ঢাকা-৫ আসনে ১২ প্রার্থী, নৌকার সঙ্গে লড়াই হবে ঈগল-ট্রাকের

রাজধানীর প্রবেশমুখ খ্যাত যাত্রাবাড়ি-ডেমরা থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই আসনের ভোটার সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে এবার ১২ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন। নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িতে চলছে সবার প্রচার-প্রচারণা। তবে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর তেমন প্রচার-প্রচারণা নেই।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এই আসনের অধিকাংশ ভোটারই নৌকার প্রার্থী হারুনর রশিদ মুন্না, ঈগল (স্বতন্ত্র) প্রতীকের কামরুল হাসান রিপন এবং ট্রাক (স্বতন্ত্র) প্রতীকের মশিউর রহমান মোল্লা ওরফে সজল মোল্লা। লড়াই হবে এই তিন প্রার্থীর মধ্যেই। বাকি প্রার্থীরা ভোটের মাঠে তেমন পরিচিত নন।
প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই হারুনর রশীদ মুন্না, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. কামরুল হাসান ব্যাপক নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এছাড়াও এই আসনে সংসদ সদস্য হতে চাইছেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) আবু জাফর মো. হাবিব উল্লাহ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (টেলিভিশিন) এস এম লিটন, তৃণমূল বিএনপি (সোনালি আঁশ) মো. আবু হানিফ হৃদয়, ইসলামী ঐক্যজোটের (মিনার) মো. আব্দুল কাইয়ুম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (আম) মো. আরিফুর রহমান (সুমন মাস্টার), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের (ছড়ি) মো. নূরুল আমিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) মো. মোশারফ হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) মো. সাইফুল আলম, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল) সারোয়ার খান।
সরেজমিনে ঢাকা-৫ আসন ঘুরে বিভিন্ন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস। এই আসনটিতে নানা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে চলছে প্রচার কার্যক্রম। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগের ৩ নেতা (এমপি প্রার্থী)। তারা সবাই ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
তবে ইতোমধ্যে অনেক ভোটারদের মধ্যে নানা শঙ্কাও বিরাজ করছে। বিভিন্ন প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় অপরাধীরা অংশ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটাররা বলছেন, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীরাও তাদের পছন্দের প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, ঢাকা-৫ আসনে ১২ জন প্রার্থী হলেও নৌকা, ট্রাক ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। তিন প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা। আর তাদের জনপ্রিয়তাও রয়েছে অনেক। একেকজন একেক দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সজল মোল্লা নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখছেন অনেকেই। অপরদিকে নৌকার প্রার্থী হারুনর রশিদ মুন্নার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বর্তমান সাংসদ কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। এক সময় তাদের মাঝে নানা দ্বন্দ্ব থাকলেও এখন তারা এক হয়েই নৌকাকে জয়ী করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। এছাড়াও তার পক্ষে কাজ করছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশ। আরেক প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রিপনও তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। ফলে তারও সম্ভাবনা থাকছে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার।
যাত্রাবাড়ীর ভোটার মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বাবলা ঢাকা টাইমসকে বলেন, এই আসনে দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক কোন্দল আছে। তবে সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার জনপ্রিয়তা ছিল সবার কাছে। অনেক আগে থেকে এই আসনে তার ছেলে সজল মোল্লা কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা ব্যবসায়ীরা এবার তাকেই ভোট দেব।
মশিউর রহমান মোল্লা ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা-৫ আসনের রাজনীতিতে জড়িত। সবসময়ে আমি ও আমার পরিবার সর্বস্তরের মানুষের পাশে থেকেছি। আমার এই আসনের স্থানীয় ছেলে। আমাকে সবাই পছন্দ করেন। আমি বিশ্বাস করি এই আসনের মানুষ ভোটের মধ্যমে আমাকে নির্বাচিত করে জানান দেবেন আমি এই আসনের যোগ্য কিনা। আমার বাবা এ আসনে চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। ফলে এ আসনে মোল্লা পরিবার আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবার।
এদিকে এই আসনটির তরুণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কামরুল হাসান রিপন। স্থানীয় পর্যায়ের উঠতি বয়সী তরুণরা ছুটছেন রিপনের দিকেই। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে তিনি শুধু এই আসনেই তার রাজনীতি সীমাবদ্ধ রেখেছেন বলে জানা গেছে। এই আসনটির বাইরে তাকে তেমন রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে দেখা যায়নি।
দোলাইরপার এলাকার বাসিন্দা শাকিল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এই আসনে নির্বাচন নিজেদের মধ্যেই হচ্ছে বলা চলে। সবাই আওয়ামী লীগের লোক। যেই নির্বাচিত হোক আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করবে। তার মধ্যে আমাদের নবীনদের কাছে পছন্দের ব্যক্তি কামরুল হাসান রিপন ভাই। তিনি সহজেই মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছেন। নিজেই সরাসরি আমাদের খোঁজখবর নেন। তাই তার মতো লোককেই আমরা ভোট দিয়ে এমপি বানাতে চাই।
কামরুল হাসান রিপন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-৫ আসনে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলন করে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি আগে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। এখন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। শুরু থেকেই যুব সমাজ আমার সঙ্গে কাজ করে। এই আসনের জনগণ আমার সঙ্গে আছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুনর রশিদ মুন্না নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশা কর্মী-সমর্থকদের।
মুন্না যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সঙ্গে দির্ঘদিন যাবত রাজনীতি করে আসছেন। এর আগেও তিনি এমপি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তবে দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। এবার দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে মুন্না নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাই তাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন ভোটাররা। স্থানীয় সংসদ সদস্যের পাশাপাশি নেতাকর্মীরা তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন। ফলে তারও জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
৫০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার রিফাত হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এইবার আমি প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছি। এলাকায় নৌকা, ট্রাক আর ঈগল প্রতীকের পোস্টারে ভরে গেছে। সব প্রার্থীর লোকজনই আমার কাছে ভোট চেয়েছেন। ভেবেছি এবার আমার প্রথম ভোট নৌকা মার্কাতেই দেব।
এদিকে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় দুর্ভোগ বেড়েছে বলেও অভিযোগ করছেন অনেকেই। যাত্রাবাড়ী থানার ৪৯নং ওয়ার্ডের ধলপুর মাদ্রাসা গলিতে ছয়টি অস্থায়ী নির্বাচনি ক্যাম্প (কার্যালয়) করেছেন নৌকার প্রার্থী হারুনর রশীদের সমর্থকরা। অথচ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়ক ও ফুটপাতের জায়গা দখল করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা (ট্রাক প্রতীক) ও কামরুল হাসান (ঈগল প্রতীক) নির্বাচনি ক্যাম্প বানিয়েছেন। এসব ক্যাম্পে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাংলা ও হিন্দি গানের অতিরিক্ত শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন স্থানীয়রা। নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপে এর সমাধান চান তারা।
(ঢাকাটাইমস/২৮ডিসেম্বর/ইএস/এআর)

মন্তব্য করুন