রকিব-হুদা-আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২৫, ১৩:৩৭| আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ১৪:২৩
অ- অ+

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান লঙ্ঘন করে বিতর্কিত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ, কেএম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিএনপি। এতে তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ১৯ জন এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

রবিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান (মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক) বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা নম্বর-১১।

আসামিরা হলেন— তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার আবু হানিফ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসর) জাবেদ আলী, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ.কে.এম. নুরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাবেক ডিজি র‍্যাব ও সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ.কে. এম শহীদুল হক, সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান নাম অজ্ঞাত, আসামি সাবেক এনএসআই প্রধান অজ্ঞাত ও সাবেক ঢাকা রেঞ্চের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল আলম।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক।

তিনি বলেন, আগে যেসব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাগণ ছিলেন অভিযোগকারীর দৃষ্টিতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও তারা সে সময় ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট সম্পূর্ণ করে এবং জনগণের ভোট ছাড়া প্রার্থীদের বিজয়ী করেন। সংসদ সদস্যদের বিজয়ী ঘোষণা করা অভিযোগকারীদের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় ছিল, সে সমস্ত অপরাধের ফিরিস্তি নিয়ে ১৯ জনকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেছে।

ওসি আরও বলেন, আমরা অভিযোগ পর্যালোচনা করে মামলা রেকর্ড করব।

সালাহউদ্দিন খান বলেন, বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনকে ঘিরে বারবার অভিযোগ করার পরও তৎকালীন সিইসি ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেননি। আমরা আশা করি বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিএনপির মহাসচিবের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়েছি।

ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিইসি, ইসি ও সচিবদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হলো।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দেয় ভোট বর্জন করা বিএনপি।

কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ, সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাবেদ আলী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নিশিরাতের নির্বাচন’।

কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের সদস্য ছিলেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধীদল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। গত ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে সরকার প্রধানের দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া ‘বিতর্কিত’ তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

(ঢাকা টাইমস/২২জুন/জেবি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ঢাকা কলেজের চুক্তি স্বাক্ষর
সাতক্ষীরার আদালতে ইভ্যালির রাসেলের তিন মাসের কারাদণ্ড  
টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ১ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার
দুর্ঘটনার পর চিকিৎসা ব্যবস্থাও সড়ক নিরাপত্তার অংশ হওয়া উচিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা