প্রথম আলোতে আপনাকে খুঁজব

উৎপল শুভ্র
  প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৫২
অ- অ+

সংবাদপত্রে আমি প্রথম যাঁর রাজনৈতিক কলামের নিয়মিত পাঠক ছিলাম, তাঁর নাম জেনেছি অনেক পরে। 'সময় বহিয়া যায়' বলে যে 'গাছপাথর' আমাদের নিয়মিত সতর্ক করে দিতেন, কল্পনায় তাঁর একটা ছবি আমি এঁকে নিয়েছিলাম। কতই বা বয়স তখন! যে বয়সের কথা বলব, সেই বয়সে গাছপাথরের 'সময় বহিয়া যায়' কলাম ভালো লাগার কথা বললে কারও বিশ্বাস না হওয়াই স্বাভাবিক। বরং প্রকারান্তরে তা নিজেকে 'প্রডিজি' বলে দাবি করার একটা অপচেষ্টা বলে মনে হতেই পারে।

এই দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে পারা না-পারার সঙ্গে যেহেতু কোনো বৈষয়িক লাভক্ষতির হিসাব জড়িত নয়, তাই বিশ্বাস করলে করতেও পারেন। প্রডিজির বদলে ইঁচড়ে পাকাই বলুন না হয়!

তা-ই যদি হয়ে থাকি, এর দায় আমার বাবুর (বাবাকে আমরা তিন ভাইবোন এই নামেই ডাকতাম)। ফাইভে না সিক্সে ওঠার পরই বাবু্ আমার জন্য পত্রিকা পড়া বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন। তা প্রায় পাঠ্য পুস্তকের মতোই পড়তে হতো। কারণ বাবু মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা নিতেন। হেলাফেলার পরীক্ষা না। কারও কাছে অবিশ্বাস্য লাগতেই পারে, পরীক্ষায় 'ফেল' করলে শুধু ভর্ৎসনা নয়, শরীরেও কিছু প্রাপ্তিযোগ ঘটত। এ নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে। এর একটা বলি। তা বলার কারণ শারীরিক নিগ্রহের সবচেয়ে বড় ঘটনাটার সঙ্গে এটা জড়িত। রবার্ট ম্যাকনামারা নামে এক ভদ্রলোকের ওপর যে কারণে আমার অনেক দিন খুব রাগ ছিল।

এই ম্যাকনামারা বলতে গেলে প্রায় অনন্তকাল বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সিক্স না সেভেনে পড়ার সময় এই ম্যাকনামারা সংক্রান্ত কোনো একটা খবর ছিল পত্রিকায়। বাবু অফিস থেকে ফিরে পত্রিকা হাতে নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'অ্যাই, বল্ তো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের নাম কী?'

তখন পর্যন্ত ব্যাংক বলতে আমি মূলত রং বুঝি। সোনালী-রূপালী...। অগ্রণী-জনতা মনে হয় তখনো আমার জানাশোনার সীমানায় ঢোকেনি। সারা বিশ্বের সম্মিলিত উদ্যোগেও যে ব্যাংক হতে পারে, এটা আমার চিন্তারও অগম্য। তাঁর ‘মেধাবী’ সন্তানের জন্য সেট করা হাই স্ট্যান্ডার্ডের কারণে বাবু স্বাভাবিকভাবেই আমার বয়স-টয়স কোনো বিবেচনায় নিলেন না। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের নাম না জানাটাই তাঁর কাছে সামান্য মারধোর করার জন্য যথেষ্ট অপরাধ বলে প্রতিপন্ন হতো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অস্তিত্ব সম্পর্কেই অজ্ঞানতা সেটির তীব্রতা ও সময়কাল আরেকটু বাড়িয়ে দিল। ম্যাকনামারা নামটা যে কারণে আমি জীবনেও ভুলিনি। নামটাও অবশ্য মনে রাখার জন্য খুব সুবিধাজনক।

প্রসঙ্গটা এলো ওই কাঁচা বয়সেই পত্রিকার কলাম পড়ে কলাম লেখকের ভক্ত হয়ে যাওয়াটাকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করতে। আমার বাবুর নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক মতবাদে প্রবল বিশ্বাসের কোনো প্রমাণ পাইনি। কিন্তু কেন যেন আশেপাশের প্রায় সব বাসায় ইত্তেফাক রাখা হলেও আমাদের বাসায় রাখা হতো সংবাদ। নইলে ওই কচি বয়সে গাছপাথরের সঙ্গে পরিচয় হয় না।

স্কুল-কলেজ জীবন কেটেছে মফস্বলে। গাছপাথরের পরিচয় পেয়েছি তাই অনেক দেরিতে। যত দূর মনে পড়ে খুলনা বিআইটিতে (এখন যা কুয়েট) পড়তে যাওয়ার পর। আশ্চর্যই বলতে হবে, আমার কল্পনায় আঁকা ছবিটার সঙ্গে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারের অনেকটাই মিল। এখনো স্যারের লেখা পেলেই আমি পড়ি। পাঠক হিসাবে যেহেতু আমি সর্বভূক শ্রেণির, তাই কারও লেখা পড়া মানেই আমি তাঁর অনুরাগী পাঠক বলে ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। বরং এভাবে বলা ভালো, কারও অনুরাগী পাঠক হলে আমি তাঁর লেখা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার এই শ্রেণিতে পড়েন। এত বছর ধরে নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মানুষের মুক্তির একমাত্র পথের ব্যাপারে স্যারের এমন নি:সন্দেহ থাকাটা আমাকে খুব মুগ্ধ করে। মানুষটার লেখা-কথা আর কাজে যে কোনো বৈপরীত্য নেই, এরও হয়তো প্রচ্ছন্ন ভূমিকা আছে এতে।

শুধু রাজনৈতিক কলামেই লেখাটা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই বলে কৈশোর-তারুণ্যে আমার খুব প্রিয় আরও দুটি কলামের শুধু নাম উল্লেখ করেই ছেড়ে দিই। দুই সৈয়দের (শামসুল হক ও মনজুরুল ইসলাম) 'হৃদকলমের টানে' ও 'অলস দিনের হাওয়া' আমার সাহিত্য আস্বাদনের মনটা গড়ে তোলায় বড় ভূমিকা রেখেছে। বাসায় সংবাদ রাখা না হলে ‘গাছপাথর’-এর মতো সেই কৈশোরেই এই দুজনের সংস্পর্শেও যাওয়া হতো না।

রাজনীতি নিয়ে আমার খুব বেশি আগ্রহ নেই। কোনোকালেই ছিল না। ছাত্রজীবনে যে ছাত্র ইউনিয়নকে পছন্দ করতাম, তার মূলে ছিল সাম্যবাদের প্রতি সহজাত একটা টান আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অগ্রণী ভূমিকা। ছেলেমানুষী শোনাবে, ছাত্র ইউনিয়নের প্রতি আমার আগ্রহের সূচনা অপূর্ব দেয়াল লিখন দেখে। দেয়ালে লেখা ছাত্র ইউনিয়নের শ্লোগান এমন শৈল্পিক রূপ পেত যে, এটাকে 'চিকা মারা' বলা রীতিমতো অপরাধ বলে মনে হতো। সংস্কৃতি চর্চায় বাংলাদেশের পশ্চাদগামিতার সঙ্গে আমি কেন যেন ছাত্র ইউনিয়নের তুলনামূলক নিষ্ক্রিয়তার একটা যোগসূত্রও খুঁজে পাই।

গভীর রাতে লেখা শুরু করলে এই এক সমস্যা! কোত্থেকে যে কোথায় চলে যাচ্ছি! লেখাটা তো শুরু করেছিলাম আমার প্রিয় রাজনৈতিক কলামিস্ট (নাকি শব্দটা কলামনিস্ট?) নিয়ে। রাজনীতি এলো মনে হয় সে কারণেই। রাজনীতিতে বেশি আগ্রহ না থাকার পরও ‘গাছপাথর’ কলাম যেমন আগ্রহ নিয়ে পড়তাম, পরে দীর্ঘদিন একই রকম আগ্রহ নিয়ে পড়েছি আবদুল গাফফার চৌধুরীকেও। যত না রাজনীতি বুঝতে, তার চেয়ে বেশি তাঁর স্বাদু গদ্যের টানে। পড়তে শুরু করলে যা শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়।

আবদুল গাফফার চৌধুরী যখন প্রথম আলোতে নিয়মিত লিখতেন, তখন তাঁর কোনো লেখা পড়িনি, এমন হয়েছে বলে মনে হয় না। প্রথম আলোতে লেখা বন্ধ করে দেওয়ার পরও পড়া বন্ধ হয়নি, তবে একটু অনিয়মিত তো হয়েছেই। সেই অভাবটা আমি খুব একটা বোধ করিনি আমার ডাকনামের অর্থবোধক রঙের পোশাকে আবৃত এক ভদ্রলোকের কারণে।

আজকের কাগজ পত্রিকা বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে অনেক কারণেই এক বিপ্লবের নাম। উপ সম্পাদকীয় পাতাটাকে শুধুই পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের কর্মীদের 'দখল' থেকে মুক্ত করে শতফুল ফুটতে দেওয়ার ক্ষেত্র বানানো তার মধ্যে একটি। তা 'ফুল' একটু বেশিই ফুটেছে, প্রতিদিনই নিত্যনতুন ফুটেই চলেছে। একসময় বলা হতো, বাংলাদেশে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি। এখন সম্ভবত 'কবি'র বদলে অনায়াসে সেখানে 'কলাম লেখক' বসিয়ে দেওয়া যায়। খুবই স্বাভাবিক যে, সংখ্যা যতই বাড়ুক, নাম দেখলেই ‘লেখাটা পড়তেই হবে’ এমন ইচ্ছা জাগানো কলাম লেখক খুব বেশি নেই। থাকার কথাও না, সব সময়ই হাতে গোণা দুয়েকজনই এমন থাকেন। তাঁদের মধ্যেই একজন হুট করে চলে গেলেন। খবরটা শোনার পর থেকে মনটা এমন বিষন্ন হয়ে আছে যে, কী বলব!

সৈয়দ আবুল মকসুদ বিচিত্র এক মানুষ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠতা তো ছিলই না, কথাই হয়েছে জীবনে ছয়-সাতবার। প্রথম আলো অফিসেই বেশি। সেই আলাপচারিতারও বেশির ভাগই খুব সংক্ষিপ্ত। এটুকু জানাশোনার ভিত্তিতে তাহলে তাঁকে 'বিচিত্র মানুষ' বলে ফেলছি কিভাবে? সৈয়দ আবুল মকসুদ যে মানুষ হিসাবে আর দশজনের মতো ছিলেন না, সে জন্য তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার আমি কোনো প্রয়োজন দেখি না। এ জন্য তাঁকে একবার দেখাই যথেষ্ট। কে কী বলবে, কে কী বলছে, এ সব না ভেবে সেলাইহীন একটা সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে এতগুলো বছর কাটিয়ে দেওয়া একটা মানুষ বিচিত্র নয় তো কি! শেষ দিকে না এটা সবার চোখ সওয়া হয়ে গিয়ে তাঁর ট্রেডমার্কই হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু শুরুতে নিশ্চয়ই অনেক কৌতূহলী দৃষ্টি হুল ফুটিয়েছে গায়ে। কখনো কখনো নিশ্চয়ই তা তির্যক বাক্যের আকারও নিয়েছে। ওই পোশাক বেছে নেওয়ার কারণ যা-ই হোক, এমন কিছু করতে সাহস লাগে। গান্ধীজিও আজকের যুগে সেই সাহস করতেন কি না, ঠিক নিশ্চিত নই।

সৈয়দ আবুল মকসুদের কথা বললে যে কারও প্রথমেই ওই পোশাকটার কথা মনে হবে বলেই প্রসঙ্গটা তোলা, নইলে আমি তো অবশ্যই তাঁকে এ কারণে মনে রাখব না। মনে রাখব তাঁর লেখার জন্য। গবেষণাধর্মী অনেক কিছু তিনি করেছেন। বইও তো লিখেছেন কত বিচিত্র বিষয়ে। বুদ্ধদেব বসু থেকে শুরু করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে মওলানা ভাসানী.....বাঙালী মুসলমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দর্শনশাস্ত্র...। এর দু-তিনটা পড়েছিও। তবে আমার কাছে সৈয়দ আবুল মকসুদের সবচেয়ে বড় পরিচয়- অসাধারণ এক কলাম লেখক। মাত্রই গেলেন, অথচ এরই মধ্যে আমি তাঁর কলাম মিস করতে শুরু করেছি।

তা তাঁর কলাম এত পছন্দ করার কারণটা কী? মূল কারণ, তাঁর বৈঠকি ভাষা। তাঁর কলামে ফুটে বেরোনো জানাশোনার ব্যাপ্তি তো চমকে দিতই, তবে আমার সবচেয়ে পছন্দ ছিল তাঁর রসবোধ। নামেই ঘোষণা দিয়ে রম্য টাইপের যে কলামগুলো লিখতেন, শুধু সেগুলোতেই নয়, জটিল রাজনৈতিক-সামাজিক বিষয় নিয়ে লেখা তাঁর কলামেও হঠাৎ হঠাৎ এমন দু-একটা বাক্য পেয়ে যেতাম, যা পড়ে একাই হো হো হেসে উঠতাম। এতে কখনো কখনো একটু সমস্যাও হয়েছে। একাধিকবার এই কাণ্ড ঘটতে দেখে আমার মস্তিষ্কের সুস্থতা সম্পর্কে আমার স্ত্রীর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।

সন্দেহ কথাটা যেহেতু এলোই, বলেই ফেলি, মকসুদ ভাইয়ের সঙ্গে সামান্য যতটুকু কথাবার্তা হয়েছে, তাতে আমার মনেও কখনো কখনো সন্দেহ জেগেছে, এই লোকটাই কি অমন মজা করে লেখে!

ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট বলে যে একটা কথা আছে না, এটা এর একটা কারণ হতে পারে। সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক পরিচয় তাঁর কলামের অনুরক্ত পাঠক হিসাবেই। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র যখন বাংলাদেশ আর চীন দুই দেশের বন্ধুত্বের ঘোষণা করত, সেই সময়ের কথা। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে খাওয়াদাওয়া চলছে। বিশাল হলরুমের এক দরজায় দেখি সৈয়দ আবুল মকসুদ একা দাঁড়িয়ে। আমি এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম। তিনি নাম বলতেই চিনলেন অথবা ভদ্রতাবশত চেনার ভান করলেন (দ্বিতীয় সম্ভাবনাটা যে শূন্য, তা অবশ্য মকসুদ ভাইকে আরেকটু চেনার পরই বুঝতে পেরেছি)। আমি ওনার কলাম নিয়ে আমার মুগ্ধতার কথা জানালাম। কোনো লেখা ভালো লাগলে আমি তা থেকে টুকটাক উদ্ধৃত করতে পারি। সেটাও করলাম। এতে যে কেউই খুশি হবেন। মকসুদ ভাইও হলেন। তবে সেই খুশির রেশ বেশিক্ষণ থাকল না। আমার সম্পর্কে দু'একটা কথা জিজ্ঞেস করার পর তিনি নিজের ব্যক্তিগত নানা অপ্রাপ্তি নিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবিষ্কার করলাম, জগতে প্রায় সবার ওপরই ওনার কোনো না কোনো কারণে রাগ। সেই রাগের প্রকাশভঙিতে এমন একটা তিক্ততা ফুটে বেরোচ্ছে যে, আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। খারাপ হলো দুই কারণে। প্রথমত, একজন ভক্ত আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছে, লেখার এমন প্রশংসা করছে; প্রথম পরিচয়েই তাঁকে ও সব বলার কি দরকার! তার ওপর রাগের কারণগুলোর বেশির ভাগই যেখানে দেখছি ক্ষমার্হ। মন খারাপ হওয়ার দ্বিতীয় কারণ, এমন কৌতুকের দৃষ্টিতে সবকিছু দেখতে পারার অসীম ক্ষমতার পরিচয় যাঁর লেখায়, তাঁর মধ্যে কেন এমন তিক্ততার বাস!

হতে পারে, সেদিন কোনো কারণে তাঁর মনমেজাজ খিঁচড়ে ছিল। অথবা কে জানে, হয়তো তিনি মানুষটাই ছিলেন অমন। তাতে আমার কিচ্ছু আসে-যায় না। আমি শুধু বলতে পারি, সৈয়দ আবুল মকসুদকে আমি খুব মিস করব। মানে পত্রিকায় (পত্রিকা বলতে তো প্রথম আলোই, শুধূ সেখানেই তো লিখতেন) তাঁর কলাম খুব মিস করব। রাজনৈতিক কলাম দিয়ে লেখাটা শুরু হয়েছিল। তা দিয়েই শেষ করি। কারণ এখন আমি যে ঘোষণাটা করতে যাচ্ছি, এর সঙ্গে এটির সম্পর্ক আছে। সেই ঘোষণা শুধুই আমার পাঠক সত্তার অধিকার থেকে, কারও ভিন্নমত থাকতেই পারে। থাকাটাই স্বাভাবিক। থাকলে তা প্রকাশ করুন। ‘তুই কোথাকার মাতব্বর’ বলে গালমন্দ করবেন না প্লিজ। কথা দিলেন ধরে নিয়ে তাহলে বলেই ফেলি-- আমার চোখে সৈয়দ আবুল মকসুদ গত দশ-পনের বছরে বাংলাদেশের সেরা কলাম লেখক। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কলামের সম্পর্ক আছে, বলছিলাম না? সম্পর্কটা হলো, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত কলাম লেখক আছেন। আমার প্রিয় দুটি নাম তো আগেই বলেছি। এর আগেও কিংবদন্তিসম সব কলাম লেখকের কথা শুনেছি, যৎসামান্য পড়েছিও। তবে বলতে গেলে তাঁদের সবাই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আবদুল গাফফার চৌধুরীর মতো মূলত রাজনৈতিক কলাম লেখক। এখানেই অনন্য হয়ে যাচ্ছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। রাজনৈতিক কলাম তো লিখেছেনই, লিখেছেন আরও কত বিচিত্র বিষয়েও এবং সব লেখাতেই ওই পড়ার আনন্দটা কমন থেকেছে। এমন আর কাউকে তো আমি দেখি না।

গত কিছুদিন খেলার বাইরে যা কিছু লিখছি, সবই দেখছি শোকগাথা। যা লেখার সময়ও একটা জিনিস কমন থাকছে। আফসোস! আহা রে, মানুষটা বেঁচে থাকতে কেন তাঁকে এই ভালো লাগার/ভালো বাসার কথাটা বলিনি!

সৈয়দ আবুল মকসুদ এখন কোথায় আছেন, জানি না। তবে এটা তো নিশ্চিতই জানি, যেখানে আছেন, কোনো তিক্ততার হাতই সেখানে পৌঁছায় না। সেখানে হয়তো, হয়তো অপার শান্তি... লিখতে লিখতে মানুষটা চোখে ভাসছেন। চশমার কাচের ওপাশে সন্দিগ্ধ দৃষ্টি, সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা ওই সাদা কাপড়...

পোশাকটাকেও এখন কেমন প্রতীকি বলে মনে হচ্ছে। এই দিনটির রিহার্সাল তো তিনি সেই কবে থেকেই দিয়ে আসছিলেন! (লেখাটি সানুমতিতে ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া)

লেখক: প্রখ্যাত ক্রীড়াসাংবাদিক। প্রথম আলোর সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এবার বড় ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ, সিরিজ পাকিস্তানের
চাঁদপুরে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যুবদল নেতা নয়নের দুঃখ প্রকাশ
অসুস্থতার কারণে রাকিব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণবিশ্রামে আছেন: ছাত্রদল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা