ইসি চায় ৪৪৮৫ কোটি টাকা, আপত্তি মন্ত্রণালয়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০২৩, ০৮:০০

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খরচ বাবদ ৩৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে অর্থমন্ত্রণালয় এতে আপত্তি জানিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ওই বরাদ্দ প্রস্তাব ইসিতে ফেরত পাঠিয়েছে। ওই বাজেট প্রস্তাব সংশোধন করতে ইসি কাজ করছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে প্রতিটি আসনে কোটি টাকার বেশি সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। একটি আসনে (১৫০টি কেন্দ্র) ইভিএমে নির্বাচন করতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। আর ব্যালটে ভোটগ্রহণে আসনপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। আর ইসির কাছে যেসব ইভিএম মেশিন রয়েছে, তা মেরামতের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এই হিসাব ধরে আগামী অর্থ বছরের জন্য সরকারের কাছে ৪ হাজার ৪৮৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে ইসি। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সার্বিক নির্বাচনি বরাদ্দ চেয়েছে দুই হাজার ৩৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এ পরিমাণ বাজেটে আপত্তি জানিয়ে যৌক্তিক চাহিদা দিতে বলেছে, এমনটাই জানিয়েছে ইসি সূত্র।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট চাহিদার বিপরীতে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ চাইতে নির্দেশনা দেওয়ার পর ইভিএম খাতের যৌক্তিক চাহিদা তৈরি করতে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিটিএমএফ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইসি বৈঠক করেছে। আবার তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, সস্প্রতি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেরামত ও আনুষাঙ্গিক খাতে বাড়তি এক হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এর বাইরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণের হিসাব ধরে আরেক খাতে চাওয়া হয়েছে ২৫৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

সূত্র জানিয়েছে, ঢালাওভাবে বাজেট না চেয়ে প্রকৃত পক্ষে কতটি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে এবং কতটি ইভিএম মেরামতে কত টাকা লাগবে, তা সুনির্দিষ্ট জানাতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই যৌক্তিকতা না দিতে পারায় আগামী অর্থবছরে ইসির বাজেট কত হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এমন অবস্থায় কয়টি আসনে এ মেশিনে ভোটগ্রহণ করা হবে সেই সিদ্ধান্ত শিগগিরই নিতে যাচ্ছে ইসি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসি ও অর্থ মন্ত্রণালয় মধ্যকার বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসন, ৪৫০টি উপজেলা পরিষদ, দুটি সিটি করপোরেশন, ২০টি পৌরসভা ও ১০০টি ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। একই অর্থবছরে জাতীয় সংসদের ১৫টি আসনের উপনির্বাচনও ধরা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যথাসম্ভব ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এ কারণে নির্বাচনে ব্যয় বাড়তি ধরা হয়েছে।

প্রতিটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজনে গড়ে ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, উপজেলায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, পৌরসভায় ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। সবমিলিয়ে শুধু নির্বাচন আয়োজনে ২ হাজার ৩৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ইভিএম মেরামতে জন্য এক হাজার ২৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য ৩০০ কোটি টাকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সার্বিকভাবে আগামী অর্থবছরে ইসি ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য আগামী অর্থবছরে এক হাজার ৬২৭ কোটি ৬ লাখ টাকার সিলিং অর্থ মন্ত্রণালয় বেঁধে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আগামী অর্থবছরে ইসি যে বাজেট চেয়েছে তা এখনও চূড়ান্ত নয়। কত আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে, কতটি ইভিএম মেরামত করা হবে। এ ধরনের অনেক বিষয়ের ওপর এ টাকার অংক নির্ভর করছে। নির্বাচন কমিশন কত আসনে এ মেশিন ব্যবহার করবে, সেই সিদ্ধান্ত দিলে তখন কত টাকা লাগবে তা নির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।

নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় দ্বিগুণ ধরা হয়েছে। এর বড় কারণ হচ্ছে, ওই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এবার ইভিএম ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া ইভিএম মেরামতে টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া গত পাঁচ বছরে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খোরাকি ভাতা বেড়েছে ৭০ শতাংশ।

ইসি সূত্র জানায়, ইভিএম ক্রয় চুক্তিতে এ মেশিনের ওয়ারেন্টি ও আয়ুষ্কাল পাঁচ বছর। এ হিসেবে ২০১৮ সালে সংগ্রহকৃত দেড় লাখ ইভিএমের আয়ুষ্কাল এ বছরই শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনের আগেই এ মেশিনের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে প্রায় সবগুলোই মেরামত করার প্রয়োজন হবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। ওই মেরামতের জন্য এক হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চেয়েছে বিএমটিএফ। এছাড়া সংরক্ষণবাবদ গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভাড়া এসেছে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেই টাকাও পরিশোধ করেনি ইসি। বিএমটিএফ কর্তৃপক্ষ বারবারই ওই টাকা পরিশোধের জন্য বলে আসছে।

(ঢাকাটাইমস/০২মার্চ/আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বঙ্গবন্ধুকন্যা হওয়ায় শেখ হাসিনার কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি: ড. আনোয়ার

১০ হাজারের বেশি অবৈধ বাংলাদেশিকে দ্রুত ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

বাসাবোতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে যাওয়া আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু

নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞা না থাকলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেত: প্রধানমন্ত্রী

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি

আজ শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

বড় বড় খেলাপিরা সাত, আট, নয়বার করে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে পারছে: ফরাসউদ্দিন

গতানুগতিক ভবন নির্মাণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

২১ মে ১৫৭ উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :