সম্ভাবনার সমুদ্রতীরে ৩১তম বিসিএস ক্যাডারদের মিলনমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২১, ২০:০৫ | প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২১, ১৭:১৩

পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজারে আগ্রহ নিয়ে মানুষ ছুটে গেলেও অবকাঠামোগত ও পরিকল্পিত উন্নয়ন না হওয়ায় ঘুরতে গিয়ে অনেকে হতাশ হয়েছেন এতদিন। কারণ অতীতে সমুদ্রবেষ্টিত কক্সবাজারকে ঘিরে ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের আমলে কক্সবাজারের সার্বিক উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, যার বাস্তবায়ন এখন জোরকদমে চলছে। একইসঙ্গে সমুদ্রভিত্তিক ব্লু ইকোনমির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য সরকার হাতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ।

এসব কারণেই অপার সম্ভাবনার সমুদ্রকে ঘিরে নেওয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখতে কক্সবাজার ছুটে গিয়েছিলেন ৩১তম বিসিএস ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।

কক্সবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও রামুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা অতিথিদের বিমানবন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

বিভিন্ন ক্যাডারের এসব সদস্য স্বচক্ষে দেখেছেন, সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) বা বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট। শুধু তাই নয়, বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় স্থান পেতে যাওয়া কক্সবাজার বিমানবন্দরও ঘুরে দেখেছেন এসব কর্মকর্তা। যেখানে বর্ণিল আলোয় সমুদ্র ছুঁয়ে ওঠানামা করবে বড় বড় উড়োজাহাজ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি হবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করলেও একসঙ্গে বিভিন্ন ক্যাডারের সদস্যরা কক্সবাজার ঘিরে সরকারের এমন নানা উদ্যেগ স্বচক্ষে দেখে অভিভূত হয়েছেন। অভিমত দিয়েছেন অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙা করতে ব্লু-ইকোনমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের জন্য রয়েছে এ অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর এক সুবর্ণ সুযোগ। কারণ ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অফুরন্ত সম্পদের ভাণ্ডার বঙ্গোপসাগরের তীরে।

সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগাতে কক্সবাজার ঘিরে সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের বেকারত্ব দূর হবে, অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াবে।

বিভিন্ন গবেষণার প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় শুধু মৎস্যসম্পদ আহরণ থেকেই বছরে এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। সামুদ্রিক মাছকে কেন্দ্র করে একটি শিল্পও গড়ে তোলা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বছরে প্রায় ৪৭৫ জাতের ৮০ লাখ টন মাছ ধরা হয়। গবেষণার মাধ্যমে ঠিকমতো মৎস্যসম্পদ আহরণ সম্ভব হলে এর পরিমাণ দেড় কোটি টন পর্যন্ত উন্নীত করা সম্ভব। এসব সামুদ্রিক মাছের তেল বিভিন্ন ধরনের উপাদেয় খাদ্যপণ্য এবং জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

দেশের প্রথম ও একমাত্র সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটটি রামু উপজেলার জঙ্গল গোয়ালিয়া পালংয়ে অবস্থিত। সমুদ্রবিষয়ক গবেষণা ও দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে অনেকটা নীরবেই দেশের সমুদ্র সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবহার নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে দুই দিনের সফরে এছাড়াও তারা ঘুরে দেখেন মেরিন ড্রাইভের পাশে গড়ে ওঠা মিনি বান্দরবন। চোখ জুড়িয়ে যাওয়া এ জায়গাটি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে 'মিনি বান্দরবন' নামে পরিচিতি হলেও স্থানীয়দের কাছে এটি ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ নামে পরিচিত।

নিরিবিলি পরিবেশ আর প্রাণখোলা স্নিগ্ধ বাতাসের আস্বাদন পাওয়া যায় এই মিনি বান্দরবনে।

এছাড়াও সফরকালে তারা ঘুরে দেখেন কক্সবাজার বিমানবন্দর। সম্প্রতি বিমানবন্দরটির রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে নতুন ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে- যার ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোইং ৭৭৭ ও ৭৪ এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। এর ফলে এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে।

হোটেল রয়েল টিউলিপে অবস্থান শেষে শুক্রবার বিকালে তারা ঘুরে দেখেন বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কক্সবাজারে গড়ে তোলা ‘রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়াম’। যেখানে সাগরের বিভিন্ন প্রাণী ও বিলুপ্ত মাছ সংরক্ষণের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য জাদুঘরের আদলে এটি তৈরি হয়েছে। শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, সাগরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী সম্পর্কে জানার একটি শিক্ষাকেন্দ্রও এই অ্যাকুরিয়াম। এই ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়ামের সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বাইরে। এ কারণে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে এই অ্যাকুরিয়াম যোগ করেছে নতুন মাত্রা। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটক এই অ্যাকুরিয়াম দর্শনে এসে মুগ্ধ হন।

সংগঠনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল হাদী, সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দে সজল ছাড়াও উপদেষ্টা আহসান খান, সামসুজ্জামান বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রহমান শুভ্র, অনিন্দ্য মাহাবুব, আরিফুল ইসলাম রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিকুর রহমান, মো. নুরুন্নবি সোহাগ, মো. তরিকুল ইসলাম, নাহিদ হাসান, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ইমন, দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব জিতু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোশারেফ হোসেন মিলু, সহসম্পাদক রাকিবুল হাফিজসহ সংগঠনের অর্ধশতাধিক সদস্য এই সফরে অংশ নেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০অক্টোবর/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রশাসন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :