পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইন বাস্তবতা ও করণীয়

পৃথিবীব্যাপী আবহাওয়ার বিরুপ আচরণে মানবজীবন কিছুটা বিপর্যস্ত। দাবানল, অত্যাধিক গরম, ঘুর্ণিঝড়, প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ধ্বস, সুনামির মতো দানব জলোচ্ছ্বাস এবং সামগ্রিক পরিবেশের বিরুদ্ধ আচরণ সবগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার শক্তি সাহস ও সামর্থ্য কারোরই নেই তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ঠিক রাখার জন্য কিছু নিয়ম কানুন আইওএম, আইইউসিএন এবং জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক দপ্তরের নির্দেশনা ও স্থানীয় আইন কানুন মেনে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসে সহযোগিতা করতে পারি। মূলত আজকের লেখার মূল প্রতিপাদ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার মেকানিজম পর্যালোচনা করা।
জীবজগত এবং পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে জীবজগতের যে পারস্পরিক সম্পর্ক সেটা নিয়ে অধ্যয়নই হচ্ছে প্রতিবেশ। পৃথিবীকে একটি বাড়ি হিসেবে কল্পনা করলে আমাদের সঙ্গে পৃথিবীর যেই সম্পর্ক সেটাই প্রতিবেশ। আর যখন আমরা এই সম্পর্কটিকে ক্ষুদ্র পরিসরে চিন্তা করব তখন সেটি হবে ইকোসিস্টেম। আর পরিবেশ বলতে বোঝায় আমাদের চারপাশে যেসব উপাদান আছে যা মানুষসহ অন্যান্য জীবের মানসিক ও শারীরিক উন্নয়ন এবং বসবাসের ও কাজ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সব শেষে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সারাবিশ্বকে যদি একটি পরিবার বা একটি গ্রাম (Global Village) হিসেবে কল্পনা করি তাহলে ওই বিশ্ব গ্রামের প্রতিটি জায়গায় ও কর্ণারে প্রতিদিনই কোন না কোনভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ ও ওই বিশ্ব গ্রামের একটি ক্ষুদ্র অংশ। যেখানে পরিবেশ দূষণ পৃথিবীর অন্যান্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় অনেকাংশে বেশি। কিভাবে দূষণ হচ্ছে, কেন হচ্ছে এসব বিষয় নিয়ে আমরা সকলেই কম বা বেশি জানি। তাই একটু তাত্ত্বিক আলোচনা করবো। ২০২০/২১ সালে কোভিড-১৯ ভাইরাস বিশ্বে ছড়িয়েছিলো যা পরিবেশ দূষণের ফল বা প্রতিক্রিয়া কিনা সে বিষয়ে কিছু কথা বলবো। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, ধূলোবালি বা জীবাণু থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারের কথা খুব বেশি করে প্রচারিত হয়েছিল। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে নিয়মিত ওজু করলে যে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা শরীর ও মনে আসে তা করোনা মোকাবেলায় কার্যকরী। বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও এই করোনা মোকাবেলায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে স্বয়ং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। যেহেতু এটা প্রমাণিত সত্য যে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে বা স্বাস্থ্যবিধি ও পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখলে সেখানে করোনাভাইরাস ঢুকতে পারে না। তাই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তথা করোনা প্রতিরোধে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার অন্য কোনো বিকল্প নাই। এক কথায় নিজের শরীরের মতো নিজের চারপাশের পরিবেশকে ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস এবারও সারা বিশ্বে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ও আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে। মানুষজনের চলাফেরা করোনার কারণে সংকুচিত হয়েছিল এবং মাস্ক পরে মানুষের পদচারণা ও দৃশ্যমান এখনো। পশু-পাখির উন্মুক্ত বিচরণে মুখরিত সারাবিশ্ব। পরিবেশবিদরা বলছেন প্রকৃতি তার নিজস্ব চেহারায় বা স্বমহিমায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে। যেমন ধরুন কক্সবাজার সি বিচে যখন মানুষের পদচারণা না থাকে তখন কুমির দলবেঁধে সি বিচে রোদ পোহাতে শুরু করে যা আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখেছি এবং এটি মানবজাতির জন্য সৃষ্টিকর্তার নতুন কোনো শিক্ষা নয় কি? তা গবেষণার দাবি রাখে।
প্রতিবছরের ন্যায় বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে আয়োজক দেশ কলম্বিয়া ও জার্মানি যৌথভাবে ও বিশ্বের আরও ১৪৩টি দেশে পরিবেশ দিবস অনাড়ম্বরভাবে পালিত হচ্ছে।
এ বৎসর দিবসের মূল প্রতিপাদ্য
প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনি সময়’- এ স্লোগানে পালিত হবে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস, ২০২৫।
এ বছর ৫ জুন সরকারি ছুটি থাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২৫ জুন বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস, ২০২৫ পালন করা হবে। অনুষ্ঠানটি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।
বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা ও পরিবেশ মেলার উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা।
“Biodiversity বা জীববৈচিত্র্য“। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ ২০১১-২০২০ সময়কে Decade on Biodiversity হিসেবে ঘোষণা করেছিলো। ২০২০ সালে জীববৈচিত্র দশক শেষ সময় আমরা অতিক্রম করছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে এজেন্ডা বা কর্মসূচি নিয়ে ওই দশক শুরু হয়েছিল তা কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে তা অনেক বড় প্রশ্ন। পরিবেশ সুরক্ষায় যে যে উপাদান বা নিয়মক কাজ করে বা যে উপাদান বা পরিবেশের মূল উপাদান মাটি, পানি, বায়ু এবং প্রাণিকুল বা বনভূমি রক্ষায় আমরা কি করেছি তা হিসেব করে দেখার সময় এসেছে। তা নাহলে বা পরিবেশ দূষণ বা প্রতিবেশ ঠিক না রাখতে পারলে মানুষের সবকিছু বা আবাসভূমিও একদিন পশুপাখির অভয়ারণ্য হয়ে যাবে। যেটি আমরা করোনা মহামারিতে লকডাউনে দেখেছি।
বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে পরিবেশ দূষণে শুধু নয় পরিবেশ আইন বাস্তবায়নে ও প্রয়োগে কোন লেভেলে আছে তা জেনে নেওয়া যাক। বাংলাদেশে বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ ভাগ৷ শুধুমাত্র বায়ু দূষণে ক্ষতি হয় ২০ হাজার কোটি টাকা৷ দূষণের সবচেয়ে বেশি শিকার হয় শিশুরা৷
বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে গত বছর প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুধু মাত্র বায়ু দূষণের কারণেই ২০১৫ সালে ২ লাখ ৩৪ হাজার মানুষ মারা যায় বাংলাদেশে, এর মধ্যে শহরাঞ্চলে মারা যায় ৮০ হাজার, আর রাজধানীতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার। (৮ জুন ২০১৯ সূত্র: ডেইলি স্টার অনলাইন)। বাংলাদেশ পরিবেশ সমীক্ষা-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ শিল্প কারখানাগুলো অপরিকল্পিতভাবে ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ফেলছে৷ ফলে পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে৷ ফলে খাল ও নদীসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানিও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। ৭১৯টি তৈরি পোশাকশিল্পের ওয়াশিং ও ডাইং কারখানার বর্জ্য দূষণের অন্যতম উৎস৷ এক টন কাপড় উৎপাদন করতে নদীতে বর্জ্য যাচ্ছে ২০০ টন৷ ইস্পাত কারখানাগুলো থেকে ১ লাখ কোটি লিটার এবং কাগজ কারখানাগুলো থেকে ৪৫ হাজার কোটি লিটার দূষিত বর্জ্য পানিতে মেশে৷
বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি সিটিজি সংবাদ ডট কম এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বললেন, বর্তমান বিশ্বে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ুর পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। ঢাকার পরই নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে বায়ু দূষণ সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ইট ভাটাগুলো বায়ু দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ পানি দূষণ পুরো জীববৈচিত্রকে প্রভাবিত করে। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, পানি দূষণ বিশ্বজুড়ে মৃত্যু এবং রোগের প্রধান কারণ। শুধুমাত্র পানি দূষণের কারণেই প্রতিদিনই বিশ্বে প্রায় ১৪০০ শ’রও বেশি লোকের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০ জন মানুষ পানি দূষণ সম্পর্কিত অসুস্থতায় প্রতিদিনই মারা যায়। (সূত্র: সিটিজি সংবাদ.কম)
পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশে বর্তমানে The Constitution of Bangladesh, 1972 এর ১৮ এ এবং ৩২ নং অনুচ্ছেদ, The Bangladesh Environment Conservation Act, 1995, The Environment Court Act, 2010, The Forest Act, 1927, Mega City, Divisional Town and District Town’s Municipal Areas Including Country’s All The Municipal Areas’ Playground, Open Space, Park And Natural Water Reservoir Conservation Act, 2000, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র আইন, ২০১৭, Ecologically Critical Area (ECA), Gazette Bangladesh vulture conservation action plan 2016-2025, ECA Rules 2016, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন,২০০০, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন,২০০২, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন,২০১০, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন,১৯৮৯, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন,১৯৯২, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন,২০০১ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ)আইন,২০১৩, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন)আইন, ২০১৯ পরিবেশ আদালত আইন, ২০০০ পরিবেশ আদালত (সংশোধন) আইন, ২০০২ পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য আইন,২০১২ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ এবং মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান,উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ বিদ্যমান আছে (https://moef.gov.bd/site/page/9835327b-6954-4e0d-9f1d)তবে এসব আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিয়ে নানামুখী তঃপরতা আমরা দেখতে পাই। পরিবেশ অধিদপ্তর এর অধীনে পরিবেশ রক্ষায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকেন তবে তা নিতান্তই অপ্রতুল। নিয়মিত পরিবেশ আদালত থাকলেও সেখানে মামলার সংখ্যা কম এবং মামলা দায়েরের সংখ্যাও কম। তাছাড়া আদালতে সময়ক্ষেপণ হয় বলে কেউ সহজে আদালতে ভিড়তে চায়না। তবে খাদ্য আদালত ও পরিবেশ আদালত বিচার বিভাগের বিচারক কর্তৃক বিচার্য হচ্ছে তাতে জনগণ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট হতে পরিবেশ রক্ষায় একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন যা এখনও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। তাছাড়া জুডিসিয়াল অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যমে জনস্বার্থে করা মামলা প্রেক্ষিতে বা বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবর আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পরিবেশ রক্ষায় বিভন্ন আদেশ নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে হাইকোর্ট। যেমন: বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদী নিয়ে ২০০৯ সালের ২৫ জুন হাইকোর্ট ঢাকার চারটি নদী রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে ঐতিহাসিক রায় দেয়। ট্যানারি শিল্প দূষণ রোধে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে সরিয়ে নিতে ট্যানারি মালিক ও সরকারপক্ষকে সময় বেঁধে দেয়। পাহার কাটা বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের তোয়াক্কা না করে চট্টগ্রামসহ দেশের পার্বত্য অঞ্চল গুলোতে অবাদে পাহাড় কাটা হচ্ছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রক্ষায় ২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ এবং একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কপোতাক্ষ নদ নিয়ে ২০১২ সালের ৫ মার্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদে সকল মাটি ভরাট, দখল ও বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সঠিক তদারকি ও বাস্তবায়নের অভাবে পরিবেশ রক্ষায় উচ্চ আদালতের দেয়া এসব রায় বাস্তবায়ন ও প্রয়োগে তেমন কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য ও সামগ্রিক ইকো সিস্টেম বা বায়োডাভারসিটি তথা জীববৈচিত্র। এই সুযোগে ভূমিদস্যু, পরিবেশ বিপন্নকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে পাহাড় কাটা, সমদ্রসৈকত, নদী ও ফুটপাথ দখল, খাদ্যে ভেজালের মতো জনস্বার্থবিরোধী অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলেও বাংলাদেশের পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। শিল্পকারখানাগুলো অপরিকল্পিতভাবে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ফলে পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে।
পরিবেশ ও নদীগুলোর জলপ্রবাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ এবং দৃশ্যমান কার্যক্রম। এমনকি পরিবেশ দূষণ ও বিপর্যয়ের ফলে বিভিন্ন সময়ে মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও পড়ছে। বিদ্যমান পরিবেশ আইন মান্য করে নিজের শরীরের মতো করে আমরা আমাদের স্ব-স্ব পরিবেশ রক্ষায় সচেতনভাবে বসবাস করি তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমে এই পৃথিবী বাসযোগ্য করে তুলতে হবে এবং মানুষও স্বাভাবিক জীবনযাপন ফিরে পাবে।
লেখক: পিএইচডি ফেলো, কলামিস্ট ও আইন বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন