ফের এনবিআরে কলমবিরতির ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২১ জুন ২০২৫, ২৩:০৮
অ- অ+

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে সোমবার (২৩ জুন) কলমবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। শনিবার (২১ জুন) বিকালে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআর ভবনে সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করবেন। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির অধীন অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও স্ব স্ব দপ্তরে একই সময়ে একই কর্মসূচি পালন করবেন।

এর আগে গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। পরবর্তীতে এর বিরোধিতা করে গত ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করেন এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা।

সোমবার আবারও অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শনিবার (২১ জুন) বিকাল ৫টার দিকে রাজস্ব ভবনের নিচতলায় ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারকে সভাপতি ও অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকাকে মহাসচিব করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট একটি এডহক কমিটি গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

এতে আরও বলা হয়, সভায় আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সামগ্রিক রাজস্ব সংস্কার ভাবনার অংশ হিসেবে ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) একটি প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে লিখিত পত্র প্রদানের পরও কক্ষ বরাদ্দ না দেয়ার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। ফলে রাজস্ব ভবনের নিচতলার মেঝেতে সভাটি করা হয়। উল্লেখ্য, গত ২ জুনও একইভাবে কক্ষ বরাদ্দ না দেয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব ভবনের নিচতলার মেঝেতে সভা করে ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, গত ২৫ মে এক বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত না করে বরং এটিকে সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় আরও শক্তিশালী করা, রাজস্ব নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে আলাদা একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠন করা এবং প্রয়োজনীয় সব সংশোধনের পূর্ব পর্যন্ত জারিকৃত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের এমন সিদ্ধান্তের আলোকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সিভিল সোসাইটি, থিংক ট্যাংক, ব্যবসায়ী সংগঠন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনবিআরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা তো করা হচ্ছেই না, বরং সেমিনার আয়োজনের লক্ষ্যে অফিস সময়ের পর প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে লিখিত পত্র দেয়ার পরও কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এমনকি অফিস সময়ের পর অধ্যাদেশ সংশোধনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে তাদের মতামত প্রস্তুতের লক্ষ্যে কোনো ধরনের সভা করার জন্যও কক্ষ বরাদ্দ দিতে নিষেধ করা হয়েছে মর্মে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত ১৯ জুন রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর ও কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ৬ জন সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি তাদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনাও করা হয়নি। অন্যদিকে এনবিআর চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভায় ও বক্তব্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আরও শঙ্কার বিষয়, যে রাজস্ব অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে এতদিন কর্মসূচি চলেছে, তা জারি হওয়ার পর যে বা যারা একে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকায় ও ফেসবুকে বক্তব্য দিয়েছিলেন, এনবিআরের তেমন সদস্যদেরও গঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এ থেকে এটি স্পষ্ট যে, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারে সরকারের সদিচ্ছাকে এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রশ্নের সম্মুখীন করা হচ্ছে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত করে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।

এই অবস্থায় এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্বে রেখে রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয় উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান এটি বাস্তবায়ন হতে দেবেন না। পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী যে ৪৪ জন (এর মধ্যে ৬ জনকে ইতোমধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে) আমলার তালিকা করা হয়েছে, তার মধ্যে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান তিন নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন। সুতরাং, সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করবেন, এটাই বরং স্বাভাবিক।

ইতোমধ্যে সংস্কার কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়নের খড়গ নেমে এসেছে উল্লেখ করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উসকানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তার মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক কার্যক্রম সময়ক্ষেপণ বৈ কিছু নয় বলে মনে করে ঐক্য পরিষদ।

ঐক্য পরিষদ আগে থেকেই রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, এনবিআর কর্তৃক গঠিত কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া রাজস্ব আহরণের গুরুত্ব বিবেচনায় রোববার বাজেট পাসের কার্যক্রম থাকায় কঠোর কর্মসূচি দেয়া হয়নি উল্লেখ করে পরবর্তীতে নিজেদের কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

(ঢাকা টাইমস/২১জুন/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তারেক রহমান জিতলে বাংলাদেশ জিতবে: প্রস্তুতি সভায় এস এ সিদ্দিক সাজু
কুমিল্লায় যুবলীগ সভাপতি ওমানী কাশেম গ্রেপ্তার
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে পঞ্চম আন্তর্জাতিক রোবো টেক অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
বেনাপোলে ১৮ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা