মহাকালের মহাবীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার
  প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৭
অ- অ+

‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো, আমি বাঙালী, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’-বঙ্গবন্ধু

বিস্ময়াভিভূত মহাকালের মহাবীর, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ, জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে জেল জুলুম অত্যাচার আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যখন পরিপূর্ণ জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন ঠিক সে সময়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে যে সকল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি বর্তমান ছিল তা আগে ও পরের শতবছরের হিসাবে বঙ্গবন্ধুর মত উন্নতশীর আর কাউকেই বর্তমান পৃথিবীর প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়নি একথা বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। ইউরোপ-আমেরিকা কিউবা রাশিয়া চীন ভারত বর্ষ এমনকি আফ্রিকার সেসময়ের রাজনৈতিক নেতারা জ্ঞান-গরিমা, বুদ্ধিবৃত্তি, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, কূটনীতি এমন কি স্টাইল, ফ্যাশন, আভিজাত্য মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে এতদ্বীত পৃথিবীর বিকাশমান ধারায় দৃশ্যমান ক্ষমতায়নে সময়ের বিবেচনায় তাদের বেশির ভাগ নেতারাই বর্তমান সময় পর্যন্তও তাঁদের অনেকেই নেতৃত্বগুণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত। এ বিবেচনায় তাদের ভালো গুণ এবং সেই সাথে বিশ্বশক্তি প্রদর্শনী ক্ষমতায়নের অকারণ মন্দ দিককেও প্রাসঙ্গিক আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে সময় পর্যালোচনায় বিশ্বনেতাদের যার যার দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, নাগরিক জীবন যাপন, শিক্ষা-দীক্ষা জ্ঞান-গরিমা, সামাজিক- অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, নাগরিক সচেতনতা, মূল্যবোধ, জাতি বর্ণ, ধর্ম-কর্ম জীবনাচরণ মানব জীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সকল বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার দিকপাত সম্পন্ন মানচিত্র কিংবা ক্যানভাস আলাদা করে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে নিঃসন্দেহে সে তুলনায় বঙ্গবন্ধুর বাঙালি জাতিরাষ্ট্র জন্ম দেওয়ার চ্যালেঞ্জটি ছিল কেবলই অতি দুঃসাহসিক পূর্নাঙ্গ আত্নবিশ্বাসে ভরা আর তুলনামূলক অন্যান্য শক্তিবিবেচনায় ক্যানভাসটি ছিল সবচেয়ে দূর্বলতম। হিমালয়সম নেতৃত্বের সাহস আর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর তাঁর নেতৃত্বের প্রভাব, নির্মোহ সরল ভালোবাসা আর তাদের মুক্তির লক্ষ্যে জীবন উৎসর্গ করার আত্মপ্রত্যয় ছাড়া জাতি রাষ্ট্রগঠন কিংবা স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে কোন সমরশক্তি, অর্থ, বিত্ত কিংবা পূর্বনির্ধারিত কোন ভিনদেশী রাষ্ট্রনায়কের সমর্থন বা কমিটমেন্ট কোন কিছুই ছিল না। বস্তুত বলতে দ্বিধা নেই যুদ্ধজয়ে যা ছিল তাঁর ইস্পাতকঠিন আত্মবিশ্বাস, বাঙলার মানুষের প্রতি সরল বিশ্বাস ও আস্থা সেইসাথে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সৌভাগ্য। দিব্যজ্ঞানে সমর যুদ্ধ করে কিংবা গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয় নিয়ে বিশ্বশক্তিমত্তা সম্পন্ন পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দেবার মত কোন শক্তিমত্তা আমাদের ছিল না। সে দৃষ্টিকোণ থেকে চুলচেরা নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে কিংবদন্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা। সুখ্যাত সুচতুর বিশ্বনেতারা প্রত্যেকে সেটি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অনুধাবন করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত এবং রাশিয়া মিত্রশক্তি হলেও অপরদিকে দিকে প্রায় সারা পৃথিবীর মহাপরিক্রমশালিরা ঈর্ষান্বিত হয়ে বঙ্গবন্ধু যেন বিশ্বনেতা হিসেবে তাদেরকে ছাড়িয়ে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করতে না পারে সে লক্ষ্যে তারা একত্রিত হয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি সে নিচু মনমানসিকতার স্বাক্ষর বহন করেছিলেন আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পরেও একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রেও। এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি নতুন দেশের নাগরিকদের অন্ন যোগানের ক্ষেত্রেও তারা অনেক হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে। দেশের দায়িত্বভার পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ের মধ্যে যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তা শতবছরের প্রতিষ্ঠিত অনেক দেশের রাষ্ট্রনায়কদের শুধু বিস্মিতই করেনি সৃজনশীলতার চিত্রে তার ধারের কাছে পৌঁছার যোগ্যতা ছিল না অনেক বিশ্বনেতারই সেটি তুলনামূলক কর্মবিশ্লেষণে সহজেই অনুমেয়। এত স্বল্প সময়ে এতটা আধুনিক, গোছানো, পরিশীলিত, সুচিন্তিত ও ব্যতিক্রমী দর্শনভিত্তিক সংবিধান তৈরি ছিল বিশ্বের জন্য অনন্য উদাহরণ। শত শত বিষয় রয়েছে এরকম যা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা যাবে। সে কারণেই বিশ্বের অনেক পরাক্রমশালী দেশ আর দেশীয় কিছু হীনমন্য কুলাঙ্গারদেরকে কাজে লাগিয়ে তালিকার শীর্ষ এমন একজন বিশ্বনেতার সম্ভাবনাকে ধুলিস্যাৎ ষড়যন্ত্রে তাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে তাদের ইতর লিপ্সা বাস্তবায়নে ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মম নৃসংসতা ঘটিয়ে স্বপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্র সমাপন করলেন। ইতিহাসবেত্তারা যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষ গবেষণা করলে সেসময়ের বিশ্বনেতাদের চূড়ান্ত তালিকার শীর্ষে মহাকালের মহাবীর বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটি সুশোভিত হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের কোন অবকাশ নাই। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, আনোয়ার সাদাত, কামাল আতাতুর্ক, কর্নেল গাদ্দাফি........

তারা বিশ্বাকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এবং বাংলাকাশের ধ্রুবতারা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কে চিনতে পেরে আত্মজ বন্ধুস্বীকৃতি সম্পর্কে আলিঙ্গন করেছিলেন।

অপরদিকে বঙ্গবন্ধুকে যে সকল বিশ্বনেতারা তাদের চেয়েও অনেক বেশি ভিশনারিজ এবং কারিশমাটিক লিডার হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতিতে তাদের চেয়ে তালিকার শীর্ষে থাকবেন মর্মে উপলব্ধি করে ইনফেরিয়র কম্প্লেক্সিটি এবং বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণের ভাবনায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসেবে তাদের জন্য অনেক বেশি ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে এদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘদিনের কলোনিয়াল শাসন ব্যবস্থার অধীনে থাকা একজন বাঙালি জাতীয়তাবাদের নেতার এত বড় উত্থানকে ভবিষ্যৎ বিষফোঁড়া ভেবে আবার কেউ কেউ নির্বোধ বুদ্ধি-বিবেচনার দাঁড়া প্রভাবিত হয়ে অতি মদ্যপাবস্থাকে মজ্জাগত করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভরে বিবেচনা করত চরম শত্রুতা ভাবাপন্ন হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতা বাংলাদেশের যেন জন্ম হতেই না পারে সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের গুপ্তচরবৃত্তি অব্যাহত রেখে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের বহু পূর্ব থেকেই। অতঃপর মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি শত্রু শক্তি হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে নিরস্ত্র বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে তারা শক্তি-সাহস অর্থবিত্ত গুপ্তচরবৃত্তি যুদ্ধজাহাজ পাঠানো এমনকি 25 শে মার্চের কাল রাত্রিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া সেইসাথে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রেখে মৃত্যুভয়ে ভীতু করবার সকল চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত সফল হতে না পেরে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মের পরে বাংলাদেশকে যেমন তারা স্বীকৃতি দেয়নি তেমনি করে বঙ্গবন্ধু যেন কোনোভাবেই দীর্ঘায়ু লাভ করতে না পারে তার রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনাকালে সে লক্ষ্যে যাবতীয় প্রচেষ্টাকে আরো বেগবান করে মাত্র তিন সাড়ে তিন বছরের শাসন আমল অতিক্রম করতে না করতেই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুকে তারা নিশ্চিত করেই ছেড়েছে। শুধু তাই নয় প্রত্যেক বর্তমানের জন্য সমসাময়িক অসম্প্রদায়িক দর্শনভিত্তিক শান্তি রাজনীতি যেন ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে টিকে থাকতে না পারে সে লক্ষ্যে সকল নিয়ম- নীতি ও মানবাধিকার লংঘন করে শিশু রাসেল সহ পরিবারের সকল নর-নারী নিকটতম আত্মীয় স্বজন ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম কালো অধ্যায়ের রচনা করেছে।বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাসকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্রে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ধিক সেসকল মানব অধম রাষ্ট্রনায়কদের কে যারা সেসময় মানব সভ্যতা বিকাশের নামে নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতার বাইরে উদীয়মান বিশ্ব স্কলার রাজনৈতিক দর্শনের কবি বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ব সভ্যতা বিকাশে আলিঙ্গন না করে বরং বিপরীত ভাবনার হীনমন্যতার তাড়নাকে চরিতার্থ করে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।

লেখক: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বাউফলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে শ্রমিকের মৃত্যু
আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় তিন উপদেষ্টার তদন্ত কমিটি
ডিবি হারুন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকলো?
মিরপুরে ট্রাফিক সদস্যদের মাঝে স্যালাইন বিতরণ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা