একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. মঈন খান: সরকার চেষ্টা করছে কিন্তু জনগণের প্রত্যাশামতো ফল দেখাতে পারেনি

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২৫, ১৬:৪৭| আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ১৭:১৩
অ- অ+

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। দলের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। দেশের বর্তমান ও আগামী রাজনীতি নিয়ে ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকাটাইমস। পাঠকদের জন্য দেয়া হলো সেই আলাপচারিতার চুম্বক অংশ। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন ঢাকাটাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, নির্বাহী সম্পাদক মনির হোসেন লিটন ও বিশেষ প্রতিনিধি জাহিদ বিপ্লব।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর গত প্রায় ১০ মাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেশ পরিচালনা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

ড. আব্দুল মঈন খান: নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তাদের কাছে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল গত ১৭ বছরে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছিল, ড. ইউনূস তা পরিষ্কার করবেন। যে দুর্বিষহ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, দেশকে সেখান থেকে বের করে দ্রুত গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেবেন। অন্তর্বর্তী সরকার অনেক কিছু চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকার জনগণের প্রত্যাশামতো ফলাফল দেখাতে পারেনি।

তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মানুষ আবেগপ্রবণ ও সহজেই তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। আর এ কারণেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় মানুষের ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে। তবে সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে মানুষের অনেক সন্দেহ ও অবিশ্বাস কেটে গেছে। দেশ এখন স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন: লন্ডন বৈঠকের পরেও অনেকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। বিএনপির মধ্যেও এমন কোনো সংশয় আছে কি?

ড. আব্দুল মঈন খান: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দেয়া কথায় সন্দেহ তৈরি হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়, তাই বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কথায় আস্থা রাখতে চায়।

প্রশ্ন: প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে জনাব তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করায় জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ করছে। এ নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া কী?

ড. আব্দুল মঈন খান: এমন অভিযোগের কোনো যৌক্তিকতা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান দেশের স্বার্থে যে কারো সাথে যেখানে ইচ্ছা বৈঠক করতে পারেন। প্রধান উপদেষ্টা আগে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের সাথে বিভিন্ন সময় বৈঠক করেছেন। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে সেসব বৈঠক নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকেই লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করার আগ্রহ দেখানো হয়েছিল। সরকার মনে করেছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের বৃহত্তম দল বিএনপির শীর্ষ নেতার সাথে বৈঠক করা দরকার। তাই এই বৈঠক করেছেন। কাজেই এ নিয়ে সমালোচনা করা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।

প্রশ্ন: বিএনপি একসময় অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টার অপসারণ চেয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন সম্পর্কে বিএনপির অভিযোগ ছিল যে তারা এনসিপির প্রতি পক্ষপাত করছেন। তিন উপদেষ্টার অপসারণের দাবি থেকে বিএনপি পিছিয়ে এসেছে কেন?

ড. আব্দুল মঈন খান: রাজনীতি সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। রাজনীতিতে কখনো ছাড় দিতে হয়, কখনো গ্রহণ করতে হয়। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে রাজনৈতিক দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই এখনকার পরিস্থিতিতে তিন উপদেষ্টার অপসারণ আর প্রাসঙ্গিক নয়।

প্রশ্ন: অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের অর্থ হলো সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া। দেশের অন্যতম বড় দল আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে কি?

ড. আব্দুল মঈন খান: আওয়ামী লীগকে বা এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কথা বিএনপি বলেনি। এ দাবি এনসিপির, নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাই অন্তর্বর্তী সরকারই এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে।

তবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে চায় কি না সেই প্রশ্নটিও আওয়ামী লীগের কাছেই করা দরকার। তারা বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছে, ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ পরিচালনা করেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখ ভুয়া মামলা দিয়েছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষের সাথে আওয়ামী লীগ যে অন্যায় করেছে, সেটি তারা উপলব্ধি করে কি না, এসবের জন্য ভুল স্বীকার করে কি না, ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি করবে কি না- সেই প্রশ্ন তাদেরকেই করা দরকার।

গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এরপর আসে অংশগ্রহণমূলকের কথা। আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনে বিশ্বাস করে কি না তাদেরকে সেই প্রশ্ন করতে হবে।

প্রশ্ন: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিলেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করবে। বিএনপি এখনো সেই অবস্থানে আছে কি? আর জাতীয় সরকার গঠন হলে সেই সরকারে কি জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি থাকবে?

ড. আব্দুল মঈন খান: জাতীয় সরকার নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় এখনো আসেনি। যদি জাতীয় সরকার গঠন করা হয় তাহলে গণতন্ত্রকামী ও বিগত বছরগুলোতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যারা একসাথে ছিল, তাদের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। বিএনপির আদর্শের সাথে মেলে না, এমন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে ভিন্ন বিবেচনা থাকতেই পারে। জাতীয় সরকার বলতে এটা বোঝায় না যে, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে সেই সরকারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রেমিটেন্স সেবা আরও সহজ করছে এনআরবিসি ব্যাংক
বাংলামোটর মোড়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ককটেল বিস্ফোরণ
সোনালী ব্যাংকে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অবহিতকরণ সভা
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩২৯ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ১
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা