আইএমএফের শর্ত মেনে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫০

চলতি অর্থবছরে ছয় মাসের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

নতুন এই মুদ্রানীতিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণসহ মূল্যস্ফীতি কমানোকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের চাপ, বিদেশি মুদ্রার সরবরাহে টান, টাকার মান কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি আর চলতি হিসাবে ঘাটতি বয়ে বেড়ানোর মতো অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী এক বছরের মুদ্রানীতি ঘোষণার পরিবর্তে আগের মতো ছয় মাসের মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে সাবেক গভর্নর, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের মতামত নিয়েছে এ সংক্রান্ত কমিটি।

সরকারের জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ জানিয়ে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে কি পরিমাণ মুদ্রা সরবরাহ করা হবে তার একটি আগাম ধারণাপত্র দেওয়া হয় মুদ্রানীতিতে। আর গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় মুদানীতির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এখন থেকে আবার এক অর্থবছরে (আর্থিক বছর, ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ জুন) দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের ১ জুলাই ২০২২-২৩ অর্থবছর শুরু হওয়ার পর ওই মাসের শেষের দিকে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল।

গত কয়েক বছর ধরে এক অর্থবছরে একটি মুদ্রানীতিই ঘোষণা করা হতো। এবারও তেমনটিই হবে বলে সবাই ভেবেছিলেন। কিন্তু আইএমএফের পরামর্শে আগামী ১৫ জানুয়ারি রবিবার চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। যেখানে গুরুত্ব পাবে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আটকে রেখে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনা এবং কাঙিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি (অর্থনৈতিক) অর্জনের উদ্যোগ।

বাজারে নগদ টাকার জোগান কেমন হবে? কতটা ঋণ দেয়া হবে উদ্যোক্তাদের? সরকারই বা কতটুকু ধার করতে পারবে ব্যাংকিং খাত থেকে! মুদ্রানীতির মাধ্যমে এমন সব লক্ষ্যই নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত কয়েক বছর এই নীতি বছরে একবার প্রকাশ করা হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের আইএমএফের ৪৫০ কোটি (৪.৫ বিলিয়ন) ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে এখন তা আগের মতো ছয় মাস পরপর (এক অর্থবছরে দুটি) মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আইএমএফের এই ঋণের বেশ কিছু শর্তের মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল এক অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে হবে।

বেশকিছু সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের শর্তে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই ঋণের প্রথম কিস্তির টাকা ছাড় করা হবে বলে সরকারকে জানিয়েছিল আইএমএফ।

দুই বছরের করোনামারির রেশ কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এই সংকটের সময় টিকে থাকতে বাড়াতে হবে কর্মসংস্থান, আর সে জন্য বিনিয়োগ দরকার। এমন এক অবস্থার মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে আজ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এটি হবে তার মেয়াদকালে প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা।

বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রতি ছয় মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত দুই অর্থবছর তা এক বছরের জন্য করা হয়। আর করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি ঘোষণা করেন বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির।

তবে সম্প্রতি ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বছরে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করার পরামর্শ দিয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। আর পরিসংখ্যান ব্যুরো বছরে দু’বার এসব তথ্য প্রকাশ করে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকও বছরে দু’বার মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বলে আইএমএফকে জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৫ জানুয়ারিতে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের রাখার সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সবশেষ নভেম্বর মাস শেষে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এজন্য মূল্যস্ফীতি সরকার নির্ধারিত মাত্রায় সীমিত রাখা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

নতুন মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তারল্য সরবরাহ ঠিক রাখা মুদ্রানীতির মূল কাজ। মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা দেশের অর্থনীতিবিদসহ সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক, মুদ্রা সরবরাহ, সংরক্ষিত মুদ্রা ও সুদ হার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’ মুদ্রানীতি কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের ওপর ভিত্তি করেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে আবার বছরে দুইবার মুদ্রানীতির যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটি অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত। দুইবার মুদ্রানীতি দিলে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। তবে মুদ্রানীতির তাৎপর্য কমে গেছে সুদহার নির্দিষ্ট থাকার কারণে। অর্থাৎ ঋণের ৯ শতাংশ সুদ নির্দিষ্ট হওয়ায় মুদ্রানীতিতে নতুন কিছু থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুদ হারের নির্ধারিত সীমা যদি উঠিয়ে দেয় তাহলে নীতি সুদহার অর্থাৎ রেপো, রিভার্স রেপো রেট বিভিন্ন সূচক দিয়ে মুদ্রানীতিকে ব্যাখ্যা করা যায়। আর সুদ হার ৯ শতাংশ নির্ধারণ বহাল থাকলে অন্য কিছু কাজ করবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মূল্যস্ফীতির পারদ ঊর্ধ্বমুখী। অস্থির মুদ্রাবাজারও। ডলার লেনদেন হচ্ছে ১০০ টাকার উপরে। রয়েছে করোনার ধাক্কা। পাশাপাশি বৈশ্বিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডকে যাতে নিরুৎসাহিত না করা হয় সেদিকে মুদ্রানীতির দৃষ্টি থাকবে। এবারের মুদ্রানীতি হবে সতর্কতামূলক। পুরোপুরি সংকোচন বা সম্প্রসারণমূলক নয়।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, এই মুহূর্তে বাজারে টাকার প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা জরুরি। কারণ ডলারের সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করায় প্রচুর টাকা চলে এসেছে। ফলে টাকার সরবরাহ কমে তারল্য সংকটে পড়েছে বেশকিছু ব্যাংক।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধির সংকুলান রাখা হয়। নভেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে নতুন মুদ্রানীতিতে এরকম প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হতে পারে। সব ধরনের ঋণে ৯ শতাংশ সুদ হারের যে ঊর্ধ্ব সীমা রয়েছে তা একেবারে বাজারের ওপর ছেড়ে না দিয়ে নতুন করে একটি সীমা দেয়া হতে পারে।

জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে বছরে দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও ২০১৯ সাল থেকে সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বছরে একবার মুদ্রানীতি প্রণয়নের ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ওই বছরের ৩১ জুলাই একবারই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। পরবর্তী ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরেও একবারই মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির পর দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ালেন পাইকাররা

ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজের চুক্তি স্বাক্ষর

কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিল সাউথইস্ট ব্যাংক

ঈদ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রম উদ্বোধন

বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণা চুক্তি স্বাক্ষর

ঈদ উপলক্ষে ওয়ালটনের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পণ্য উন্মোচন 

বাজেট ২০২৪-২৫: ধনীদের কর বাড়ছে

‘ঈদ উৎসব-কোরবানি অফার’ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করল সনি-র‌্যাগস

এবার ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে মিলিয়নিয়ার হলেন ভোলার শামীম

কমিউনিটি ব্যাংকের ৫ম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :