ওপারে যুদ্ধ, এপারে রকেট লঞ্চার আতঙ্ক, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্তের নাফ নদীর ওপারে আবারও গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ শোনা গেছে। তবে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে নতুন করে কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও এপারে মানুষের মাঝে বিরাজ করছে রকেট লঞ্চার আতঙ্ক। এর মাঝেই তুমব্রু সীমান্ত সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। যা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারী শুরু হবে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে নতুন করে কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় এপারে গুলি এসে পড়েছিল। তবে ঘুমধুম সীমান্তে একের পর এক অবিস্ফোরিত রকেট লঞ্চার এসে পড়ায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান তিন। শনিবার সকালে নতুন করে দুটি অবিস্ফোরিত রকেট লঞ্চার পাওয়া গেছে বলে জানান তিন। যা লাল পতাকা দিয়ে ঘিরে রেখেছে বিজিবি। এর আগে আরও দুটি রকেট লঞ্চার পাওয়া গিয়েছিল। যা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান বলেন, বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের খেত খামার, কৃষি জমিতে মিলছে মিয়ানমার থেকে আসা এসব রকেট লঞ্চার। আর না বুঝে অবিস্ফোরিত এসব গোলা নিয়ে খেলা করছে সীমান্তের শিশুরা। ফলে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।
শনিবার সকালে কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে রকেট লাঞ্চার পাওয়া রাজিয়া বলেন, ‘কৃষি জমিতে কাজ করছিলাম। তখন দেখি শিশুরা লম্বা লোহার রডের মতো একটি জিনিস নিয়ে খেলছে। আমি তাদের কাছ থেকে এটি নিয়ে বাসায় চলে যাই। পরে আমার স্বামী বলে এটি অস্ত্র। তখন বিজিবিকে এটি হস্তান্তর করি।’
ওই সীমান্তের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, গোলাগুলো কত মারাত্মক তা কেউ জানে না। মূলত এটা যে বিস্ফোরক তাও জানে না সীমান্তের অনেক বাসিন্দা ও শিশুরা। এর আগে শুক্রবার তুমব্রু সীমান্তের ৩৪ পিলার পাশে একটি জমি থেকে অবিস্ফোরিত একটি মর্টার শেল উদ্ধার করেছে বিজিবি।
এদিকে, সীমান্তে উত্তেজনাকর এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রটি ঘুমধুম সীমান্তের পাশে হওয়ায় মিয়ানমারের বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হলে কেঁপে উঠে স্কুল আঙিনাসহ পুরো এলাকা। ফলে পরীক্ষা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
ওই কেন্দ্রের সচিব ও ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাইরুল বশর বলেন, কেন্দ্রটিতে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিবে। এরমধ্যে, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬৪ জন, কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৩৩ জন এবং বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০৫ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন।
এদিকে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, শনিবার সকালে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কানজরপাড়া সীমান্তের নাফনদীর ওপারে গুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কুমিরখালী এলাকায় সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি। সংঘর্ষের সময় সীমান্তের এপারে লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং এলাকায় কয়েকটি গুলি এসে পড়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। শনিবার ভোরে আবারও গুলির শব্দ শোনা গেছে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি শব্দ শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, শনিবার ভোরে হোয়াইক্যং উত্তর পাড়া হোছেন আলীর মুদির দোকানে, হাইওয়ে রোডের পাশে হোয়াইক্যং মাঝের পাড়া আবছারের বাড়িতে ও উত্তর পাড়া ধলুমিয়ার বাড়িতে গুলি এসে পড়েছে। মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা ও গুলিতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ৯ জন।
তবে উখিয়ার পালংখালীর পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
বিজিবি জানায়, মিয়ানমারের বিলাই চাড় দ্বীপে ঘণ্টাখানেক গোলাগুলি ও ফায়ারিংয়ের শব্দ হয়। সেখানে বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে নবী হোছেন গ্রুপের গোলাগুলি হয়েছে। নবী হোছেন গ্রুপ বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষে আশ্রয় নেওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বিজিবির হোয়াইক্যং বিওপির কোম্পানি কমান্ডার জানান, গোলাগুলির শব্দ ও কয়েকটি বুলেট এপারে এসে পড়েছে বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এছাড়া শনিবার দুপুরে মায়ানমারে সংঘাতে জের ধরে টেকনাফের নাফনদীর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে দুই রোহিঙ্গা নারীকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। এ নিয়ে দুই দিনে চার রোহিঙ্গা নাগরিককে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারে চলা সংঘাত এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
(ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন