তরল খাবারে ৯০ শতাংশ কমে ডেঙ্গুর তীব্রতা

সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ঢাকাসহ জেলা শহরের প্রতিটিই হাসপাতালই ডেঙ্গু রোগীতে ভর্তি। ভয় জাগাচ্ছে দৈনিক মৃতের সংখ্যাও। এ অবস্থায় আশা বাণী শোনালেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন। তিনি জানালেন, পর্যাপ্ত তরল খাবারে ৯০ শতাংশ কমে ডেঙ্গুর তীব্রতা।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানান ডা. তাহমিনা শিরীন। তিনি বলেন, ‘পেট ব্যথা করা বা ডায়রিয়া হওয়া, বারবার বমি বা রক্তবমি করা, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত ঝরা—এসব দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী যদি পর্যাপ্ত তরল খাবার খায়, তবে ৯০ শতাংশ সিভিয়ারিটি (তীব্রতা) কমে যাবে।’
কিন্তু কেমন ধরনের তরল খাবার খেতে হবে? এক্ষেত্রে ফ্রেস পানি, লেবুর পানি, খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ ও ভাতের মাড়ের কথা উল্লেখ করেন এই চিকিৎসক।
জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকে। ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীরে তীব্র ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, গায়ে র্যাশ বা লালচে দানা আসতে পারে। ডেঙ্গু রোগদের সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। এ, বি এবং সি।
অধিকাংশ রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। শুধু জ্বর ছাড়া অন্য কোনো লক্ষণ থাকে না। এক্ষেত্রে রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায়ই চিকিৎসা নিতে পারবেন। ‘বি’ ক্যাটগরির ডেঙ্গু রোগীদের কিডনি কিংবা লিভারে সমস্যা, পেট ব্যথা, বমি অথবা অন্তঃসত্ত্বা, অথবা জন্মগত যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
‘সি’ ক্যাটগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এক্ষেত্রে রোগীর লিভার, কিডনি বা মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় রোগীর জন্য আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রয়োজন হতে পারে। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে এমনটা জানান ‘ফারাজি ডায়গনাস্টিক অ্যান্ড হসপিটাল লিমিটেড’-এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. ইব্রাহীম মাসুম বিল্লাহ।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী যে ক্যাটাগরিরই হোক না কেন, তাকে পরিপূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল পানি, লেবুর পানি, ডাবের পানি, ফলের রস অথবা স্যুপ প্রতিদিনই বেশি করে খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কমপক্ষে আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
যদি ডেঙ্গু রোগীর হার্টে, লিভারে বা কিডনিতে কোনো সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। ডেঙ্গু হলে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা কমানোর জন্য কোনো ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। কারণ, এ জাতীয় ওষুধ শরীরে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল। তবে বর্তমানে এটি আর মুখ্য নয়। প্লাটিলেট কমে গেলে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদি কোনো কারণে রোগীর প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নেমে যায় বা রোগীর ব্লেডিং মেনিফেস্টিশন বা কোনো ধরনের রক্তপাত হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসক চাইলে রোগীকে প্লাটিলেট বা ফ্রেস ব্লাড দিতে পারেন।
(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/এজে)

মন্তব্য করুন