নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্প স্থগিত, বিদ্যমানগুলো দিয়ে ৫০-৭০ আসনে ভোট নেওয়া সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩:১৭

আর্থিক সংকটের কারণে সরকার বাজেট অনুমোদন না দেয়ায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হচ্ছে না। তবে নির্বাচন কমিশনের কাছে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে ৫০-৭০ আসনে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বাকি আসনগুলোতে ব্যালটেই ভোটগ্রহণ হবে বলে জানা গেছে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নির্বাচন কমিশনের নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে না বলে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশন থেকে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় গত ১৯ অক্টোবর। কয়েক দফা চিঠি চালাচালি শেষে গত ১৭ জানুয়ারি একনেক সভায় তোলার তোড়জোড় করা হয়। ওই বৈঠকে টেবিল আকারে প্রকল্পটি ওঠার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছিল ইসি। তবে শেষ পর্যন্ত তা আর ওঠেনি।

এদিকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সোমবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন করে ইভিএম কেনার প্রকল্প আপাতত হচ্ছে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে এই প্রকল্প গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্প বিস্তারিত পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের সামর্থ্য বিবেচনায় আপাতত প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে এটা রান করবে না, পরবর্তী সময়ে হয়তো রান করবে।’

প্রকল্প না হলে কতগুলো আসনে ইভিএম হবে এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনের পূর্বের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তার রোডম্যাপে বলেছিল, যদি নতুন ইভিএম কিনতে পারে তাহলে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে। নতুন ইভিএম না পেলে বিদ্যমান ইভিএম দিয়ে যত আসনে ভোট করা সম্ভব সেটা করা হবে। এই সিদ্ধান্ত আগেই জানানো হয়েছে। এখনও সেটা বহাল আছে।’ পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো কমিশন জানিয়ে দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আগেই বলা হয়েছে আমাদের হাতে যত ইভিএম আছে তা নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে। সেক্ষেত্রে ৫০টা হতে পারে, ৬০টা হতে পারে বা ৭০টা হতে পারে। কোয়ালিটি চেক করে বলতে পারব বাস্তবে কতটিতে ইভিএম করা যাবে।

তিনি জানান, ‘ইসির কাছে দেড় লাখ ইভিএম মেশিন আছে। এর মধ্যে কিছু হয়তো সচল নাও থাকতে পারে। সেগুলোর গুণগত অবস্থা যাচাই করে তা নিয়ে নির্বাচন করা হবে।’

আর্থিক সক্ষমতা থাকলে ভবিষ্যতে এ প্রকল্প আবার গ্রহণ করা হতে পারে বলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান। তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হবে কী হবে না সেটা কমিশন বলতে পারবে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারের বার্তাটা আপনাদের জানিয়েছি। সরকারের সিদ্ধান্ত কমিশনকে অবহিত করেছি।’

গত রবিবার সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইসি জেনেছে বলেও জানান সচিব জাহাংগীর।

প্রকল্প না হওয়ায় কমিশন হতাশ কিনা এমন প্রশ্নে সচিব জাহাংগীর বলেন, ‘সেটা কমিশনই বলতে পারবে।’

নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় গত ১৯ অক্টোবর। কয়েক দফা চিঠি চালাচালি শেষে গত ১৭ জানুয়ারি একনেক সভায় তোলার তোড়জোড় করা হয়। ওই বৈঠকে টেবিল আকারে প্রকল্পটি ওঠার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছিল ইসি। তবে শেষ পর্যন্ত এটা আর ওঠেনি।

অবশ্য, দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোট হবে জানিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রহণ করা প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে পড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে সম্প্রতি ভিন্ন প্রস্তুতি নেয় ইসি। ইসির তরফ থেকে সম্প্রতি বলা হয়, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্প পাস না হলে তাদের পক্ষে ইভিএম কেনাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহার অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে ব্যালটে ভোট করার প্রস্তুতি নেবে ইসি।

ইসি সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসি নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। যেসব ইভিএম মেশিন রয়েছে, সেগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কোন কোন আসনে ইভিএমে আর কোন কোন আসনে ব্যালটে ভোট গ্রহণ করা হবে- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে এগুচ্ছে ইসি।

এদিকে নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা করে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। যদিও ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। আবার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ইভিএম কেনা ও এর পেছনে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সরকারের কৃচ্ছতা সাধন নীতি চলমান অবস্থায় বিপুল ব্যয়ে নতুন ইভিএম কেনা নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞরাও। সরকার এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন ইভিএম কেনা থেকে সরে এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন তারা।

অন্যদিকে এসব প্রশ্নের মধ্যে ইভিএম কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ছাড়াই। যদিও সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও পেশাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে।

এর আগে নির্বাচন কমিশন গত বছরের জুলাইয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করে, তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চায়। অন্যদিকে বিএনপি ইভিএমকে ‘কারচুপির যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করে আসছে। সংলাপে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না।

অবশ্য নির্বাচন কমিশন ২৩ আগস্ট জানায়, তারা সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের কাছে দেড় লাখ ইভিএম আছে। ১৫০ আসনে ভোট নিতে প্রয়োজন আরও ২ লাখ ইভিএম।

নতুন করে ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় গত ১৯ অক্টোবর। প্রকল্পটির নাম ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’। প্রকল্পের পুরো টাকা সরকারেরই জোগান দেওয়ার কথা ছিল।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/আরকেএইচ/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :