সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মাদক

তরিকুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২৫, ১২:১০| আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ১২:৪০
অ- অ+

চালকের মাদক সেবনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ে। বেপরোয়া ড্রাইভিং বাংলাদেশে সড়কে প্রাণহানির প্রধান কারণ এবং এই বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের জন্য প্রধানত মাদকাসক্তিকে দায়ী করা হয়। প্রতি বছরই ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস’ পালিত হয়। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই দেশে বন্ধ হচ্ছে না মাদক ব্যবহার। এর ফলে সড়কে দুর্ঘটনার মতো ভয়াবহ ঘটনা। নেশাগ্রস্ত কিংবা ঘুমকাতুরে হয়ে গাড়ি চালানোর জন্যও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালকদের ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) অনেকটাই বাধ্যতামূলক। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বৈশ্বিক বিবেচনাতেও প্রথম সারির দিকে অবস্থান বাংলাদেশের। সড়ক দুর্ঘটনার নেপথ্যে অন্যতম কারণ হলো চালকের মাদকাসক্তি।

এ ছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে— মাদক গ্রহণ করে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, জরাজীর্ণ সড়ক, অযোগ্য যানবাহন, অদক্ষ চালক, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন বা হেডফোন ব্যবহার, সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, মোটরযানে মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করা, সিটবেল্টের ব্যবহার না করা এবং যানবাহনে শিশুদের জন্য নিরাপদ আসন না থাকা ইত্যাদি।

গাড়িচালকদের মাদক সেবনের কারণে ৩০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ৯৮ শতাংশ চালক কোনো না কোনোভাবে মাদক গ্রহণ করেন। ২২১ জন ট্রাকচালকের মধ্যে ৪৩ জন চালক অ্যালকোহল-জাতীয় মাদকে আসক্ত। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের ৩১ তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ‘মাদকাসক্তি ও সড়ক দুর্ঘটনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিলের তথ্যমতে জানা যায়। গোলটেবিল থেকে আরও জানা যায়, ৯৮ শতাংশ চালক কোনো না কোনোভাবে মাদক গ্রহণ করেন।

দূরপাল্লার যানবাহনের চালকদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিভিন্ন ধরনের মাদক গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যাই বেশি। অনেকেই গাঁজা ও ফেনসিডিলে আসক্ত। বিশেষ করে রাতের বেলায় দূরপাল্লার ভারী যানবাহনচালকরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালান এবং সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন।

২০০৭ সালে ব্র্যাকের রোড সেফটি কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ভারী যানবাহন (বাস-ট্রাক) চালকদের প্রায় ৬৯ শতাংশ মাদক সেবন করেন। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে চালক মোটরযান চালালে ৩ মাসের কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

চালকদের মাদকমুক্ত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে গাড়ির মালিকদেরও সচেতনতার প্রয়োজন। নিয়োগ দেওয়ার সময় তাদের নিশ্চিত হতে হবে চালক মাদক সেবন করে কি না। একইসঙ্গে শ্রমিক, মালিক, যাত্রী সাধারণ সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে পেশাদার চালকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও তাদের মাদক এবং ক্ষতিকর নেশামুক্ত করতে হবে। সড়কে মানুষের জীবনের সুরক্ষায় কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া উচিত হবে না। এছাড়াও কিটের মাধ্যমে বাস টার্মিনালের পাশাপাশি সেতুর টোল প্লাজাতেও মাদক পরীক্ষা করা দরকার।

চালকদের মাদকাসক্তি চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে বাড়াতে হবে কঠোর নজরদারি। কোনো যানবাহন যদি সড়কে অস্বাভাবিক চলাচল করে তাহলে সেই গাড়ি থামিয়ে চালকের ডোপ টেস্ট করতে হবে। মাদকাসক্তির পরীক্ষা শুরু হলেই অন্যরাও সতর্ক হয়ে সুপথে ফিরবে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেশা আসক্ত চালকদের চিহ্নিত করার জন্য উন্নত বিশ্বে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তা আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

অতএব, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে পেশাদার চালকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও তাদের মাদক ও ক্ষতিকর নেশা মুক্ত করতে হবে। সড়কে মানুষের জীবনের সুরক্ষায় কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া উচিত হবে না। তাদের ডোপ টেস্টের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মহেশপুরে দস্যুতাসহ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে
পতেঙ্গায় বিপুল ইউরিয়া সার-আলুসহ আটক ১৩
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা