হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ অতঃপর মন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল…

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ জুন ২০২৫, ১১:১৭| আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১১:৪১
অ- অ+

জাতীয় রাজনীতিতে অপরিচিত, সংসদীয় রাজনীতিতে গুরুত্বহীন এবং নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে প্রায় নিষ্ক্রিয়, এমন একজন সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলালকে কেন ধর্মমন্ত্রী করেছিলেন শেখ হাসিনা? এই কৌতূহল অনেকেরই ছিল। এক সময়ের উপজেলা চেয়ারম্যান দুলাল অনেকটা নাটকীয় কায়দায় প্রথমে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী পরে মন্ত্রী হন। যা জানলে আপনি অবাক হবেন!

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ যে সরকার গঠন করে সেই সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে গোপালগঞ্জের শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করেন। শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তার আগে থেকেই। কিন্তু করোনার এক পর্যায়ে শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান, এরপর বেশ কয়েক মাস ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পায়নি। শেখ হাসিনা তখন আরও অনেক মন্ত্রণালয়ের মতো ধর্ম মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রাখেন। কাকে দায়িত্ব দেওয়া যায় তা নিয়ে অনেক কানাঘুষা, অনেক লবিং চলতে থাকে ।

আওয়ামী লীগ তার কেন্দ্রীয় ধর্ম সম্পাদকের দায়িত্ব দেয় কক্সবাজারের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে। কিন্তু কে হবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী? সেই অনিশ্চয়তা তখনো কাটেনি। এই অনিশ্চয়তায় একটা পর্যায়ে চমক হিসেবে শেখ হাসিনা জামালপুরের ইসলামপুরের সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলালকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দেন। রাষ্ট্রপতি তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। কিন্তু শেখ হাসিনার এই যে পছন্দ, কিভাবে তাকে বাছাই করা হয় ঢাকাটাইমস সেই চমকপ্রদ কাহিনী জানতে পেরেছে।

সত্যি এটা বিস্মিত হওয়ার মতো। করোনার কারণে তখন শেখ হাসিনার সাথে মন্ত্রী-নেতা আর সচিবদের দেখা-সাক্ষাৎ প্রায় বন্ধ। একদিন আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ পাঠান। সেই মেসেজে লেখা ছিল, সম্মানিত নেত্রী আসসালামুআলাইকুম। আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পদটি খালি হয়েছে, আপনি জামালপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলালকে যদি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন, তাহলে তিনি এই পদে আপনার আস্থার মর্যাদা দিতে পারবেন এবং দক্ষতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালনও করতে পারবেন।

এই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা দেওয়ার কয়েক মাস পরে ফরিদুল হক খান দুলালকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

ঢাকাটাইমস আওয়ামী লীগের ওই কেন্দ্রীয় নেতার কাছে জানতে চেয়েছিল তিনি কেন ফরিদুল হক খান দুলালের পক্ষে এই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা দিলেন? তার যুক্তি ছিল, ওই সময়ে জামালপুরের আরও একজন প্রতিমন্ত্রী ছিল মন্ত্রিসভায়, ডা. মুরাদ হাসান। যিনি ছিলেন বেপরোয়া, উচ্ছৃঙ্খল । তার কথাবার্তার মধ্যে অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাব ছিল। মুরাদের বেপরোয়া কথাবার্তায় প্রশাসন থেকে শুরু করে দলের নেতাকর্মীরা তটস্থ থাকতো, তারা বিরক্ত ছিল। কিন্তু সরকারের প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় তার ক্ষমতার কারণে অনেকেই অসহায়ও ছিল। এজন্য একটা বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র জরুরি হয়ে পড়েছিল ।

সূত্রগুলো ঢাকাটাইমসকে জানায়, জামালপুরে যেহেতু এর আগে মির্জা আজমকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে, হুইপ করা হয়েছে, এজন্য পুনরায় তাকে আর মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে না বলে ধরেই নেওয়া হচ্ছিল। জামালপুরের ক্ষমতার রাজনীতিতে একটা ভারসাম্য দরকার, যদি ফরিদুল হক খান দুলাল মন্ত্রিসভায় আসেন, তাহলে আরো একজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জামালপুর পেল। তখন যে জেলা প্রশাসন বা জামালপুরের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তারা কিন্তু আরও একটি ক্ষমতার কেন্দ্র পাবে। এই বিবেচনায় ফরিদুল হক খান দুলালকে বেছে নেওয়া হয়। যেহেতু তিনি জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে নাক গলানোর মতো সামর্থ্য রাখেন না, অথবা জেলায় অন্য যে সমস্ত সংসদ সদস্য আছেন, তাদের চাইতে কম প্রভাবশালী, কম গুরুত্বপূর্ণ, সেক্ষেত্রে তিনি তাদের কাছেও নিরাপদ। এসব বিবেচনায় আসলে শেখ হাসিনার কাছে ওই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠানো হয় এবং বিস্ময়করভাবে ওই বার্তাটি কাজে আসে।

আওয়ামী লীগের ওই কেন্দ্রীয় নেতার যুক্তি ছিল তারা শেখ হাসিনার টেস্ট বোঝেন। যদি দক্ষ এবং যোগ্য হয় তাকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে না। এটা তারাও জানতেন ।

ফরিদুল হক খান দুলালকে অদক্ষ এবং কম যোগ্য বিবেচনা করা হয়েছিল এবং শেখ হাসিনা এই অদক্ষ ও কম যোগ্যতাকে বেছে নিবেন তার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে এই বিশ্বাস তাদের আছে এবং এটাই ঘটবে।

যখন এই সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা নেন যে ফরিদুল হক খান দুলালকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে এরপর ওই নেতা তার যারা কাছের লোক তাদেরকে বলেছিলেন, 'আমি জানি এমনটাই ঘটবে।' ফরিদুল হক খান দুলাল যাতে আরও বেশি আমাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, সেটাও আমাদের মাথায় ছিল। এজন্য তার বিষয়টা শেখ হাসিনাকে সুপারিশ করা হয়। ফরিদুল হক খান দুলালকে পরবর্তীতে মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, যে নির্বাচনকে ডামি নির্বাচন আখ্যা দেওয়া হয়, অত্যন্ত এই বিতর্কিত নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা আবারও ফরিদুল হক খান দুলালকে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় নেন । কিন্তু এই ফরিদুল হক খান দুলালও কার্যত জোর করে ভোট ডাকাতি করে শেষবার এমপি হয়েছেন যা প্রায় সকলেরই জানা।

(ঢাকাটাইমস/৩০ জুন/এসএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কোটায় অস্ত্রের লাইসেন্স আসিফ মাহমুদের?
মালয়েশিয়ায় আটক ৩৬ বাংলাদেশি আইএসের সঙ্গে যুক্ত: পুলিশ
এনআরবি ব্যাংকের আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস উদযাপন
এনসিপি দল গঠনের পর আ.লীগকে আবারও রাজনীতির মঞ্চে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে: কায়কোবাদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা