ভাইকে নৃশংস খুনের পর নিজেই হন মামলার বাদী!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:২৫ | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:০০

পারিবারিক বিরোধের জেরে বড় ভাই স্বপন মিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন রিপন মিয়া। এক পর্যায়ে বড় ভাইকে খুনের পরিকল্পনা করেন। চুক্তি হয় কয়েকজন খুনির সঙ্গে। নিজেও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। অবশেষে সহযোগীদের নিয়ে নিজেই নৃশংসভাবে খুন করেন বড় ভাইকে। দুদিন পর বড় ভাইয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যার তদন্তে নেমে বাদী রিপন মিয়াকেই হত্যার মূল আসামি হিসেবে আবিষ্কার করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় রিপন মিয়া ছাড়াও আব্দুর রব, ইমান আলী ও সবুজকে গ্রেপ্তার করেছে পিআইবি।

রবিবার পিবিআইয়ের সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু ইউছুফ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে এসব তথ্য।

পিবিআই জানায়, পারিবারিক, জমিজমা নিয়ে বিরোধ এবং নেশা করতে বাধা দেওয়ায় এসিড মেরে, পানিতে ডুবিয়ে ঘাড় ভেঙে নৃশংসভাবে স্বপন মিয়াকে হত্যা করেন তার ছোটভাই রিপন মিয়া। পরে তিনি নিজেই বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি মামলা করেন।

পিবিআইয়ের তদন্তে জানা যায়, স্বপন মিয়ার চার ভাই ও এক বোন। বড় ভাই খোকন মিয়া সৌদি প্রবাসী, স্বপন মিয়া স্থানীয় বাজারে চা বিক্রেতা, আর আসামি মো. রিপন মিয়া ভুক্তভোগীর ছোট ভাই। রিপন মালয়েশিয়া প্রবাসী ছিলেন। দুই থেকে তিন বছর আগে তিনি মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন। করোনার কারণে তিনি বিদেশে না যেতে পেরে বাড়ির পাশে মাছের খামারসহ কৃষি জমি আবাদ করেন। তাদের সবার ছোট ভাই সোহেল মিয়া একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। স্বপন মিয়াকে হত্যার তিন দিন পর তার ছেলের জন্ম হয়। তাই তার স্ত্রী হত্যা মামলার বাদী হতে পারেননি।

পিবিআইয়ের কিশোরগঞ্জ জেলার (ইউনিট ইনর্চাজ) পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেনের তত্ত্বাবধানে মো. রিপন মিয়া, আব্দুর রব, ইমান আলী এবং সবুজকে গত শুক্রবার নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআইয়ের একটি টিম। গ্রেপ্তারের পর রিপন মিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার বড় ভাই স্বপন মিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। শনিবার কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে আরও পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, আসামি মো. রিপন মিয়া নিয়মিতভাবে তার পরিচিত কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করতেন। নিহত স্বপন মিয়ার সঙ্গে রিপনের পারিবারিক বিভিন্ন কারণসহ পৈতৃক জমিজমা বণ্টন নিয়ে বিরোধ ছিল। রিপনকে নেশা করতে বাধা দিতেন বড় ভাই স্বপন। ওই নেশার বিষয়টি স্বপন তার মাকে নিয়মিত জানানোর কারণে রিপন ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ মধ্যে বাড়ি নতুন রাস্তা নির্মাণের খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা রিপনকে দেওয়ার কথা থাকলেও স্বপন দেননি। এতে বড় ভাইয়ের ওপর আরও ক্ষিপ্ত হন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার পথ খুঁজতে থাকেন।

পিবিআই জানায়, গত ২৫ জুলাই রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে রিপন মিয়াসহ তার পূর্ব পরিচিত অপরাপর আসাসি আব্দুর রব, ইমান আলী, সবুজ ও বুলবুল প্রতিবেশী আলম (আলকাছ) মিয়ার পুকুর পাড়ে বসে স্বপনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এদের মধ্যে বুলবুল চুরি, ডাকাতি, খুন কারবারির সঙ্গে জড়িত। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ জুলাই রিপন মিয়ার দেওয়া ২০০ টাকায় আসামি ইমান আলী ও বুলবুল ভৈরব বাজার বাইন্নাপট্রি থেকে এসিড কিনে এনে রিপন মিয়ার কাছে দেন। রিপন মিয়া এসিডের বোতল তার বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে রাখেন।

২৬ জুলাই রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে এসিডের বোতলসহ রিপন মিয়া, ইমান আলী, সবুজ, বুলবুল, আব্দুর রব ও গাড়িচালককে নিয়ে লতিফ মাকের্টের ভেতরে অবস্থান করেন। স্বপন মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে লতিফ মার্কেটের সামনে এলে ওই আসামিরা সবাই স্বপনকে ঘিরে ধরেন এবং বুলবুল ও সবুজ স্বপনের পেছন থেকে গামছা দিয়ে নাকে-মুখে প্যাচিয়ে ধরেন। ইমান আলী ও আব্দুর রব স্বপনকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নেন। গাড়িতে উঠার পর ছোট রাজাকাটা কবর স্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্বপন মিয়া বাঁচার জন্য কৌশলে তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে দৌড় দেন। তখন আসামি ইমান আলী তার হাতে থাকা এসিডের বোতল স্বপন মিয়ার নাকমুখ লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন। ওই এসিড স্বপন মিয়ার চোখ, মুখ ও নাকে লাগে।

এক পর্যায়ে স্বপন মিয়া জোরে চিৎকার দিতে দিতে দৌড়ে পাশে বিলের পানিতে লাফ দেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই পাঁচজনও বিলের পানিতে লাফ দিয়ে স্বপনকে ধরে ফেলেন। আসামিরা স্বপনকে পানির নিচে চাপ দিয়ে ধরে রাখেন। ওই সময় রিপন, ইমান আলী এবং আব্দুর রব স্বপনের হাত পা জোর করে ধরে রাখেন। পরে বুলবুল ও সবুজ মিয়া স্বপনের ঘাড় ভেঙে ফেলেন। এতে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে ওই আসামিরা গাড়ি চালকের সহযোগিতায় স্বপনের লাশ বিল থেকে উঠিয়ে গাড়িতে তোলেন। লাশটি ৫০ থেকে ৬০ গজ দূরে নিয়ে একটি কালভার্টের নিচে রেখে আসেন। পরে তারা পালিয়ে যান।

পিবিআই জানায়, আসামি রিপন মিয়া তার বড় ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা করার সময় সবুজকে পাঁচ হাজার টাকা দেন। অপারেশন সফল হলে প্রত্যেক আসামিকে খুশি করে দেওয়ার কথা বলেন। ২৮ জুলাই স্বপনের লাশ কালভার্টের কাছে পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় ভৈরব থানায় রিপন বাদী হয়ে তিনজনের উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। পিবিআইয়ের কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।এছাড়া তারা ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে। তদন্ত চলাকালে বাদী রিপন মিয়ার আচরণে সন্দেহ হয় পিবিআইয়ের কিশোরগঞ্জ জেলার ইউনিটপ্রধানের। পরে মামলাটি পিবিআই সিডিউলভুক্ত হওয়ায় গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মোহাম্মদ সাখরুল হক খানের উপর তদন্তভার দেওয়া হয়। সেই তদন্ত করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে রিপনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এএ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে পেথিডিন বানাতেন তারা

অনলাইনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎকারীকে গ্রেপ্তার করল এটিইউ

জবিতে যৌন হয়রানি: জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আরেক ছাত্রীর অভিযোগ ডিবিতে

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ফোন বানিয়ে অর্ধেক দামে বিক্রি করতেন তারা: পুলিশ

বাইক চালককে হত্যার পর মুখে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় ছিনতাইকারীরা

খিলক্ষেতে বাসার ছাদে নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ, পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

অপরাধের ‘নতুন ধরন’: রিমোট দিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ীদের ঠকাতেন তারা

অবন্তিকার আত্মহত্যা: সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীর সংশ্লিষ্টতা আছে: ডিএমপি

ঘুস না পেয়ে শিশু হাসপাতালে রোগীর স্বজনকে মারপিট, দুই আনসার গ্রেপ্তার

অবন্তিকার মৃত্যু: জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আটক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :