই করে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।

ঝুট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঝুট কম্বলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর চাহিদা বর্তমানে দেশব্যাপী। এখানকার কাপড় সঠিকভাবে বিক্রি ও অর্ডার পেলে নারীরা দিনে যা আয় করতে পারে তা দিয়ে তাদের সংসার ভালোই চলার কথা। কিন্তু ঝুট কাপড় ভারতে যাচ্ছে। এখন বেশি টাকা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী ঝুট পাওয়া যাচ্ছে না।

মাইজবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই শিল্পকে আমি আর্শীবাদ জানাই। ঝুটের কম্বল তৈরির শিল্পটি কাজিপুরের মানুষের ভাগ্য বদলে বড় ভূমিকা রাখছে। এই শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেলে ব্যাংক থেকেও ব্যবসায়ীরা অনেক ধরনের সুযোগ পাবে। এতে ব্যবসার প্রসারসহ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, এলাকাবাসীর দাবি অনুযায়ী শিমুলদাইড় বাজারে কর্মসংস্থান ব্যাংকের একটি শাখা অল্প দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কেনা বেশির ভাগ কম্বল এখান থেকে সরবরাহ করা হয়। কম্বল ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাজীপুরের কম্বলের বহুল প্রসারের জন্য দেশের বিভিন্ন উপজেলার ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ পৌরসভায় শেষ হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ: অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল মারল কে?
কিছু ঘটলেই যমুনায় যাওয়ার প্রবণতা সহ্য করা হবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ 
সিলেট থেকে ৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনায় গেল প্রথম হজ ফ্লাইট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা