নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে ৪ জন ধরা পড়লেও মামলা ৩ জনের নামে!

বগুড়া প্রতি‌নি‌ধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৩৩ | প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:৫৬

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইস নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে বগুড়ায় এক কেন্দ্রে চারজন আটক হলেও মামলা হয়েছে শুধু তিনজনের বিরুদ্ধে। বগুড়ার সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আটক চারজনের একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মোট ১৯ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে চারজন ছিলেন। পরে রাতে তাদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা করা হয়। কিন্তু মামলা থেকে বাদ পড়েন উম্মে হামিদা (৩০) নামে এক পরীক্ষার্থী।

কিন্তু শনিবার বিকাল পর্যন্ত ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি প্রশাসন। বরং তারা আটকের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

মামলায় বাদ দেওয়া উম্মে হামিদা শেরপুরের টাউন কলোনী এলাকার নিজাম উদ্দিনের মেয়ে। তবে তার মা শিল্পী বেগম বর্তমানে বগুড়া- (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর স্ত্রী। সেই সুবাদে উম্মে হামিদা তার বোন মায়ের সঙ্গে বর্তমানে মজনুর সংসারে বসবাস করছেন।

বিষয়ে নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনিও তা স্বীকার করে জানান, তার দুই মেয়ে। উম্মে হামিদা বড়। দুই মেয়েকে নিয়ে সাবেক স্ত্রী শিল্পী বর্তমানে মজিবর রহমান মজনুর সঙ্গে বসবাস করছেন।

এদিকে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে আটক হওয়া মেয়েকে প্রভাব খাটিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) স্ত্রীর ছাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ঘটনায় জড়িত সবার বিচার দাবি করেছে সংস্থাটি। আজ রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় ৩৭টি কেন্দ্রে মোট ৩২ হাজার ১৭৯ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগপ্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে পরীক্ষায় উপস্থিত হন ২৩ হাজার ৫৬৫ জন। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের জন্য ২৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জন মোবাইল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার অপরাধে আটক করা হয়।

এপিবিএন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে জন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে জন, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জন, বগুড়া সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জন, পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জন, বগুড়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে জন, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ থেকে জন, বগুড়া সরকারি কলেজ থেকে জন এবং বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে জন আটক হন।

পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে আটক ওই চার জন হলেন বগুড়া সদরের ইতি রানী (২৭), শিবগঞ্জের সুমি খাতুন (২৭) তমা রানী (৩০) এবং শেরপুরের উম্মে হামিদা (৩০)।

এদের মধ্যে ইতি রানী ৩০৪, সুমি ১০৪, উম্মে হামিদা ১১০৭ তমা রানী ১১০৫ নম্বর কক্ষ থেকে আটক হন।

বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে আটক চার পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে রাখা হয়। পরে রাত ১০টার দিকে উম্মে হামিদাকে ডিবি পুলিশ আবার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাতে এক সময় উম্মে হামিদা তার বাড়িতে চলে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরীক্ষা চলাকালে উম্মে হামিদার মা শিল্পী বেগমও ছিলেন কেন্দ্রে। তাকে যখন আটক করা হয় তার মা শিল্পী বেগমও বের হয়ে ডিবির কার্যালয়ের দিকে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ওই পরীক্ষার্থী ডিবি হেফাজতে ছিলেন। ওপরের নির্দেশে তাকে আবারও পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটে রেখে আসা হয়। এর বেশি কিছু আমরা জানি না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষার হলের পরিদর্শকেরা তাকে আটক করেছে। উনি সংসদ সদস্যর স্ত্রীর আগের পক্ষের মেয়ে। বিষয় জেলা প্রশাসন সবকিছু দেখছে।

বগুড়া- আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর স্ত্রী শিল্পী বেগম বলেন, ঘটনা এরকম কিছু না। আমার মেয়ে হয়তো ঘাড় ঘুরিয়েছিল। ওরা না বুঝে তাকে নিয়ে যায়। পরে স্যরি, টরি বলে মাফ চেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। ভাই এসব নিয়ে আর কিছু লেখেন না। ওখানে যা হওয়ার হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট যা করছে সেটা নিয়েও বলতে চাই না। আপনারা সাংবাদিকরা কাউকে উপরে তুলতে পারেন। আবার নিচেও নামাতে পারেন।

বিষয়ে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, হামিদাকে আটকের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। শুক্রবার দলীয় কাজে ধুনটে ছিলাম। এই বিষয়ে তাকে (স্ত্রী শিল্পী বেগম) জিজ্ঞেস করেন। এইরকম হয়ে থাকলেও আমার জানা নেই।

বগুড়া সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে আটকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা শিবগঞ্জ সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিতোষ চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, কেন্দ্র পরিদর্শনের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাজহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার। তিনি আটক করেছিলেন। আমি তখন বিষয়টি জানতাম না। কারণ পরীক্ষার খাতা অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। পরীক্ষা শেষে খাতা জমা দিয়ে শেরপুরের আরেক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকের সঙ্গে নিয়ে রাতে থানায় হাজির হই। সেখানে আমি তিনজনকে পেয়েছি। এর বেশি কিছু আমরা জানি না। এখানে আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে মামলার বাদী হয়ে থাকি।

তবে আটকের বিষয়টি এড়িয়ে যান শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিদা আক্তার বলেন, আমি আটক করিনি। কক্ষ পরিদর্শকরা কয়েকজনকে আটক করেছেন। সঠিক কয়জনকে তা বলতে পারছি না। এটা নিয়মিত মামলার বিষয় হওয়ায় কক্ষ পরিদর্শকরা ব্যবস্থা নিয়েছেন। মোবাইল কোর্ট হলে আমি ব্যবস্থা নিতে পারতাম।

পরীক্ষার্থীরা কী অপরাধে আটক হয়েছেন এমন প্রশ্নে ইউএনও তাহমিদা আক্তার বলেন, যাদের কাছে ডিভাইস পাওয়া গিয়েছিল তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে চেক করে যাদের ডিভাইস লিঙ্কড পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিষয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মেয়ে আটক আছে এই বিষয়ে জানা নেই। সর্বমোট ২৬ জনকে আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে যাদের কাছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভুলবশত যারা মুঠোফোন এনেছিল তাদের শুধু বহিষ্কার করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৪ফেব্রুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :