‘ভোট পড়ে ৩০০, হয়ে যায় ৩ হাজার’, আ.লীগ নেতার বক্তব্য ভাইরাল

ভোটের অনিয়ম নিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসানের (খোকন) একটি বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে তিনি ভোটে কারচুপি ও অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে বলেছেন, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও গণনার সময় বেশি ভোটার দেখানো হয়। ভোটের ওপর মানুষের বিশ্বাস যাওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভিডিওতে তাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘সারা দিন দু-চারটা লোক ভোট দিতে যায়। সারা দিনে ভোট পড়ে আড়াই শ থেকে তিন শ। কিন্তু বিকাল বেলা গণনার পর তা হয়ে যায় তিন হাজার।’ তার এমন বক্তব্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
কামরুল হাসান দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী। ২১ মে এ উপজেলায় ভোট হবে। এক সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন কামরুল হাসান। আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদকও ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য।
জানা গেছে, সদর উপজেলার রুহিয়া চৌরাস্তায় মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনি সভায় বক্তব্য দেন কামরুল হাসান। যেখানে ভোটের অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন। পরে বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে কামরুল হাসানকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক কম, সাড়া নাই। লোকলাক টানে নিয়েও ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাবা পারু না। এর কারণ ভোটের ওপর মানুষের যে বিশ্বাস, তা উঠে গেছে। সারা দিন দু–চারটা লোক ভোট দিবা যাছে। সারা দিনে সেন্টারলাত দুই শ, আড়াই শ, তিন শ ভোট কাস্ট হচে। কেন্দ্রত ভোটার আছে মনে করেন বাইশ শ, তেইশ শ, পঁচিশ শ না হয় তিন হাজার। বিকেলবেলা যখন প্রিসাইডিং অফিসার তামাম (গোটা) ব্যালট বাক্সলা এক করে গনাছে (গুনছে), সেলা (সে সময়) দেখা যাছে, ভোট কাস্ট হচে ৩ হাজার ১৬৬। এত ভোট কুনঠে (কোথা থেকে) থেকে আসিল। মিথ্যে চালাকি, ধান্দাবাজি আর চালবাজি করে হামরা ভোটটা করছু, এইতানে ভোটের প্রতি মানুষের আর আস্থা নাই। ভোট দিতে মানুষ যায় না। আমি আওয়ামী লীগ করি, এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য আমরাই নিজেরাই দায়ী মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। ১৫ বছর যাবৎ হামরা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আছি। ভোট আসিলে হামার মতো ধান্দাবাজ লোকলা টাউন থাকে আসে মানুষের কাছে কহছে ভোট দেন, তামাম কাজ করে দিম। এমনভাবে গুছায় কহছে যে মনে হচে আকাশের চাঁদখান টানে নিচত নামায় দিবে। এলা নতুন সুর তুলিছে, হামাক ভোট না দিলে ভিজিডি কার্ড বাতিল করে দিবে। ভিজিডি কার্ড কি তোমার বাপের?’
রাজনীতি এখন টাকা কামানোর ব্যবসা হয়ে গেছে মন্তব্য করে কামরুল হাসান বলেন, ‘টাকা কামানোর তানে রাজনীতি হচে একখান ব্যবসা। যারা রাজনীতিকে নষ্ট করে ব্যবসায় পরিণত করেছে, তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। আমরা যদি নির্বাচিত হই, কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না। মিথ্যে মামলা দেওয়া হবে না। এর মধ্যে যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, সেসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমরা কাজ করে যাব।’
নিজের এমন বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে কামরুল হাসান সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ভোটারের ক্ষোভ কমিয়ে এনে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন বক্তব্য দিয়েন। তিনি বলেন, ‘ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে, আমি আওয়ামী লীগ করি বলে এটা তো অস্বীকার করতে পারি না। কেন্দ্রে ভোটার কেন আসছেন না, বিভিন্ন পথসভায় তা তুলে ধরে ভোটারের ক্ষোভ কমিয়ে এনে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন বক্তব্য দিয়েছি।
‘বক্তব্যটি অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই’ বলে মন্তব্য তার।
(ঢাকাটাইমস/১৬মে/ইএস)

মন্তব্য করুন