শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক নিয়োগে আলাদা কমিশন গঠনের দাবি

কামরুল হাসান মামুন
  প্রকাশিত : ১১ জুন ২০২৫, ১১:১২| আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, ১২:৩৬
অ- অ+

প্রায় ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৮৩২ শিক্ষার্থী নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এক্ষেত্রে তালিকার এক নম্বরে আছে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (আইজিএনওইউ)! আমরা বরং বাংলাদেশেরটা নিয়েই কথা বলি।

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মোট ২ হাজারের মতো কলেজ রয়েছে যার মধ্যে ৫৫৫টি সরকারি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় ৮০০ এর অধিক কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পড়ানো হয়। শুধু ঢাকাতেই ৭টি বড় কলেজ ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৪০টি সরকারি কলেজ আছে যেখানে অনার্স-মাস্টার্স পড়ানো হয়। মানে নামে কলেজ হলেও আদতে এইগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ই। আবার এদের প্রায় সবগুলোতেই উচ্চ মাধ্যমিকও পড়ানো হয়। পৃথিবীতে এমন আজব জিনিস আছে বলে শুনিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হলেও এইগুলো একই সাথে কলেজও। এখানে অনার্স- মাস্টার্স পড়ানো হলেও শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের না।

এই আট শতাধিক কলেজের অনেকগুলোতে মোটামুটি মানের অবকাঠামো আছে। এই কলেজগুলোর বড় সমস্যা হলো শিক্ষকের মানে ও সংখ্যায় দুটোতেই। প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের বিষয়গুলো মাস্টার্স পাস অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে পড়ানো যায়। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের বিষয়গুলো? তারপর আবার আছে মাস্টার্স। মাস্টার্স লেভেলে পড়াতে অবশ্যই শিক্ষকের ন্যূনতম একটা পিএইচডি থাকতে হবে, সাথে গবেষণার অভিজ্ঞতা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার ৭ কলেজের সমস্যা হলো এমনও অনেক বিভাগ আছে যেখানে এইচএসসি, অনার্স-মাস্টার্স, ডিগ্রি, সব আছে কিন্তু শিক্ষক মাত্র দুই বা তিন অথবা সর্বোচ্চ ৫ জন। তাহলে বুঝুন আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কি পরিমাণ বঞ্চিত করছি! শুধু বঞ্চিত করছি না আমরা জাতীয়ভাবে এই ছাত্রদের সাথে মারাত্মক লেভেলের অন্যায় করছি।

অথচ আমরা যদি শুধু একটা কাজ করি। যেসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স থাকবে সেখান থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি বাদ দিয়ে সেখানে শিক্ষক নিয়োগের আলাদা কমিশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করে শিক্ষক নিয়োগ দেই তাহলেই শিক্ষার মান অনেক উন্নত হবে। এবং মন্ত্রণালয়ের বদলে সেই কমিশন যদি শিক্ষকদের প্রমোশন দেয় এবং ঘোষণা দেয় যে যাদের ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং-এ ১ থেকে ৫০০ তে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি থাকবে তাদেরকে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক আর যাদের ৪ বছরের পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা থাকবে তাদেরকে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। সাথে উন্নত জার্নালে ভালো গবেষণা প্রবন্ধ যথেষ্ট সংখ্যক থাকলে সরাসরি অধ্যাপক হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এইভাবে অনার্স-মাস্টার্স কলেজগুলোর মান উন্নত করলে দেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশা করি।

আর না হলে যেভাবে চলছে সেভাবেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চললে বলতেই হবে আমরা জাতীয়ভাবে ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্রতারণা করছি। আমরা কতজন জানি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের পেছনে সরকার ২ লাখ টাকার বেশি খরচ করে, বুয়েটের ছাত্রদের পেছনে ৩ লাখ টাকার বেশি আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ছাত্রের পেছনে সরকার খরচ করে গড়ে ১ হাজার টাকারও কম। কেন এই বৈষম্য? এরা কি আমাদের ছেলেমেয়ে না? এদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব নাই?

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দেশে ১৩৪ নমুনা পরীক্ষায় ১৫ জনের করোনা শনাক্ত
বিধ্বস্ত বিমানের এক যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার
করোনা প্রতিরোধে আখাউড়া স্থলবন্দরে বিশেষ সতর্কতা
ভারতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তারেক রহমানের শোক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা