নকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরি করতেন তারা

চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এজেন্সি থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরি করে দেওয়ার কথা বলতেন। পরে তারা বাসায় বসে কম্পিউটারে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে আসল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের অনুরূপ ভুয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরি করে বিদেশগামীদের সরবরাহ করতেন। এর জন্য ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।
বুধবার বিকালে রাজধানীর বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিনব কায়দায় ভুয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রস্তুতকারী প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে নিজের রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সামিউল ইসলাম সজিব ও নাইম হোসেন নিলয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন, সাতটি সিল ও বেশ কিছু জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জব্দ করা হয়।
অপরাধের কৌশল সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, এই চক্র ২০১৯ সাল থেকে জেএসএন ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এশিয়া, মধ্যপাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর জন্য বিদেশ গমনেচ্ছুদের সঙ্গে চুক্তি করত।
এজেন্সির শর্তানুযায়ী, প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে অগ্রীম মোটা অংকের টাকা নিত। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আলাদা বাড়তি টাকা নিত। তারপর অরিজিনাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট না দিয়ে কম্পিউটারে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে সফটকপি আকারে সাবমিট করত।
হারুন বলেন, অতি সম্প্রতি তারা ৩০ জন ব্যক্তিকে রোমানিয়াতে পাঠানোর জন্য চুক্তি করে। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সঙ্গে নকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দেয়। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যাচাই করে জানতে পারে, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। যার ফলশ্রুতিতে ওই কোম্পানি ৩০ জন ব্যক্তির ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে দেয়। ফলে প্রার্থীগণ ভোগান্তিতে পড়েন। এমনকি দীর্ঘ দেড় বছর অপেক্ষা করেও তারা আজ পর্যন্ত তাদের প্রত্যাশিত দেশে যেতে পারেননি। টাকাও ফেরত পাননি।
বিদেশ গমন কিংবা দেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গেলে মহাবিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি পেশাদার বা চিহ্নিত অপরাধীরাও জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে যেতে পারে। এজন্য বিদেশ যাওয়ার আগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সঠিক কি-না তা যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দেন ডিবি প্রধান।
রাজধানীর বনানী থানায় করা মামলায় রিমান্ডের আবেদনসহ গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রোধে করণীয়:
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জালিয়াতি রোধে বাংলাদেশ পুলিশ রেফারেন্স নম্বরসহ কিউআর কোড সিস্টেম চালু করেছে। যখন অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা হয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ প্রার্থীর দেওয়া তথ্যসমূহ যাচাই করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করে। ইস্যুকৃত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের উপরের বাম পাশে রেফারেন্স নম্বরসহ একটি কিউআর কোড থাকে।
এই রেফারেন্স নম্বর ও কিউআর কোডের মাধ্যমে প্রার্থীকে শনাক্ত করা যায়। এমনকি বিভিন্ন নামে ইস্যুকৃত প্রত্যেকটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের কিউআর কোড ভিন্ন। কিন্তু জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এ রকমটি পাওয়া যায় না। কেননা প্রতারকচক্র একটি কিউআর কোড ব্যবহার করেই একাধিক জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরি করে। সে জন্য যাচাই করলে একই নাম ঠিকানা আসবে। একই নাম ঠিকানা আসলেও তা পুলিশের অফিসিয়াল লিংকে শো করবে না।
গ্রহণকৃত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জাল কিনা তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দুইভাবে যাচাই করা যায়। প্রথমত, পুলিশের অফিসিয়াল সাইটে (www.pcc.police.gov.bd) রেফারেন্স নাম্বার সার্চ করে। আরেকটি পদ্ধতি হলো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের উপরের বাম পাশে কিউআর কোডটি স্ক্যান করে।
ডিএমপির ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুর রহমান, অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্তি উপকমিশনার নাজমুল হক ও সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা ফোর্সসহ অভিযানটি চালায়।
(ঢাকাটাইমস/০৪আগস্ট/এএইচ/কেএম)

মন্তব্য করুন