‘টক্সিক মানুষ’ কীভাবে অন্য মানুষের ক্ষতি করে

আচ্ছা আপনি কি শুধু কথা শুনে কখনো অসুস্থ হয়েছিলেন? একবার বুয়েটের সোহরাওয়ার্দী হলে এক মেয়ে বমি করছিল। সবাই ভাবলো-কেইস খারাপ। আসলে আমাদের এক ছেলের ৩ গার্লফ্রেন্ড ছিল। সেই ৩ জন যখন একসাথে হলে এসে একজনের জন্য খবর নিতে আসলো, ঝামেলা লাগলো তখন।
মেয়েটাকে বমি করতে দেখে আমরা কেইস খারাপ ভেবেছিলাম এই কারণে যে, যে ছেলে একসাথে ৩ মেয়ের সাথে প্রেম চালাতে পারে, সে তাহলে আরও অনেক কিছুই করতে পারে। আসলে কেইস খারাপ বলতে আমরা যা ভাবছিলাম তা নয়। এমন প্রতারণার ঘটনায় মেয়েটা শক পেয়েছিল এবং সে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। বাকি দুই মেয়ে ছেলেটাকে মারার প্রস্তুতি নিলেও এই মেয়েটি প্রচন্ড বমি করতেই থাকে।
এর বহু বছর পরে আমি একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। শুধু কথা শুনে। ঠিক নিতে পারছিলাম না। একটা মেয়ে যখন আমাকে বলল, খাজা ভাই, আপনি আমার সম্পর্কে কি এইসব কথা বলেছেন?
কথাগুলো এত নোংরা ছিল, এত জঘণ্য ছিল-আমি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ি কথা শুনে। জাস্ট ফিলিং সিক টু মাচ। I was just vomiting practically. আমার মনে হলো আমি একটা ম্যাচিউরড মানুষ, কথা শুনে আমার কেন ভোমিটিং হবে? আমার জীবনে এমন অভিযোগ শুনি নি এবং যেসব কথা বলা হয়েছে, সেগুলো যে ভাষায় বলা হয়েছে আমি সে ভাষাতেও অভ্যস্ত না। প্রতিটা মানুষের কথা বলার প্যাটার্ন আলাদা।
আমি একটা চিরুনি অভিযান করলাম। আমার কাছাকাছি, আমার পেরিফেরিতে এত নোংরা মানুষ কীভাবে আসলো? একটা নোংরা মানুষ অনেক মানুষকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে।
টক্সিক মানুষ কীভাবে অন্য মানুষের ক্ষতি করে, সর্বনাশ করে - অনেকের না জানাটা খুব স্বাভাবিক। আমাদের দুর্বল শিক্ষা পদ্ধতিসহ একটা গরিব দেশের মানুষ শিক্ষিত হলেও আমাদের অনেক ঘাটতি থেকে যায়।
দুনিয়ার সেরা ইউটিউবার পিউডিপাই এর একটা কথা ভালো লেগেছিলো - How to deal with toxic people? Just delete them, be hard.
তবে আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলে, মানুষটার প্রতি হার্ড না হয়ে অ্যাকশনের প্রতি হার্ড হন। ফ্রাংকলি স্পিকিং - বাংলাদেশে এই মনোবিজ্ঞান চালানো কঠিন। না থামালে এখানে টক্সিক পিউপলরা আপনার সব সর্বনাশ করে ফেলবে। টক্সিক পিউপলদের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যে ধরনের সামর্থ্য দরকার, সেটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, পরিবার, রাষ্ট্রের কোথাও থেকে আমরা অর্জন করতে পারছি না।
বাংলাদেশে টক্সিক পিপল আছে। আমাদের আশেপাশেই আছে। এই সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচুর আছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে বাংলাদেশে খুবই কমন একটা ব্যাপার হচ্ছে - "ব্রিগ্রেডিং"। এটা কী? এটা হচ্ছে গ্রুপ বেঁধে কোন একটা গ্রুপ বা মানুষকে সাইজ করা। অব্যাহত রিপোর্ট করে সেই আইডির বারোটা বাজানা, সেই চ্যানেলের বারোটা বাজানো। এটা বাংলাদেশ গত এক দশক যাবত ব্যাপকভাবেই হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রুপ অন্য গ্রুকে বা মানুষকে সাইজ করার জন্য দিনরাত রিপোর্ট করে যাচ্ছে।
এগুলো যারা করছে এবং করাচ্ছে, সবাই হচ্ছে টক্সিক পিপল। আত্মীয় স্বজনের মধ্যেও টক্সিক পিপল পাবেন। একটা দুইটা থাকলেই হলো। সব আত্মীয়দের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে রাখবে আর সবাইকে নিচে নামিয়ে আনবে।
টক্সিক পিপলরা চেতনে বা অবচেতনে কী চায়? অনেক কিছুই চায়, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, তারা চায়- আপনিও তাদের মতো লেভেলে চলে আসেন, মানে টক্সিক হয়ে যান। টক্সিক পিপলদের ব্রেইন এমনভাবে টিউনড হয়ে যায়, এদের সুস্থ করতে হলে সবচেয়ে ভালো ডাক্তার, মনোবিজ্ঞানী লাগবে।
তো আমি আপনি কী করতে পারি? পারলে তাদের সুস্থ করেন, অনেক কঠিন কাজ। সুস্থ না করতে পারলে? আপনার আমার সময় যদি না থাকে এবং সেটি যদি আপনার আমার দায়িত্বে না পড়ে? Just delete them from your mental regime. যদি আপনার আমার সার্কেলে, আপনার আমার মনোজগতে একজনও টক্সিক পিপল থাকে,
তাহলে আমাদের ডিটক্সিফিকেইশন খুব দরকার। মনোজগতের ডিটক্সিফিকেশন অনেক সময় সাপেক্ষ এবং কঠিন।
প্রশ্ন হলো যদি সার্কেলে বেশিরভাগ টক্সিক পিপল থাকে? তাহলে? আপনি ইতিমধ্যেই নিজের অজান্তেই টক্সিক পিউপল হয়ে গেছেন অনেকটা। আপাতত কী করা যায়? দেখুন বন্ধু তালিকায় টক্সিক পিউপল আছে কিনা? থাকলে কী করবো?
Direct Action. Either you arrange treatment for them or just delete them. If don't like any option, what can happen? Toxic people will turn you as a toxic person, no doubt.
জীবনটা ছোট। পরিচ্ছন্ন জীবন আমাদের অধিকার এবং তা পাওয়া সম্ভব।
লেখক: প্রকৌশলী

মন্তব্য করুন