শেখ হাসিনাসহ তিন সিইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ বিএনপির

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান লঙ্ঘন করে বিতর্কিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) ১৯ জনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
আগামীকাল রোববার (২২ জুন) সকালে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খান । এ সময় তার সঙ্গে থাকবেন বিএনপির তিন সদস্য।
আজ রোববার (২২ জুন) সকালে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গিয়ে অভিযোগটি জমা দেন।
এতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়। তিন সিইসি হলেন কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী আবদুল আউয়াল।
এছাড়া ওই তিন কমিশনের ১২ নির্বাচন কমিশনার ও তিন সচিবসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।
তবে তালিকাটি চূড়ান্ত নয় জানিয়ে সালঅহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তদন্তের মাধ্যমে যারা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন সেসব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি পরিচিত ‘বিনা ভোটের নির্বাচন’ হিসিবে। তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ১৫৩টি আসনে ভোটগ্রহণ ছাড়াই আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করে। এই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল।
ওই কমিশনে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি ‘রাতের ভোট’ বলে পরিচিত। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও সরকার রাতেই ভোট ডাকাতি ও আগাম ব্যালট সিল মেরে তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে নেয় বলে প্রচার আছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসন পায়। বিপরীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র ৮টি আসন।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ওই কমিশনে ছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও (প্রয়াত) মাহবুব তালুকদার।
সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনটি ‘ডামি প্রার্থীর ভোট’ বলে পরিচিত। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরই লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটার উপস্থিতি, ভোটের হার নিয়ে কমিশন জালিয়াতি করে। ভোটের দিন দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলা হলেও এক ঘণ্টার ব্যবধানে তা ৪০ শতাংশ উল্লেখ করা হয়।
আউয়াল কমিশনে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, মো. আনিছুর রহমান, মো. আলমগীর ও বেগম রাশেদা সুলতানা।
এর আগে গত সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
(ঢাকাটাইমস/২১জুন/মোআ)

মন্তব্য করুন