ইবি ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ছাত্রলীগ নেত্রীর জঘন্য কাণ্ড, সারারাত নির্যাতন

ইবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:০৯| আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:১৭
অ- অ+

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী হলে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। র‍্যাগিংয়ের সময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীরা বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে রাখে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। গত সোমবার সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

র‍্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত দিয়েছেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমার ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হওয়ার জন্য আমি ৭ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ৩০৬ নং রুমে এলাকার (পাবনা) পরিচিত এক আপুর রুমে গেস্ট হিসেবে উঠি। যথাযথভাবে সবাইকে সম্মানপূর্বক রুমে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করি। এরপর ১১ ও ১২ তারিখে ২ দফায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে উঠলে ওই হলের আবাসিক ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা আপুর নেতৃত্বে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০- ২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তাবাচ্ছুম আপুসহ নাম না জানা আরও অন্তত ৭-৮ জন র‍্যাগিংয়ের নামে আমাকে চরমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। এবং আমাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। এমনকি তারা আমাকে জীবননাশের হুমকিও প্রদান করেন।

লিখিত অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত নির্যাতনের বিবরণে ওই ছাত্রী বলে, আমার বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুম নামের এক আপু আমাকে দেখা করতে ডাকে কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় যথাসময়ে তার রুমে যেতে পারিনি। এরপর থেকেই তারা আমার ওপর চড়াও হতে থাকে এবং তাদের রুমে গেলে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। আমাকে হল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়। তারা অভিযোগ করতে থাকেন তাদের না জানিয়ে কেন হলে উঠেছি। অথচ আমি আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে নয় গেস্ট হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য উঠেছিলাম। এরপর রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় অন্তরা আপুসহ তার সঙ্গে থাকা ৭-৮ জন আমাকে গণরুমে নিয়ে যেয়ে এলোপাতাড়িভাবে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। আপু আমাকে কেন মারছেন বলতে গেলে তারা আমার মুখ চেপে ধরে থাকেন এবং সজোরে চোয়ালে থাপ্পড় মারে। এছাড়া আমাকে বলতে থাকে, আমরা কি করতে পারি জানিস তুই? আমাদের সম্পর্কে তোর কোন আইডিয়া আছে?

আমি কান্না করে তাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তারা আমাকে পা দিয়ে লাত্থি মারেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরে রাখেন, একটা ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করিয়ে নেন। এছাড়া আমাকে বলতে থাকে যাতে এই বিষয়টা কোনভাবেই বাইরে না যায়, আর যদি বলিস তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল করে দেবো। ভিডিওগুলো তাদের সংরক্ষণে আছে। এসময় অন্তরা বলেন, যদি তুই প্রশাসনের কাছে কোন প্রকার অভিযোগ দিস তাহলে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো। এরপর আমাকে রাত সাড়ে ৩টায় ছেড়ে দেয়। এ কারণে পরেরদিন প্রাণের ভয়ে আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে গ্রামের বাড়ি পাবনাতে চলে যাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী বলেন, ‘ওই মেয়ে কি কোনো অভিযোগ দিয়েছে? প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে?’ এরপর তিনি দাবি করেন, ‘অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। ওই মেয়ে মিথ্যা বলছে। হয়তো এক কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি উপাচার্যের কাছে এসেছি। ওই মেয়ে যে মিথ্যুক, তার প্রমাণ উপাচার্যকে দেওয়া হচ্ছে’

ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, প্রথম বর্ষের এক মেয়ে কিছু সিনিয়রদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছিলো কিছু ছাত্রী। পরে আমি ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা মিলে বিষয়টি মিটমাট করে দেই। কিন্তু পরে তার সাথে কি হয়েছে এ বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা হল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরিন বলেন, আমরা র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে বরাবরই জিরো টলারেন্স। ওই ছাত্রীর বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, বিষয়টি জেনেছি। উভয় পক্ষের কথা শুনে বিষয়টি যাচাই বাছাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড শেখ আবদুস সালাম বলেন, র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি আমি শুনেছি। র‌্যাগিং তো একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও র‌্যাগিং ছিলো না। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়গুলো অ্যালাউ করে না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘উপাচার্যের সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষক মিলে আছি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি।’

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মাদক
আড়াইশ’র আগেই অলআউট বাংলাদেশ
আজ আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস
সরকারি কর্মচারীদের জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরে হচ্ছে ‘কল্যাণ ডেস্ক’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা